০৩:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
শুক্রবারের মধ্যে জুলাই সংবিধানের চূড়ান্ত রোডম্যাপ প্রকাশের আশা স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট নভেম্বরের মধ্যে চায় জামায়াত হাসিনার বিরুদ্ধে আজ সাক্ষ্য দেবেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এনবিআরের সিদ্ধান্ত: এমপি কোটার ৩০ বিলাসবহুল গাড়ি নিলামে বিক্রির পরিবর্তে হস্তান্তর তীব্র যানজটে আটকা পড়ে সড়ক উপদেষ্টা মোটরসাইকেলে গন্তব্যে পৌঁছেছেন ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের পাশে আবর্জনার স্তূপ ঢেকে দেওয়া হলো বিশিষ্ট উপদেষ্টার আগমনের জন্য পাঁচ দিন ধরে সাগরে ভাসমান ২৬ জেলেকে উদ্ধার করলো নৌ বাহিনী মেনন-পলক-দস্তগীরসহ চারজনের বিরুদ্ধে নতুন মামলায় গ্রেফতার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ: দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রত্যয়

জাতিসংঘে ষড়যন্ত্রের থিওরি দিলেন ট্রাম্প

নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে বিশ্বের শীর্ষ নেতারা অংশ নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও উপস্থিত ছিলেন। তবে তার এই সফর বেশ অপ্রসন্ন এবং ঝামেলার মধ্যে দিয়ে গেছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি তিনটি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন যা তার কাছে খুবই উদ্বেগজনক। সিএনএনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত বৃহস্পতিবার তিনি এই তথ্য প্রকাশ করেছেন।

বুধবার তার সামাজিক মাধ্যমে ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘জাতিসংঘে যা ঘটেছে, তা সত্যিই অপমানজনক। এটি এক নয়, দুই নয়, তিনটি অশুভ ঘটনা ঘটে গেছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, জাতিসংঘের সদরদপ্তরে তিনি এসকেলেটর বন্ধ হয়ে যাওয়া, নষ্ট টেলিপ্রম্পটার ও অডিও সিস্টেমের সমস্যার মুখামুখি হয়েছেন। এসব ঘটনায় তিনি এর পেছনে ষড়যন্ত্রের অভিপ্রায় দেখেছেন এবং এর যথাযথ তদন্তের দাবিও তুলেছেন।

আজকের প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত মঙ্গলবার তিনি তার ভাষণ শুরুতেই এই বিষয়গুলোর উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি জাতিসংঘ থেকে দুটি জিনিস পাচ্ছি: একটি নষ্ট এসকেলেটর এবং অন্যটি নষ্ট টেলিপ্রম্পটার।’ পরের পোস্টে তিনি অডিও সিস্টেম সম্পর্কেও কারিগরি সমস্যা থাকার কথা উল্লেখ করেন।

উল্লেখ্য, টেলিপ্রম্পটার হলো একটি যন্ত্র যা বক্তাদের বক্তব্যে সাহায্য করে। এর স্ক্রিনে বক্তব্যের পরবর্তী লাইন বা অংশ দেখা যায়, যা বক্তাকে নির্দেশ দেয়।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক এক বিবৃতিতে জানান, ‘জাতিসংঘের মহাসচিব এই ব্যাপারে পূর্ণ তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাটির এসব প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত তারা।

দুজারিক ব্যাখ্যা দেন, একটি স্বয়ংক্রিয় ‘নিরাপত্তা ব্যবস্থা’ চালু হওয়ার কারণে এসকেলেটর বন্ধ হয়ে যায়। মার্কিন প্রতিনিধি দলের এক ভিডিওগ্রাফার অজান্তে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করে দেয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই ক্ষোভ মূলত আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতি তার বিরক্তির প্রকাশ, বিশেষ করে গৃহীত ছোটোখাটো কারিগরি সমস্যা নিয়ে তার আক্রোশের কারণে। গত সপ্তাহে তিনি একাধিকবার জাতিসংঘের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।

এক্ষেত্রে ট্রাম্প বলেন, ‘প্রথমত, বক্তব্য দেওয়ার জন্য চলে যাওয়া নির্ধারিত এসকেলেটরটি হঠাৎ করে খুব জোরে বন্ধ হয়ে যায়। ভাগ্য ভালো, আমি আর মেলানিয়া ওই ধারালো স্টিলের সিঁড়িতে পড়ে যাইনি।’ তিনি এই ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্রের’ অংশ বলে অভিহিত করেন।

সপ্তাহান্তে লন্ডন টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘের কর্মীরা ট্রাম্পকে হয়তো হেনস্তা করতে এসকেলেটর ও লিফট বন্ধ করে রেখেছিল। ট্রাম্প এসব বিষয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এই কাজের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা অবশ্যই গ্রেপ্তার হওয়া উচিত।’ তিনি জানান, সাধারণ পরিষদের ভাষণে প্রথমে টেলিপ্রম্পটার ‘অকেজো’ হয়ে যায়, তবে পরে ঠিক হলেও তার শেষ বক্তব্যে অডিও সিস্টেম ঠিকঠাক কাজ করেনি বলে মন্তব্য করেন।

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘সঙ্গে থাকা দোভাষীদের ইয়ারপিস না লাগলে আমার কথা শুনা যেত না।’ তিনি জানান, এ বিষয়গুলো নিয়ে তিনি মহাসচিবের কাছে একটি ইমেইল পাঠাবেন, যাতে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানানো হবে। এছাড়া, তিনি এসকেলেটরের পাশে থাকা ভিডিও ফুটেজ দেখার জন্যও আবেদন করবেন এবং মার্কিন গোয়েন্দাদের সহযোগিতা নেবেন বলে আশ্বাস দেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেন, ‘এটি কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয়; জাতিসংঘে তিনবার এই ধরনের ষড়যন্ত্রের ঘটনা ঘটেছে। এর জন্য তারা লজ্জা পায়। আমি মহাসচিবের কাছে এই ঘটনা সম্পর্কিত চিঠির কপি পাঠাবো এবং অবিলম্বে তদন্তের জন্য বলবো।’

এদিকে, জাতিসংঘ ও মার্কিন প্রশাসন একে অপরকে দায় দিচ্ছে কারিগরি এই ত্রুটির জন্য। এক জাতিসংঘ কর্মকর্তা জানান, এই টেলিপ্রম্পটারের দায়িত্ব হোয়াইট হাউসের, অন্যজন বলছেন, এটি জাতিসংঘ সরবরাহ করেছে।

মার্কিনদূত এক্স এই পোস্টে বলেছেন, ‘আমরা কোনওভাবেই এই ধরনের নিরাপত্তা হুমকি মেনে নেব না। তদন্তের জন্য আমরা সহযোগিতা ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশা করছি।’ এর সাথে সুর মিলিয়ে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ‘অন্তত যদি কোনো কর্মী ইচ্ছাকৃতভাবে এসকেলেটর বন্ধ করে থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’ তিনি দ্য টাইমসের একটি প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট শেয়ার করে বলেছিলেন, ‘ট্রাম্পের আগমনে জাতিসংঘের কর্মীরা হাসির ছলে বলছিলেন, তারা এসকেলেটর বন্ধ করে দেয় আর বলে, টাকা শেষ, এখন সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হবে।’

ট্যাগ :
সর্বাধিক পঠিত

জাতিসংঘে ষড়যন্ত্রের থিওরি দিলেন ট্রাম্প

প্রকাশিতঃ ০৮:১৭:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে বিশ্বের শীর্ষ নেতারা অংশ নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও উপস্থিত ছিলেন। তবে তার এই সফর বেশ অপ্রসন্ন এবং ঝামেলার মধ্যে দিয়ে গেছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি তিনটি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন যা তার কাছে খুবই উদ্বেগজনক। সিএনএনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত বৃহস্পতিবার তিনি এই তথ্য প্রকাশ করেছেন।

বুধবার তার সামাজিক মাধ্যমে ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘জাতিসংঘে যা ঘটেছে, তা সত্যিই অপমানজনক। এটি এক নয়, দুই নয়, তিনটি অশুভ ঘটনা ঘটে গেছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, জাতিসংঘের সদরদপ্তরে তিনি এসকেলেটর বন্ধ হয়ে যাওয়া, নষ্ট টেলিপ্রম্পটার ও অডিও সিস্টেমের সমস্যার মুখামুখি হয়েছেন। এসব ঘটনায় তিনি এর পেছনে ষড়যন্ত্রের অভিপ্রায় দেখেছেন এবং এর যথাযথ তদন্তের দাবিও তুলেছেন।

আজকের প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত মঙ্গলবার তিনি তার ভাষণ শুরুতেই এই বিষয়গুলোর উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি জাতিসংঘ থেকে দুটি জিনিস পাচ্ছি: একটি নষ্ট এসকেলেটর এবং অন্যটি নষ্ট টেলিপ্রম্পটার।’ পরের পোস্টে তিনি অডিও সিস্টেম সম্পর্কেও কারিগরি সমস্যা থাকার কথা উল্লেখ করেন।

উল্লেখ্য, টেলিপ্রম্পটার হলো একটি যন্ত্র যা বক্তাদের বক্তব্যে সাহায্য করে। এর স্ক্রিনে বক্তব্যের পরবর্তী লাইন বা অংশ দেখা যায়, যা বক্তাকে নির্দেশ দেয়।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক এক বিবৃতিতে জানান, ‘জাতিসংঘের মহাসচিব এই ব্যাপারে পূর্ণ তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাটির এসব প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত তারা।

দুজারিক ব্যাখ্যা দেন, একটি স্বয়ংক্রিয় ‘নিরাপত্তা ব্যবস্থা’ চালু হওয়ার কারণে এসকেলেটর বন্ধ হয়ে যায়। মার্কিন প্রতিনিধি দলের এক ভিডিওগ্রাফার অজান্তে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করে দেয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই ক্ষোভ মূলত আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতি তার বিরক্তির প্রকাশ, বিশেষ করে গৃহীত ছোটোখাটো কারিগরি সমস্যা নিয়ে তার আক্রোশের কারণে। গত সপ্তাহে তিনি একাধিকবার জাতিসংঘের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।

এক্ষেত্রে ট্রাম্প বলেন, ‘প্রথমত, বক্তব্য দেওয়ার জন্য চলে যাওয়া নির্ধারিত এসকেলেটরটি হঠাৎ করে খুব জোরে বন্ধ হয়ে যায়। ভাগ্য ভালো, আমি আর মেলানিয়া ওই ধারালো স্টিলের সিঁড়িতে পড়ে যাইনি।’ তিনি এই ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্রের’ অংশ বলে অভিহিত করেন।

সপ্তাহান্তে লন্ডন টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘের কর্মীরা ট্রাম্পকে হয়তো হেনস্তা করতে এসকেলেটর ও লিফট বন্ধ করে রেখেছিল। ট্রাম্প এসব বিষয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এই কাজের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা অবশ্যই গ্রেপ্তার হওয়া উচিত।’ তিনি জানান, সাধারণ পরিষদের ভাষণে প্রথমে টেলিপ্রম্পটার ‘অকেজো’ হয়ে যায়, তবে পরে ঠিক হলেও তার শেষ বক্তব্যে অডিও সিস্টেম ঠিকঠাক কাজ করেনি বলে মন্তব্য করেন।

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘সঙ্গে থাকা দোভাষীদের ইয়ারপিস না লাগলে আমার কথা শুনা যেত না।’ তিনি জানান, এ বিষয়গুলো নিয়ে তিনি মহাসচিবের কাছে একটি ইমেইল পাঠাবেন, যাতে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানানো হবে। এছাড়া, তিনি এসকেলেটরের পাশে থাকা ভিডিও ফুটেজ দেখার জন্যও আবেদন করবেন এবং মার্কিন গোয়েন্দাদের সহযোগিতা নেবেন বলে আশ্বাস দেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেন, ‘এটি কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয়; জাতিসংঘে তিনবার এই ধরনের ষড়যন্ত্রের ঘটনা ঘটেছে। এর জন্য তারা লজ্জা পায়। আমি মহাসচিবের কাছে এই ঘটনা সম্পর্কিত চিঠির কপি পাঠাবো এবং অবিলম্বে তদন্তের জন্য বলবো।’

এদিকে, জাতিসংঘ ও মার্কিন প্রশাসন একে অপরকে দায় দিচ্ছে কারিগরি এই ত্রুটির জন্য। এক জাতিসংঘ কর্মকর্তা জানান, এই টেলিপ্রম্পটারের দায়িত্ব হোয়াইট হাউসের, অন্যজন বলছেন, এটি জাতিসংঘ সরবরাহ করেছে।

মার্কিনদূত এক্স এই পোস্টে বলেছেন, ‘আমরা কোনওভাবেই এই ধরনের নিরাপত্তা হুমকি মেনে নেব না। তদন্তের জন্য আমরা সহযোগিতা ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশা করছি।’ এর সাথে সুর মিলিয়ে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ‘অন্তত যদি কোনো কর্মী ইচ্ছাকৃতভাবে এসকেলেটর বন্ধ করে থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’ তিনি দ্য টাইমসের একটি প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট শেয়ার করে বলেছিলেন, ‘ট্রাম্পের আগমনে জাতিসংঘের কর্মীরা হাসির ছলে বলছিলেন, তারা এসকেলেটর বন্ধ করে দেয় আর বলে, টাকা শেষ, এখন সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হবে।’