নড়াইলের মানুষ অনেক দিন ধরেই ক্লিন নড়াইল, ড্রিম নড়াইল নামে পরিচিত একটি শহরের ময়লা-অবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার প্রকল্পের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছে। এই প্রকল্পের কারণে শহর ও আশপাশ এলাকার দুর্গন্ধের সমস্যায় বৃদ্ধি পেয়েছে, যা জনজীবনে বড় এক দুর্ভোগ তৈরি করছে। এলাকার লোকজন এখন বাধ্য হয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে এই প্রকল্পের স্থান পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন, কারণ তারা ময়লা-অবর্জনা থেকে নিরবচ্ছিন্ন মুক্তি ও নির্ঝর বাতাসে বসবাসের আশায় আছেন।
নড়াইল পৌরসভার সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই পৌরসভা। ৮০ দশকে পৌরসভার দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। দেরিতে হলেও শহরকে পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে ‘ক্লিন নড়াইল, ড্রিম নড়াইল’ নামে বিশেষ এক প্রকল্প চালু করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল শহরের প্রতিটি বাড়ি থেকে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে জমা দেয়া। এই কাজে বেসরকারি সংস্থা বি আই আর ডি (বোর্ড ফর ইন্টিগ্রেটেড রুলার ডেভেলপমেন্ট) দায়িত্ব নিতে বাধ্য হয়, যাদের তদারকি করবেন জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা।
প্রথমে এই প্রকল্পের কাজ ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়। শুরুতেই শহরের নড়াইল-যশোর সড়কের নতুন বাস টার্মিনালের সামনে একটি গর্তে ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ও শ্রমিকরা এই স্থানটিতে ময়লা ফেলায় অনেকেরই বিরক্তি ও অসুবিধা বাড়ে। এরপর শহরের রাস্তা প্রশস্তকরণ কাজে সেনাবাহিনীর তদারকিতে এই গর্ত থেকে ময়লা অন্যত্র সরানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যেখানে সীতারামপুরে নতুন ভাগাড় হিসেবে নির্বাচিত হয়। কিন্তু এই স্থানটির দুর্গন্ধ কেবল শহর নয়, আশেপাশের গ্রামগুলোতেও প্রবেশ করে, ফলে সাধারণ মানুষ অস্বস্তিতে পড়েছে।
নড়াইল-যশোর সড়কের সীতারামপুর এলাকায় পৌরভাগাড় গড়ে উঠেছে, যেখানে শহরের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। গ্রামবাসীর অভিযোগ, এই ভাগাড়ের দুর্গন্ধ কারণে কৃষি জমিতে কাজ করতে এবং মাছের খামার ও খাল-বিলের মাছ ধরাও এক অসুবিধে হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা দ্রুত এই ভাগাড় সরানোর ও অন্য স্থান খোঁজার দাবি জানাচ্ছেন, যেন স্বস্তিতে বসবাস ও কর্মক্ষমতা ফিরে পায়।
সীতারামপুর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিত্ব মনোরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘এমনটা কখনো স্বাভাবিক না যে, এত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অনুমতি নিয়ে ময়লা ফেলার ভাগাড় তৈরি হয়। যা নতুন করে ভাবিয়ে তোলে।’ তিনি দ্রুত এই ভাগাড় সরিয়ে নিয়ে এলাকার পরিবেশ ও সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নত করার আর্জি জানান।
অজিত কবিরাজ, ইউপি সদস্য, বলেন, ‘এখানে ময়লার ভাগাড় করতে ইউনিয়ন পরিষদের কোনো অনুমতিও নেয়া হয়নি। স্থানীয় মানুষ এই দুর্গন্ধে চরম দুর্ভোগে পড়েছে। কৃষক ও মৎস্যচাষীরা কাজ করতে পারছেন না, এমন অসুবিধার জন্য তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন।’
নড়াইল পৌর প্রশাসক জুলিয়া সুকায়না বলেন, ‘এমন কোনও আবেদন এখন পর্যন্ত পাইনি। যদি কোন আবেদন আসে, তখন বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এছাড়া, যথাযথ অর্থ বরাদ্দ থাকলে ভবিষ্যতে অন্যত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য পরিকল্পনা নেয়া সম্ভব।’