০৬:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
তীব্র যানজটে আটকা পড়ে সড়ক উপদেষ্টা মোটরসাইকেলে গন্তব্যে পৌঁছেছেন ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের পাশে আবর্জনার স্তূপ ঢেকে দেওয়া হলো বিশিষ্ট উপদেষ্টার আগমনের জন্য পাঁচ দিন ধরে সাগরে ভাসমান ২৬ জেলেকে উদ্ধার করলো নৌ বাহিনী মেনন-পলক-দস্তগীরসহ চারজনের বিরুদ্ধে নতুন মামলায় গ্রেফতার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ: দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রত্যয় আওয়ামী লীগের বিচারকাজের জন্য আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু জয়পুরহাটের কানাইপুকুর গ্রামে বিরল শামুকখোল পাখির অভয়ারণ্য শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়ার প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন সিইসির মনে অবস্থান: এবারের নির্বাচন জীবনশেষের সুযোগ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিদায় সাক্ষাৎ জাতিসংঘের অভিবাসী সমন্বয়কের

তারেক রহমান বললেন, শিগগিরই দেশে ফিরবো এবং নির্বাচনে অংশ নেব

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ প্রায় দুই দশকের পর প্রথমবারের মতো কোনো গণমাধ্যমের মুখোমুখি হবেন। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এই বিশদ সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের দেশের ফিরতে চান, আগামী নির্বাচনে দলের কৌশল, আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর নির্যাতন, বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতি সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।

সাক্ষাৎকারে তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ না করে বরং রাজনীতিতে ইতিবাচক ও গঠনমূলক দিক এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তার ভাষায়, আমরা চাই দেশের রাজনীতি হোক প্রতিযোগিতামূলক, তবে তা যেন হয় নীতিনিষ্ঠ ও ভদ্রতার মধ্যে। জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হলে বিদ্বেষ নয়, সহযোগিতা ও দেশপ্রেমের ভিত্তিতে এগোতে হবে।

তারেক রহমান বলেন, ‘আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, আসন্ন নির্বাচনে প্রয়োজনীয় প্রত্যাশা বাস্তবায়নে অংশ নেওয়া। আমি যদি এখনো দেশে ফিরতে পারি না, এর কারণ হয়তো কিছু শর্ত বা পরিস্থিতির জন্য। তবে আমি নিশ্চিত, সময় এসেছে, দ্রুতই যাতে ফিরবো।’ তিনি যোগ করেন, ‘নির্বাচন এবং রাজনৈতিক দৃশ্যপটে দলের সদস্যরা ও কর্মীদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যেখানে প্রত্যাশিত, জনগণের স্বপ্নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে আমি ঠিকই থাকবো।’

তিনি আরও স্পষ্ট করেন, তার দেশের বাইরে থাকলেও তার মন ও মনোভাব সব সময় বাংলাদেশের সঙ্গে। ‘শারীরিক উপস্থাপনা আলাদা, কিন্তু গত ১৭ বছর ধরে আমি বাংলাদেশে আছি। এর মধ্যে আমার মনোভাব আর আত্মা সব কিছুর সঙ্গে রয়েছে।’

প্রশ্নে, নির্বাচনযদি হয়, তবে তিনি কি অংশ নেবেন, এর জবাবে তিনি বলেন, ‘ইনশাল্লাহ, অবশ্যই।’ প্রধানমন্ত্রীর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি সিদ্ধান্ত জনগণের ওপর। আমি নিজে সিদ্ধান্ত নিতে চাই না, তবে বাংলাদেশের আওয়ামীলীগের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’

নির্বাচনের জন্য বিএনপির মনোনয়নপ্রক্রিয়া ও কৌশল নিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা কখনোই পেশিশক্তি বা টাকার প্রভাব দিয়ে প্রার্থী মনোনয়ন দিইনি, ভবিষ্যতেও দেবো না। আমরা সবচেয়ে গুরুত্ব দিই যে প্রার্থী নিজে এলাকার সমস্যা সম্পর্কে জানে, জনগণের সঙ্গে সংযুক্ত এবং তাদের কল্যাণে কাজ করার সক্ষমতা রাখে।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমরা চাই এমন প্রার্থী, যার সঙ্গে এলাকার তরুণ, মহিলা, বৃদ্ধ, ছাত্র-অ্ঠিত সকলের যোগাযোগ রয়েছে। যার প্রতি মানুষের আস্থা রয়েছে, সেই ব্যক্তিকে আমরা অগ্রাধিকার দিই।’

তৃণমূলের মতামত ও গণপ্রতিনিধিদের গুরুত্ব প্রসঙ্গেও তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমরা তৃণমূলের মতামত গুরুত্ব দিয়ে থাকি। গণতন্ত্রে বিভিন্ন মতামত থাকা স্বাভাবিক। সংখ্যাগরিষ্ঠের মতটাই আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করি একজন নেতা যেন শুধু দলের নয়, সকল শ্রেণির মানুষের মত গ্রহণ করে, জাতীয় স্বার্থে কাজ করে। নির্বাচনে দলীয় সমর্থন অপরিহার্য হলেও, মূল বিষয় হলো জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ।’

গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার দীর্ঘ সময়ের বিষয়টি নিয়ে তারেক রহমান জানান, ‘আমি কথা বলছি, সামাজিক মাধ্যমে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। আমার বর্ষজীবনে বিভিন্ন সময় দলের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আমি সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে আসছি। গত ১৭ বছরের মধ্যে আমি বিভিন্ন মাধ্যমে নিজের কথা বলার জন্য চেষ্টা করে গেছি।’

তিনি বিশদে বলেন, ‘স্বৈরশাসন আমলে আমার কথা বলার অধিকার বন্ধ ছিল এমনকি আদালত থেকে আদেশও এসেছিল। তবে আমি আবার বলি, আমি কথা বলেছি, সামাজিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার না হওয়া সত্ত্বেও আমি পৌঁছাতে পেরেছি মানুষের হৃদয়ে। আমি থেমে থাকিনি।’

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ২০১৫ সালে হাইকোর্ট তার কথাবার্তা প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তবে, গত বছরের ২২ আগস্টের পর হাইকোর্টের অন্য একটি বেঞ্চ তার বক্তব্যের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

অতীতে, ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করে। পরে, ২০০৮ সালে তার জামিন হয় এবং তিনি স্ত্রী ও কন্যার সঙ্গে লন্ডনে চলে যান। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে নানা মামলার সৃষ্টি হয়েছে, তবে ২০২২ সালে কোনও মামলা অন্যায়ের অভিযোগে দায়ের করা হয় না।

বর্তমানে তিনি কোনও মামলায় বা অভিযোগে জড়িত নন।

নির্বাচন ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তার মন্তব্যের মধ্যে রয়েছে, ১৭ বছর ধরে দেশের বাইরে থাকলেও বাংলাদেশের জন্য তার আস্থা ও ভালোবাসা অটুট। তিনি জানান, ২০১১ সালের ওয়ান ইলেভেনের সময় তাঁর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনাগুলোর স্মৃতি এখনও তার মনে রয়েছে। পরিবারের জন্য গর্বের সঙ্গে তিনি বলেন, তার পরিবারকে অনেক ক্ষতি ও বিপদে পড়তে হয়েছে। ভাই, মা, স্বজনরা এখন অনেক আঘাত ও কষ্টের মধ্যে আছেন। তিনি বলেন, ‘এই সব অন্যায় ও নির্যাতনের বিচার হবে। যা হয়েছে, তার জন্য দায়ীদের উচিত শাস্তি পাওয়া।’ তিনি স্পষ্ট করেন, এটি কোনও প্রতিশোধের বিষয় নয়, এটি ন্যায়ের উপলব্ধি ও আইনের দাবি।

বিএনপির প্রাথমিক অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তারেক রহমান বলেন, দল বা ব্যক্তিগত অপরাধ থাকলে অবশ্যই আইনের আওতায় আসবে। এর জন্য দেশের আদালতই সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলে ওঠেন, ‘যারা অন্যায় করেছে, তাদের বিচার হতেই হবে। কেউই অপরাধে খাপ খাইবে না। তবে, আওয়ামী লীগ কতোটুকু দেশপ্রেমিক বা ন্যায়পরায়ণ সেটিও জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’

আওয়ামী লীগ কি দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে থাকতে উচিত, এই প্রশ্নে তিনি ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, রাজনীতি যদি জনগণের স্বার্থে হয়, তবে তা দেশের জন্য ভালো। যারা রাজনীতি করে, তারা যেন আইন মানে আর জনগণের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেয়।’ তিনি যোগ করেন, ‘জনগণ যদি তাদের প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে সেই রাজনৈতিক দলের টিকে থাকাটা সম্ভব নয়। জনগণের সিদ্ধান্তই সব কিছু নির্ধারক।’

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের বিষয়েও তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে স্বীকৃত ও আইনের মধ্য থেকে যারা রাজনীতি করে, তাদের অধিকার রয়েছে। আমরা বহুদলীয় রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। সংক্ষিপ্তভাবে বলতে চাই, যে দল বা সংগঠন আইন মানে, তাদের আপত্তি নেই।’

অতীতে, জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে বিএনপির জোটের বিষয় ও মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে তার ধারণা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অতীতে যারা গুম-খুন ও মানবতাবিরোধী কাজ করেছে, তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। ১৯৭১ সালে কি ভূমিকা রাখে বা না রাখে, সেটাও তাদেরই দায়িত্ব। আমি সে বিষয়গুলোতে মন্তব্য করতে চাই না। মূল লক্ষ্য আমাদের দাঁড়ায়, যুদ্ধের সময় শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করা। এখন দেশের স্বার্থে সর্বোচ্চ অপরাধী ও অন্যায়কারীদের জবাবদিহি করতেই হবে।’

অন্তর্বর্তী পর্যায়ে অন্যতম বড় আন্দোলন ছিল জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান। তখন তারেক রহমানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি কখনো এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে নিজেকে দেখিনি। তবে, এই আন্দোলনের সূচনার পেছনে দীর্ঘ সময়ের প্রস্তুতি ও রাজনৈতিক কৌশল ছিল। এটি ভবিষ্যতের বহু আন্দোলনের মতো একটি সংঘবদ্ধ রাজনৈতিক উদ্যোগ। আন্দোলনের পেছনে স্বার্থপর কোন ব্যক্তি বা দল নেই, বরং বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক দাবি ছিল অন্যতম মূল চালিকা শক্তি। এই আন্দোলনে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দলের নেতাকর্মী, সাধারণ জনতা, মাদরাসা ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধারা সক্রিয়া অংশ নিয়েছেন। সব শ্রেণির মানুষ এই সংগ্রামে অংশ নিয়েছে, এটি বাংলাদেশের জনতার আন্দোলন।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘এই আন্দোলনের সফলতার পেছনে ছিল জাতীয় স্বার্থ, জনগণের স্বপ্ন ও বিশ্বাস। এটি কোনও এক ব্যক্তির বা দলের একক অবদান না। এটি পুরো দেশের জনগণের গণতান্ত্রিক ঐক্য।’

ট্যাগ :
সর্বাধিক পঠিত

দৌলতপুরে মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান, অবৈধ জাল জব্দ ও জেলেকে জরিমানা

তারেক রহমান বললেন, শিগগিরই দেশে ফিরবো এবং নির্বাচনে অংশ নেব

প্রকাশিতঃ ১০:৪৮:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ প্রায় দুই দশকের পর প্রথমবারের মতো কোনো গণমাধ্যমের মুখোমুখি হবেন। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এই বিশদ সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের দেশের ফিরতে চান, আগামী নির্বাচনে দলের কৌশল, আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর নির্যাতন, বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতি সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।

সাক্ষাৎকারে তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ না করে বরং রাজনীতিতে ইতিবাচক ও গঠনমূলক দিক এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তার ভাষায়, আমরা চাই দেশের রাজনীতি হোক প্রতিযোগিতামূলক, তবে তা যেন হয় নীতিনিষ্ঠ ও ভদ্রতার মধ্যে। জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হলে বিদ্বেষ নয়, সহযোগিতা ও দেশপ্রেমের ভিত্তিতে এগোতে হবে।

তারেক রহমান বলেন, ‘আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, আসন্ন নির্বাচনে প্রয়োজনীয় প্রত্যাশা বাস্তবায়নে অংশ নেওয়া। আমি যদি এখনো দেশে ফিরতে পারি না, এর কারণ হয়তো কিছু শর্ত বা পরিস্থিতির জন্য। তবে আমি নিশ্চিত, সময় এসেছে, দ্রুতই যাতে ফিরবো।’ তিনি যোগ করেন, ‘নির্বাচন এবং রাজনৈতিক দৃশ্যপটে দলের সদস্যরা ও কর্মীদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যেখানে প্রত্যাশিত, জনগণের স্বপ্নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে আমি ঠিকই থাকবো।’

তিনি আরও স্পষ্ট করেন, তার দেশের বাইরে থাকলেও তার মন ও মনোভাব সব সময় বাংলাদেশের সঙ্গে। ‘শারীরিক উপস্থাপনা আলাদা, কিন্তু গত ১৭ বছর ধরে আমি বাংলাদেশে আছি। এর মধ্যে আমার মনোভাব আর আত্মা সব কিছুর সঙ্গে রয়েছে।’

প্রশ্নে, নির্বাচনযদি হয়, তবে তিনি কি অংশ নেবেন, এর জবাবে তিনি বলেন, ‘ইনশাল্লাহ, অবশ্যই।’ প্রধানমন্ত্রীর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি সিদ্ধান্ত জনগণের ওপর। আমি নিজে সিদ্ধান্ত নিতে চাই না, তবে বাংলাদেশের আওয়ামীলীগের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’

নির্বাচনের জন্য বিএনপির মনোনয়নপ্রক্রিয়া ও কৌশল নিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা কখনোই পেশিশক্তি বা টাকার প্রভাব দিয়ে প্রার্থী মনোনয়ন দিইনি, ভবিষ্যতেও দেবো না। আমরা সবচেয়ে গুরুত্ব দিই যে প্রার্থী নিজে এলাকার সমস্যা সম্পর্কে জানে, জনগণের সঙ্গে সংযুক্ত এবং তাদের কল্যাণে কাজ করার সক্ষমতা রাখে।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমরা চাই এমন প্রার্থী, যার সঙ্গে এলাকার তরুণ, মহিলা, বৃদ্ধ, ছাত্র-অ্ঠিত সকলের যোগাযোগ রয়েছে। যার প্রতি মানুষের আস্থা রয়েছে, সেই ব্যক্তিকে আমরা অগ্রাধিকার দিই।’

তৃণমূলের মতামত ও গণপ্রতিনিধিদের গুরুত্ব প্রসঙ্গেও তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমরা তৃণমূলের মতামত গুরুত্ব দিয়ে থাকি। গণতন্ত্রে বিভিন্ন মতামত থাকা স্বাভাবিক। সংখ্যাগরিষ্ঠের মতটাই আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করি একজন নেতা যেন শুধু দলের নয়, সকল শ্রেণির মানুষের মত গ্রহণ করে, জাতীয় স্বার্থে কাজ করে। নির্বাচনে দলীয় সমর্থন অপরিহার্য হলেও, মূল বিষয় হলো জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ।’

গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার দীর্ঘ সময়ের বিষয়টি নিয়ে তারেক রহমান জানান, ‘আমি কথা বলছি, সামাজিক মাধ্যমে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। আমার বর্ষজীবনে বিভিন্ন সময় দলের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আমি সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে আসছি। গত ১৭ বছরের মধ্যে আমি বিভিন্ন মাধ্যমে নিজের কথা বলার জন্য চেষ্টা করে গেছি।’

তিনি বিশদে বলেন, ‘স্বৈরশাসন আমলে আমার কথা বলার অধিকার বন্ধ ছিল এমনকি আদালত থেকে আদেশও এসেছিল। তবে আমি আবার বলি, আমি কথা বলেছি, সামাজিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার না হওয়া সত্ত্বেও আমি পৌঁছাতে পেরেছি মানুষের হৃদয়ে। আমি থেমে থাকিনি।’

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ২০১৫ সালে হাইকোর্ট তার কথাবার্তা প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তবে, গত বছরের ২২ আগস্টের পর হাইকোর্টের অন্য একটি বেঞ্চ তার বক্তব্যের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

অতীতে, ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করে। পরে, ২০০৮ সালে তার জামিন হয় এবং তিনি স্ত্রী ও কন্যার সঙ্গে লন্ডনে চলে যান। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে নানা মামলার সৃষ্টি হয়েছে, তবে ২০২২ সালে কোনও মামলা অন্যায়ের অভিযোগে দায়ের করা হয় না।

বর্তমানে তিনি কোনও মামলায় বা অভিযোগে জড়িত নন।

নির্বাচন ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তার মন্তব্যের মধ্যে রয়েছে, ১৭ বছর ধরে দেশের বাইরে থাকলেও বাংলাদেশের জন্য তার আস্থা ও ভালোবাসা অটুট। তিনি জানান, ২০১১ সালের ওয়ান ইলেভেনের সময় তাঁর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনাগুলোর স্মৃতি এখনও তার মনে রয়েছে। পরিবারের জন্য গর্বের সঙ্গে তিনি বলেন, তার পরিবারকে অনেক ক্ষতি ও বিপদে পড়তে হয়েছে। ভাই, মা, স্বজনরা এখন অনেক আঘাত ও কষ্টের মধ্যে আছেন। তিনি বলেন, ‘এই সব অন্যায় ও নির্যাতনের বিচার হবে। যা হয়েছে, তার জন্য দায়ীদের উচিত শাস্তি পাওয়া।’ তিনি স্পষ্ট করেন, এটি কোনও প্রতিশোধের বিষয় নয়, এটি ন্যায়ের উপলব্ধি ও আইনের দাবি।

বিএনপির প্রাথমিক অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তারেক রহমান বলেন, দল বা ব্যক্তিগত অপরাধ থাকলে অবশ্যই আইনের আওতায় আসবে। এর জন্য দেশের আদালতই সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলে ওঠেন, ‘যারা অন্যায় করেছে, তাদের বিচার হতেই হবে। কেউই অপরাধে খাপ খাইবে না। তবে, আওয়ামী লীগ কতোটুকু দেশপ্রেমিক বা ন্যায়পরায়ণ সেটিও জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’

আওয়ামী লীগ কি দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে থাকতে উচিত, এই প্রশ্নে তিনি ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, রাজনীতি যদি জনগণের স্বার্থে হয়, তবে তা দেশের জন্য ভালো। যারা রাজনীতি করে, তারা যেন আইন মানে আর জনগণের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেয়।’ তিনি যোগ করেন, ‘জনগণ যদি তাদের প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে সেই রাজনৈতিক দলের টিকে থাকাটা সম্ভব নয়। জনগণের সিদ্ধান্তই সব কিছু নির্ধারক।’

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের বিষয়েও তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে স্বীকৃত ও আইনের মধ্য থেকে যারা রাজনীতি করে, তাদের অধিকার রয়েছে। আমরা বহুদলীয় রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। সংক্ষিপ্তভাবে বলতে চাই, যে দল বা সংগঠন আইন মানে, তাদের আপত্তি নেই।’

অতীতে, জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে বিএনপির জোটের বিষয় ও মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে তার ধারণা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অতীতে যারা গুম-খুন ও মানবতাবিরোধী কাজ করেছে, তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। ১৯৭১ সালে কি ভূমিকা রাখে বা না রাখে, সেটাও তাদেরই দায়িত্ব। আমি সে বিষয়গুলোতে মন্তব্য করতে চাই না। মূল লক্ষ্য আমাদের দাঁড়ায়, যুদ্ধের সময় শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করা। এখন দেশের স্বার্থে সর্বোচ্চ অপরাধী ও অন্যায়কারীদের জবাবদিহি করতেই হবে।’

অন্তর্বর্তী পর্যায়ে অন্যতম বড় আন্দোলন ছিল জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান। তখন তারেক রহমানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি কখনো এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে নিজেকে দেখিনি। তবে, এই আন্দোলনের সূচনার পেছনে দীর্ঘ সময়ের প্রস্তুতি ও রাজনৈতিক কৌশল ছিল। এটি ভবিষ্যতের বহু আন্দোলনের মতো একটি সংঘবদ্ধ রাজনৈতিক উদ্যোগ। আন্দোলনের পেছনে স্বার্থপর কোন ব্যক্তি বা দল নেই, বরং বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক দাবি ছিল অন্যতম মূল চালিকা শক্তি। এই আন্দোলনে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দলের নেতাকর্মী, সাধারণ জনতা, মাদরাসা ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধারা সক্রিয়া অংশ নিয়েছেন। সব শ্রেণির মানুষ এই সংগ্রামে অংশ নিয়েছে, এটি বাংলাদেশের জনতার আন্দোলন।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘এই আন্দোলনের সফলতার পেছনে ছিল জাতীয় স্বার্থ, জনগণের স্বপ্ন ও বিশ্বাস। এটি কোনও এক ব্যক্তির বা দলের একক অবদান না। এটি পুরো দেশের জনগণের গণতান্ত্রিক ঐক্য।’