পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, দেশের সকলের জন্য দুর্যোগ-সহনশীল, পরিবেশবান্ধব ও বিকেন্দ্রিকৃত আবাসন ব্যবস্থা তৈরি করা আবশ্যক। তিনি বলেন, বসতি কেবল বিলাসিতা নয়, এটি একটি মৌলিক মানবাধিকার। শুধুমাত্র শহরাঞ্চলে নয়, গ্রামাঞ্চলেও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে আধুনিক ও পর্যাপ্ত আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সেখানে মাথা গোঁজার ঠাঁই ছাড়াও বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও পরিবহন সুবিধা পর্যাপ্ত ও মানসম্পন্ন হতে হবে, যাতে সকলের জন্য নিরাপদ ও স্বচ্ছল জীবনযাত্রা সম্ভব হয়।
আজ রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘পরিকল্পিত উন্নয়নের ধারা, নগর সমস্যায় সাড়া’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভূখণ্ডের পানির নিচে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় এখনই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে বহু মানুষ পুনর্বাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। তিনি সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্ব (PPP) ও কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (CSR) এর মাধ্যমে নিম্নআয়ের ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য সাশ্রয়ী ও টেকসই আবাসন নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হন। তিনি বিশেষ করে জলবায়ু সহনশীল আবাসন নির্মাণে মডেল প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডে প্রকল্প প্রস্তাব দাখিলের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানান।
তাঁর আরও বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির মধ্যে একপাক্ষিক নগরায়ন ও আবাসন ব্যবস্থা বৈষম্য বাড়াচ্ছে। ধনী সম্প্রদায় একাধিক ফ্ল্যাট মালিক হলেও মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকেরা একটি ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ পাচ্ছেন না। বসতি নিশ্চিতে এটি দেশের সংবিধান ও মানুষের মানবাধিকার হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।
বিশেষ অতিথি হিসেবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, উপকূলে জলবায়ু变化জনিত প্রভাবে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারন করছে। জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা মানুষের জীবন, কৃষি ও নগর অবকাঠামোতে গভীর সংকট সৃষ্টি করছে। এজন্য একটি পরিকল্পিত ও বাসযোগ্য নগর গড়ে তোলার ওপর জোর দেন তিনি।
তিনি বলেন, সঠিক ভূমি ব্যবস্থাপনা, গণপরিবহন, টেকসই অবকাঠামো ও মানসম্পন্ন সাশ্রয়ী আবাসন নিশ্চিত করাই এই সংকট মোকাবেলার মূল উপায়। আধুনিক প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ব্যবহারে আরও উন্নয়ন সম্ভব।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম। অতিথিবৃন্দের মধ্যে ছিলেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (UNDP) ডেপুটি আবাসিক সমন্বয়কারী সোনালী দয়ারত্নে, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আব্দুল মতিন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোঃ রিয়াজুল ইসলাম, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোসাঃ ফেরদৌসী বেগম, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি মোঃ আসিফুর রহমান ভূঁইয়া।
আলোচনার শেষ পর্যায়ে অতিথিরা ‘বিশ্ব বসতি দিবস ২০২৫’ এর স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন এবং বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। এর আগে, শেরেবাংলা নগরীতে বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হয়, যা এই দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরে।