ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করা একেবারেই অসম্ভব। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র বারবার তাদের প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে এবং সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকি দিয়ে আসছে। তিনি এক্স পোস্টে বলেন, ‘আমাদের মুখোমুখি যে পক্ষ আছে, তারা প্রত্যেকবারই তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, মিথ্যা বলে এবং সামরিক হুমকি দিয়ে থাকে। এমন একটি শক্তির সাথে আলোচনা বা চুক্তি সম্ভব নয়।’ খামেনি আরও মনে করেন, যদি সুযোগ পান, তাহলে ওয়াশিংটন আবারও ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালাতে পারে কিংবা তার ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করতে পারে।
অন্যদিকে, ইরান এখন তার পারমাণবিক শক্তির ব্যবহারে নতুন করে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশটি রাশিয়ার সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সেরেছে, যার মাধ্যমে তারা তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার বহুগুণে বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। সমরবিদরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ মধ্যপ্রাচ্যের শক্তির ভারসাম্য পরিবর্তন করতে পারে। ইরান বারবার দাবি করে এসেছে যে, তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মূল লক্ষ্য সম্পূর্ণ বেসামরিক, বিশেষ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন।
ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলামীয় জানিয়েছেন, তারা দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হরমোজগানে ৫,০০০ মেগাওয়াটক্ষমতার একটি নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের জন্যই রাশিয়ার সাথে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। মোহাম্মদ ইসলামীর মতে, ‘ইরান ও রাশিয়ার মাঝে কৌশলগত সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। রাশিয়ার রোসাটমের সাথে আমাদের বেশ কয়েকটি চুক্তি হয়েছে এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে।’ ২৫ সেপ্টেম্বর তাসনিম নিউজ এজেন্সি এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বর্তমানে, ইরানের বুশেহরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ইউনিটের নির্মাণ রাশিয়ার দখলে রয়েছে। ইরান ২০৪১ সালের মধ্যে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করে ২০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য সামনে নিয়ে কাজ করছে।
পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল, এই চুক্তির বিষয়ে অবাক হয়েছে। অনেক ভাবুক মনে করছেন, যদি ইরান সফলভাবে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে, তবে মধ্যপ্রাচ্যর শক্তির ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন আসবে, যা পশ্চিমাদের শাসনব্যবস্থায় ভাটা পড়তে পারে। এর আগেও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ রাশিয়া ও চীনের প্রস্তাবিত একটি খসড়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, যেখানে ইরানের পারমাণবিক চুক্তির সমর্থনে গৃহীত প্রস্তাব ছয় মাসের জন্য বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছিল।