০৬:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের পাশে আবর্জনার স্তূপ ঢেকে দেওয়া হলো বিশিষ্ট উপদেষ্টার আগমনের জন্য পাঁচ দিন ধরে সাগরে ভাসমান ২৬ জেলেকে উদ্ধার করলো নৌ বাহিনী মেনন-পলক-দস্তগীরসহ চারজনের বিরুদ্ধে নতুন মামলায় গ্রেফতার তীব্র যানজটে আটকা পড়ে সড়ক উপদেষ্টা মোটরসাইকেলে গন্তব্যে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ: দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রত্যয় আওয়ামী লীগের বিচারকাজের জন্য আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু জয়পুরহাটের কানাইপুকুর গ্রামে বিরল শামুকখোল পাখির অভয়ারণ্য শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়ার প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন সিইসির মনে অবস্থান: এবারের নির্বাচন জীবনশেষের সুযোগ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিদায় সাক্ষাৎ জাতিসংঘের অভিবাসী সমন্বয়কের

তরিক রহমান বললেন: শিগগিরই দেশে ফিরব, নির্বাচনে অংশ নেব

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের সামনে মুখোমুখি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এই বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি লন্ডন থেকে দেশের ফিরে আসা, পরবর্তী নির্বাচনে দলের কৌশল, আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতা-কর্মীদের বিচার, বাংলাদেশের নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার দৃঢ় ধারণা তুলে ধরেছেন।

সাক্ষাৎকারে তিনি কোনওভাবে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে সরাসরি আক্রমণ করেননি। বরং, তিনি রাজনীতিতে ইতিবাচক ও গঠনমূলক ধারার প্রবর্তনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তার বক্তব্য, আমরা চাই মানুষের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতি হোক, তবে তা যেন নীতিনিষ্ঠ ও ভদ্রতার সীমার মধ্যে থাকে। জনগণের আস্থা ফেরানো ও সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ গঠনের জন্য, রাজনীতিতে ঘৃণা বা হিংসা নয়, বরং সহযোগিতা ও দেশপ্রেমকে প্রাধান্য দিতে হবে।

তিনি জানান, ‘আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, আমি সহ সব কিছু ঠিক থাকলে, জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। সেই নির্বাচনের ফলাফলের সাথে আমি জনগণের মাঝেই থাকব। কিছু সময়ের জন্য হয়তো ফিরে আসার বিষয়টি বিলম্বিত হয়েছিল, তবে আমি মনে করি, এখন দিন বা সময় এসেছে। আমি খুব দ্রুত দেশের মাটিতে ফিরে আসবো।’

তারেক রহমান আরও বলেন, ‘নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের এবং কর্মীদের সম্পর্ক গভীর। যেখানে একটি প্রত্যাশিত, জনগণের পছন্দের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে আমি কি দূরে থাকব?’ তিনি উল্লেখ করেন, তার দেশের অবস্থান শুধুমাত্র শারীরিকভাবে প্রবাসী, কিন্তু মানসিকতা ও মনোভাবের দিক থেকে তিনি গত ১৭ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষজনের সাথে রয়েছেন।

নির্বাচনে অংশ নেওয়া কিংবা প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তার জবাব, ‘অবশ্যই, ইনশাআল্লাহ।’ আর প্রধানমন্ত্রীর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটি আমার সিদ্ধান্ত নয়। এটি নির্ধারিত হবে দেশের জনগণের ইচ্ছায়।’

নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী বাছাই প্রসঙ্গে তারেক রহমান জানান, ‘আমরা কখনোই পেশিশক্তি বা টাকার প্রভাব বা পারিবারিক যোগ্যতা দেখে প্রার্থী মনোনয়ন দেইনি। ভবিষ্যতেও দেব না। মূল মানদণ্ড হলো- প্রার্থীর এলাকার সমস্যা সংক্রান্ত জ্ঞান, মানুষের সাথে তার সম্পর্ক ও সম্পৃক্ততা, এবং এলাকার জনগণের কল্যাণে কাজ করার ক্ষমতা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই এমন একজন প্রার্থী, যার সাথে এলাকার তরুণ, নারী, প্রবীণ, ছাত্র-ছাত্রীসহ সব শ্রেণির মানুষের যোগাযোগ এবং আস্থা রয়েছে। যেকোনো শক্তিশালী জনসমর্থন থাকা ব্যক্তিই আমরা গুরুত্ব দেব।’

তৃণমূল দলের মতামতের বিষয়েও তিনি কথিত করেন, ‘তাদের মতামত অবশ্যই আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি। গণতন্ত্রে বিভিন্ন মতের স্বাভাবিক départ নয়। যেখানে বেশির ভাগের মত সেটিই আমরা গুরুত্ব দিই।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমরা দল হিসেবে নেতৃত্ব নির্বাচন করছি না, বরং এমন একজনকে নির্বাচন করছি, যিনি দলের বাইরে থেকেও এলাকার অধিকাংশ মানুষের আস্থাঅর্পণ পান। কারণ, নির্বাচনে শুধু দলীয় সমর্থন যথেষ্ট নয়, জনগণের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।’

মিডিয়া সঙ্গে তার দীর্ঘ সময় কথা না বলার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারেক রহমান বলেন, ‘এটি এমন কিছু নয়। বরং, আমি বলছি, আমি ১৭ বছর ধরে এই দেশে আছি, দেশে থাকাকালীন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে আমি সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেছি। আমি গ্রাম-গঞ্জে গিয়েছি, নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ রেখেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের জানাই, স্বৈরশাসক আমলের সময় মুখ বন্ধের জন্য আমার কথার অধিকার আদালত থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তখন আমি কিছু বলতে চাইলে, হয়তো গণমাধ্যম সেটি প্রকাশ করত না। আমি কথায় বলেছি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পৌঁছিয়েছি। আমি নিশ্চিত, আমি মানুষের কাছে পৌঁছে গেছি। আমি থেমে থাকিনি।’

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়, ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্ট তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। পরের দিন, অন্য একটি বেঞ্চ সরকারের নির্দেশে দ্রুত পদক্ষেপের প্রচেষ্টা করে, যাতে দেশের বাইরে থেকে তার বক্তব্য ছাপানো বা প্রচার বন্ধ রাখা হয়। তবে, গত বছরের ২২ আগস্ট হাইকোর্ট এই সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত সরকার ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার এবং পরে ২০০৮ সালে জামিনে মুক্তি দেয়। সেই সময় তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে লন্ডনে যান। আওয়ামী লীগের শাসনামলে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলায় চার্জ দেওয়া হয়েছিল, তবে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সব মামলায় তিনি থেকে মুক্তি পান। এখন তার বিরুদ্ধে কোনো মামলার পাল্প হয় না।

জুলাই মাসে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণের প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, আমি ১৭ বছর ধরে প্রবাসে আছি। সেই সময়ে, ২০০৭ সালের ‘ওয়ান ইলেভেন’ সরকারে সহ্য করা শারীরিক নির্যাতনের ক্ষত এখনো তাজা। আমি বলি, দেশে আমার পরিবারের অবস্থা অত্যন্ত কষ্টকর। আমার ভাই মারা গেছে, মা অসুস্থ। সেই স্মৃতি ও সেই দুঃখের গল্প বলার জন্য আমার পরিবার গভীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সংগ্রামের জন্য দায়ী যারা, তাদের বিচার হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি। এটি কোনও প্রতিশোধ নয়, বরং ন্যায্যতার জন্য, আইনের প্রয়োগের জন্য। কেউই অপরাধ ও অন্যায়ের বিচার এড়াতে পারে না।

তিনি বললেন, ‘আমার পরিবারের কাহিনী কেবল আমার নয়, এটি শত শত পরিবারের গল্প। যারা তাদের স্বজনদের খুন, গুম, নির্যাতন, অন্যায়ের শিকার হয়েছেন, তাদের জন্যও এই দাবি। এই সব অন্যায়ের জন্য দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এটি কোনও প্রতিশোধের বিষয় নয়, এটি আইনের প্রয়োগ ও ন্যায্যের দাবি। অপরাধীদের বিচার সম্ভব—অর্থাৎ ব্যক্তি হারুক বা দল। যারা অন্যায় করেছে, তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’

অবশ্য, কিছু নেতা এবং বিশ্লেষক প্রশ্ন তুলেছেন, দল হিসেবে ‘আওয়ামী লীগ’ বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিষয়টি সামনে আসছে কি না। এই প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, ‘যদি দল বা ব্যক্তিরা আইনভঙ্গ করে থাকে, তাদের অবশ্যই বিচার হবে। আইনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’

রাজনীতি করতে আওয়ামী লীগের থাকা উচিত কি না, সেই প্রশ্নে তার ব্যক্তিগত মত, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হলো জনগণের জন্য কাজ করা। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের রাজনৈতিক শক্তির মূল উৎস হলো জনগণ। যারা মানুষ হত্যা, গুম করে, লুটপাট করে—তাদের জনগণ সমর্থন করবে না। জনগণের সমর্থন ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল টিকতে পারে না। তাই, জনগণের সিদ্ধান্তই আমাদের শেষ কথা।’

জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, যারা রাজনীতি করতে চান, তারা নিজেদের অধিকার অনুযায়ী পারে। বিএনপি সবসময় বহুদলীয় রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। জামায়াতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক জটিল হলেও, আমাদের মূল নীতি হলো—সবাই আইনের মধ্যে থেকে রাজনীতি করবে। আন্দোলন ও রাজনীতি করতে কেউ বাধা পায় না।’

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সকল পক্ষের অতীতের কার্যকলাপের জবাবদিহি উচিত, যার যার দায়িত্ব। যারা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পর সময় এই দেশের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর বা অন্ধকার ভূমিকা নিয়ে থাকুক, তাদেরকেই জবাবদিহি করতে হবে। আমরা মূলত আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করে, গণতন্ত্রের লড়াইয়ে আছি।’

গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে তার মন্তব্য, ‘আমি নিজেকে কখনো এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বলে বিবেচনা করি না। এটি বাংলাদেশের জনশক্তিরই সৃষ্টি। আন্দোলনটি ছিল সব প্রশ্নের সম্মিলিত ফলাফল। দেশের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ, তরুণ-প্রবীণ, শ্রমিক, ছাত্র, সামাজিক সংগঠন—all অংশ নিয়েছে। এই আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের জনগণেরই প্রতিচ্ছবি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দুর্বৃত্ত ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে দেশের সব শ্রেণি যুক্ত ছিল। এটি কোনও এক দলের বা ব্যক্তির কীর্তি নয়। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব ছিল দেশের সাধারণ জনগণ।’

ট্যাগ :
সর্বাধিক পঠিত

দৌলতপুরে মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান, অবৈধ জাল জব্দ ও জেলেকে জরিমানা

তরিক রহমান বললেন: শিগগিরই দেশে ফিরব, নির্বাচনে অংশ নেব

প্রকাশিতঃ ১০:৪৮:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের সামনে মুখোমুখি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এই বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি লন্ডন থেকে দেশের ফিরে আসা, পরবর্তী নির্বাচনে দলের কৌশল, আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতা-কর্মীদের বিচার, বাংলাদেশের নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার দৃঢ় ধারণা তুলে ধরেছেন।

সাক্ষাৎকারে তিনি কোনওভাবে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে সরাসরি আক্রমণ করেননি। বরং, তিনি রাজনীতিতে ইতিবাচক ও গঠনমূলক ধারার প্রবর্তনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তার বক্তব্য, আমরা চাই মানুষের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতি হোক, তবে তা যেন নীতিনিষ্ঠ ও ভদ্রতার সীমার মধ্যে থাকে। জনগণের আস্থা ফেরানো ও সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ গঠনের জন্য, রাজনীতিতে ঘৃণা বা হিংসা নয়, বরং সহযোগিতা ও দেশপ্রেমকে প্রাধান্য দিতে হবে।

তিনি জানান, ‘আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, আমি সহ সব কিছু ঠিক থাকলে, জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। সেই নির্বাচনের ফলাফলের সাথে আমি জনগণের মাঝেই থাকব। কিছু সময়ের জন্য হয়তো ফিরে আসার বিষয়টি বিলম্বিত হয়েছিল, তবে আমি মনে করি, এখন দিন বা সময় এসেছে। আমি খুব দ্রুত দেশের মাটিতে ফিরে আসবো।’

তারেক রহমান আরও বলেন, ‘নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের এবং কর্মীদের সম্পর্ক গভীর। যেখানে একটি প্রত্যাশিত, জনগণের পছন্দের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে আমি কি দূরে থাকব?’ তিনি উল্লেখ করেন, তার দেশের অবস্থান শুধুমাত্র শারীরিকভাবে প্রবাসী, কিন্তু মানসিকতা ও মনোভাবের দিক থেকে তিনি গত ১৭ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষজনের সাথে রয়েছেন।

নির্বাচনে অংশ নেওয়া কিংবা প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তার জবাব, ‘অবশ্যই, ইনশাআল্লাহ।’ আর প্রধানমন্ত্রীর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটি আমার সিদ্ধান্ত নয়। এটি নির্ধারিত হবে দেশের জনগণের ইচ্ছায়।’

নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী বাছাই প্রসঙ্গে তারেক রহমান জানান, ‘আমরা কখনোই পেশিশক্তি বা টাকার প্রভাব বা পারিবারিক যোগ্যতা দেখে প্রার্থী মনোনয়ন দেইনি। ভবিষ্যতেও দেব না। মূল মানদণ্ড হলো- প্রার্থীর এলাকার সমস্যা সংক্রান্ত জ্ঞান, মানুষের সাথে তার সম্পর্ক ও সম্পৃক্ততা, এবং এলাকার জনগণের কল্যাণে কাজ করার ক্ষমতা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই এমন একজন প্রার্থী, যার সাথে এলাকার তরুণ, নারী, প্রবীণ, ছাত্র-ছাত্রীসহ সব শ্রেণির মানুষের যোগাযোগ এবং আস্থা রয়েছে। যেকোনো শক্তিশালী জনসমর্থন থাকা ব্যক্তিই আমরা গুরুত্ব দেব।’

তৃণমূল দলের মতামতের বিষয়েও তিনি কথিত করেন, ‘তাদের মতামত অবশ্যই আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি। গণতন্ত্রে বিভিন্ন মতের স্বাভাবিক départ নয়। যেখানে বেশির ভাগের মত সেটিই আমরা গুরুত্ব দিই।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমরা দল হিসেবে নেতৃত্ব নির্বাচন করছি না, বরং এমন একজনকে নির্বাচন করছি, যিনি দলের বাইরে থেকেও এলাকার অধিকাংশ মানুষের আস্থাঅর্পণ পান। কারণ, নির্বাচনে শুধু দলীয় সমর্থন যথেষ্ট নয়, জনগণের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।’

মিডিয়া সঙ্গে তার দীর্ঘ সময় কথা না বলার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারেক রহমান বলেন, ‘এটি এমন কিছু নয়। বরং, আমি বলছি, আমি ১৭ বছর ধরে এই দেশে আছি, দেশে থাকাকালীন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে আমি সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেছি। আমি গ্রাম-গঞ্জে গিয়েছি, নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ রেখেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের জানাই, স্বৈরশাসক আমলের সময় মুখ বন্ধের জন্য আমার কথার অধিকার আদালত থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তখন আমি কিছু বলতে চাইলে, হয়তো গণমাধ্যম সেটি প্রকাশ করত না। আমি কথায় বলেছি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পৌঁছিয়েছি। আমি নিশ্চিত, আমি মানুষের কাছে পৌঁছে গেছি। আমি থেমে থাকিনি।’

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়, ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্ট তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। পরের দিন, অন্য একটি বেঞ্চ সরকারের নির্দেশে দ্রুত পদক্ষেপের প্রচেষ্টা করে, যাতে দেশের বাইরে থেকে তার বক্তব্য ছাপানো বা প্রচার বন্ধ রাখা হয়। তবে, গত বছরের ২২ আগস্ট হাইকোর্ট এই সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত সরকার ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার এবং পরে ২০০৮ সালে জামিনে মুক্তি দেয়। সেই সময় তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে লন্ডনে যান। আওয়ামী লীগের শাসনামলে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলায় চার্জ দেওয়া হয়েছিল, তবে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সব মামলায় তিনি থেকে মুক্তি পান। এখন তার বিরুদ্ধে কোনো মামলার পাল্প হয় না।

জুলাই মাসে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণের প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, আমি ১৭ বছর ধরে প্রবাসে আছি। সেই সময়ে, ২০০৭ সালের ‘ওয়ান ইলেভেন’ সরকারে সহ্য করা শারীরিক নির্যাতনের ক্ষত এখনো তাজা। আমি বলি, দেশে আমার পরিবারের অবস্থা অত্যন্ত কষ্টকর। আমার ভাই মারা গেছে, মা অসুস্থ। সেই স্মৃতি ও সেই দুঃখের গল্প বলার জন্য আমার পরিবার গভীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সংগ্রামের জন্য দায়ী যারা, তাদের বিচার হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি। এটি কোনও প্রতিশোধ নয়, বরং ন্যায্যতার জন্য, আইনের প্রয়োগের জন্য। কেউই অপরাধ ও অন্যায়ের বিচার এড়াতে পারে না।

তিনি বললেন, ‘আমার পরিবারের কাহিনী কেবল আমার নয়, এটি শত শত পরিবারের গল্প। যারা তাদের স্বজনদের খুন, গুম, নির্যাতন, অন্যায়ের শিকার হয়েছেন, তাদের জন্যও এই দাবি। এই সব অন্যায়ের জন্য দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এটি কোনও প্রতিশোধের বিষয় নয়, এটি আইনের প্রয়োগ ও ন্যায্যের দাবি। অপরাধীদের বিচার সম্ভব—অর্থাৎ ব্যক্তি হারুক বা দল। যারা অন্যায় করেছে, তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’

অবশ্য, কিছু নেতা এবং বিশ্লেষক প্রশ্ন তুলেছেন, দল হিসেবে ‘আওয়ামী লীগ’ বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিষয়টি সামনে আসছে কি না। এই প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, ‘যদি দল বা ব্যক্তিরা আইনভঙ্গ করে থাকে, তাদের অবশ্যই বিচার হবে। আইনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’

রাজনীতি করতে আওয়ামী লীগের থাকা উচিত কি না, সেই প্রশ্নে তার ব্যক্তিগত মত, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হলো জনগণের জন্য কাজ করা। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের রাজনৈতিক শক্তির মূল উৎস হলো জনগণ। যারা মানুষ হত্যা, গুম করে, লুটপাট করে—তাদের জনগণ সমর্থন করবে না। জনগণের সমর্থন ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল টিকতে পারে না। তাই, জনগণের সিদ্ধান্তই আমাদের শেষ কথা।’

জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, যারা রাজনীতি করতে চান, তারা নিজেদের অধিকার অনুযায়ী পারে। বিএনপি সবসময় বহুদলীয় রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। জামায়াতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক জটিল হলেও, আমাদের মূল নীতি হলো—সবাই আইনের মধ্যে থেকে রাজনীতি করবে। আন্দোলন ও রাজনীতি করতে কেউ বাধা পায় না।’

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সকল পক্ষের অতীতের কার্যকলাপের জবাবদিহি উচিত, যার যার দায়িত্ব। যারা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পর সময় এই দেশের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর বা অন্ধকার ভূমিকা নিয়ে থাকুক, তাদেরকেই জবাবদিহি করতে হবে। আমরা মূলত আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করে, গণতন্ত্রের লড়াইয়ে আছি।’

গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে তার মন্তব্য, ‘আমি নিজেকে কখনো এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বলে বিবেচনা করি না। এটি বাংলাদেশের জনশক্তিরই সৃষ্টি। আন্দোলনটি ছিল সব প্রশ্নের সম্মিলিত ফলাফল। দেশের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ, তরুণ-প্রবীণ, শ্রমিক, ছাত্র, সামাজিক সংগঠন—all অংশ নিয়েছে। এই আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের জনগণেরই প্রতিচ্ছবি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দুর্বৃত্ত ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে দেশের সব শ্রেণি যুক্ত ছিল। এটি কোনও এক দলের বা ব্যক্তির কীর্তি নয়। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব ছিল দেশের সাধারণ জনগণ।’