আগামী বছর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ৯৪.৩ শতাংশ উত্তরদাতা ভোট দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, যা দেশের পক্ষে এক উল্লেখযোগ্য উৎসাহের লক্ষণ। তবে, এদিকে নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি দিক—অ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি (পিআর) সম্পর্কে ব্যাপক সংখ্যক মানুষ কোনো ধারণা রাখেন না, এর সংখ্যা ৫৬ শতাংশ। এই তথ্য উঠে এসেছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনোভিশন কনসালটিংয়ের ‘জনগণের নির্বাচন ভাবনা’ শীর্ষক জরিপের দ্বিতীয় দফার প্রথম অংশের ফলাফলে।
গত রোববার রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে এক গোলটেবিল আলোচনায় এই জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন ইনোভিশন কনসালটিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবাইয়াৎ সারওয়ার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
জরিপের জন্য সেপ্টেম্বর মাসের ২ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত মোট ১০ হাজার ৪১৩ জন বয়স্ক মানুষের মতামত নেওয়া হয়। দেশের ৬৪টি জেলาจুড়ে সরাসরি মতামত সংগ্রহ করা হয়। জরিপের বিষয়বস্তু ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম, নিরপেক্ষ নির্বাচনের ধারণা, নির্বাচনী পরিবেশ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ভোটের সময় এবং ভোটার উপস্থিতি।
ফলাফল বলছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৮.৭ শতাংশ সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে। এর মধ্যে ৩৯.৫ শতাংশ বলেছেন তারা এই ব্যবস্থা ‘ভালো’ মনে করেন, আর ৩৯.২ শতাংশ মনে করেন এটি ‘মোটামুটি ভালো’।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ৮৬.৫ শতাংশ মানুষ ভোট দেওয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। এছাড়া, ৬৯.৯ শতাংশ বিশ্বাস করেন যে নিরপেক্ষ একটি অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন পরিচালনা করতে সক্ষম। আরও ৭৭.৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলছেন, তারা নিরাপদ এবং নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবেন।
অভূতপূর্ব আগ্রহের পাশাপাশিই, জরিপে দেখা গেছে, ৯৪.৩ শতাংশ মানুষেরই নির্বাচনে ভোট দিতে আগ্রহ আছে। তবে, দুঃখের বিষয় হলো, পিআর পদ্ধতি সম্পর্কে ৫৬ শতাংশ মানুষের কোনো ধারণা নেই, যা বিভিন্ন তরুণ ও প্রবীণ প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা ও মনোভাবের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য নির্দেশ করে। প্রবীণ প্রজন্মের তুলনায় নবীন প্রজন্মের মধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা ও ইতিবাচক মনোভাব বেশি।
জরিপে আরও দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা সাধারণ জনগণের চেয়ে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কম আগ্রহী, আর নির্বাচনের সময় নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বিমত দেখা যায় বেশি। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোও আন্তর্জতিক নিরপেক্ষ নির্বাচনের সক্ষমতা নিয়ে কম আশাবাদী।
প্রসঙ্গত, এই ফলাফল প্রকাশের পর শফিকুল আলম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪তম মাসে এসে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের সমর্থন থাকা মানেই হলো তারা সরকারের কার্যক্রম নিয়ে সন্তুষ্ট। দেশের সবাই ভোটের জন্য প্রস্তুত, আসন্ন নির্বাচন দেশের স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেক বছর পর একটি ভালো ও সুন্দর নির্বাচন হতে যাচ্ছে—এমন আশায় উদ্বুদ্ধ দেশের নাগরিকরা। সরকারপ্রধান বারবার জানিয়েছেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই অনুষ্ঠিত হবে। ৯৫ শতাংশ মানুষ এই আশাবাদে বিশ্বাসী থাকলে, কারো পক্ষেই এই নির্বাচনের প্রতি প্রশ্ন তোলা সম্ভব নয়।’
আলোচনায় অংশ নেন বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বিশেষ সহকারী সাইমুম পারভেজ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশনা ইমাম, ভয়েস ফর রিফর্মের ফাহিম মাশরুর, বিআরএআইএনের শফিকুর রহমান ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা সৈয়দ হাসিব উদ্দিন হোসেন প্রমুখ।