গত বছর একই সময়ের তুলনায় এখন চাল, ডাল, আটা, তেল, মাছ এবং মাংসের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ফলস্বরূপ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা অনেকটা অর্থনৈতিক বোঝার মধ্যে পড়েছে। বাংলাদেশ সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় বাজারে বিভিন্ন ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ে পেঁয়াজ, রসুন ও ডিমের দাম কিছুটা কমলেও, সব ধরনের শাক-সবজির দাম আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছে।
বিশ্লেষণে জানা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায়, যা গত বছর একই সময়ে ৬৪ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হত। এর ফলে চিকন চালের দাম প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ১১ টাকা বেড়েছে। মাঝারি মানের চালের দাম বেড়ে এখন ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে গত বছরের পরিমাণ ছিল ৫০ থেকে ৬৫ টাকা। মোটা চালের দামও বেড়ে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় পৌঁছেছে।
ডালের দামের ক্ষেত্রে, মোটা দালের দাম কমলেও মাঝারি এবং ছোট দানার ডালগুলোর দাম বেড়েছে। বড় দানার মসুর ডাল এখন ৯৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে গত বছর এই সময়ে ছিল ১০৫ থেকে ১১১ টাকা। মাঝারি দানার মসুর ডাল কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় সামান্যই পরিবর্তিত। ছোট দানার মসুর ডালের দাম বেড়ে এখন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে গত বছর এটি ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। অ্যাংকর ডালের দাম অন্তত ১০ থেকে ২০ টাকা কমে বর্তমানে ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।
আটা ও ময়দার দামও চড়া হয়েছে। খোলা আটা কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা বাড়ে এখন ৪৫ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা ময়দার দাম বেড়ে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায় পৌঁছেছে, আর প্যাকেট আটা ও ময়দার দাম যথাক্রমে ৫৫ থেকে ৭৫ টাকা।
ভোজ্যতেলে দাম আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। খোলা সয়াবিন তেল কিনতে এখন বাজারে প্রতি লিটার ১৭০ থেকে ১৭৮ টাকা লাগছে, যা গত বছর একই সময়ে ১৫১ থেকে ১৫৫ টাকা ছিল। বোতলজাত ১ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৮ থেকে ১৯০ টাকায়। বিশেষ করে, ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন ৮৯০ থেকে ৯২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে আগের তুলনায় দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাম অয়েল ও রাইস ব্রান তেলের দামও বৃদ্ধি পেয়ে গেছে, ফলে সাধারণ মানুষের জন্য এই জিনিসের কেনাকাটা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।
বাজারে মসলাজাত পণ্যের দাম কমলেও, সবজির দাম দ্রুত বাড়ছে। বিশেষ করে, পেঁয়াজের দাম গত বছরে যেখানে ১০৫ থেকে ১১১ টাকার মধ্যে বিক্রি হত, এখন ৬৫ থেকে ৮০ টাকায়। রসুনের দামও কমে এসেছে; গত বছর কেজি প্রতি ২০০ থেকে ২২০ টাকা থাকলেও, বর্তমানে ১০০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছের দামের ব্যাপক বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। ইলিশের দাম সাধারণের নাগালের বাইরে চলে গেছে। ছোট ইলিশের কেজি এখন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, যেখানে গত বছর একই ধরনের মাছের দাম ছিল ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। বড় ও ওজনের ইলিশের দাম এখন ১৮০০ থেকে ২৫০০ টাকার আশেপাশে, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া, রুই ও কাতলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়। দাম বাড়ার কারণে, অন্যান্য মাছের দামও চোখে পড়ার মতো বৃদ্ধি পেয়েছে।
গড়ে সব মাছের দাম বেড়েছে, এবং বাজারে ভিন্ন ধরনের মাছের জন্যও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। কোরবানি ও বিভিন্ন উৎসবের সময়ে এই দাম আরও বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
অন্যদিকে, ডিমের দাম কিছুটা কমে এসেছে। প্রতি হালি ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়, যা গত বছর এই শর্তে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ছিল।
সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে সব ধরনের শাক-সবজির দাম। শিমের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১৫০ থেকে ২৪০ টাকায় উঠেছে। কাঁচামরিচের দামও আকাশচুম্বী, অক্টোবরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৩২০ টাকায় পৌঁছেছে। এই সব পণ্যগুলোর মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর তীব্র চাপ তৈরি করেছে, এবং বাজারে এই অস্থিরতা আরও দীর্ঘদিন থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।