অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের এমডিসহ কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে মামলা করে দুদক। ওই মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের কারাগারে পাঠানো হলে থেমে যায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম। তবে হাইকোর্টের নির্দেশে কমিটি গঠনের পর ডেসটিনির কার্যক্রম চালু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। ২০১২ সালের ৩১ জুলাই দুদকের উপ-পরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ও সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম রাজধানীর কলাবাগান থানায় ডেসটিনির কর্তাব্যক্তিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি এবং ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন প্রজেক্টের অর্থ আত্মসাতের দুটি মামলা করেন।
ওই মামলায় প্রতিষ্ঠানটির এমডিসহ কয়েকজনকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় কোম্পানি আইন অনুসারে আর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ এজিএম হয়েছিল ২০১১ সালে। দীর্ঘদিন ধরে এজিএম না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে হাইকোর্টের কাছে ডেসটিনির অবসায়ন চেয়ে মামলা করা হয়। ২০১৮ সালের ১৫ মে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বিপ্লব বিকাশ শিলসহ ১৬ জন ওই আবেদন করেন। এদিকে প্রতিষ্ঠানটির এজিএম অনুষ্ঠান ও পরিচালনার জন্য হাইকোর্টে আরেকটি আবেদন জানানো হয়।
২০২০ সালের ৩১ অক্টোবর কোম্পানির পরিচালক জাকির হোসেনকে নিয়ে ৯ সদস্যের একটি বোর্ড গঠন করা হয়। তবে হাইকোর্টের আজকের (১ সেপ্টেম্বর) আদেশে হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীকে পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সাবেক জেলা জজ হাসান শাহেদ ফেরদৌস, ব্যারিস্টার মাগরুব কবীর, এফসিএ ফখরুদ্দিন আহমদ এবং সাবেক সংসদ সদস্য মো. ইকবাল জামানকে পরিচালনা বোর্ডের সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। ডেসটিনির আগের নয় সদস্যের বোর্ডকে সঙ্গে নিয়ে নতুন পাঁচ সদস্যকে প্রতিষ্ঠানটির এজিএম অনুষ্ঠানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে ব্যারিস্টার মইনুল ইসলাম বলেন, হাইকোর্ট আমাদের দরখাস্ত মঞ্জুর করেছেন। ফলে ডেসটিনি নিয়ে যে অচলাবস্থা ছিল তা দূর হলো। যারা আদালতের রায়ে দণ্ডিত হননি এবং কোর্ট যাদের পরিচালনা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছিলেন তাদের সমন্বয়ে কোম্পানি পরিচালিত হবে। শেয়ার হোল্ডারদের স্বার্থরক্ষায় এই বোর্ড যেকোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। হাইকোর্টের আজকের আদেশের মাধ্যমে আগের বোর্ডকে পুনর্গঠন করায় তারা কোম্পানিটি চালু করতে পারবেন। মামলার আরেক আইনজীবী উজ্জ্বল ভৌমিক বলেন, পুনর্গঠিত নতুন কমিটি কোম্পানিটি পরিচালনা করতে পারবেন। তবে লিখিত আদেশ প্রকাশ পেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
প্রসঙ্গত, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে করা দুদকের দুই মামলার তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ৫ মে দুদক আদালতে উভয় মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এরমধ্যে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ৪৬ জন এবং ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন লিমিটেডে দুর্নীতির মামলার ১৯ জনকে আসামি করা হয়। হারুন-অর-রশিদ ও রফিকুল আমিন দুই মামলাতেই আসামি। গত ১২ মে বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ে ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনকে ১২ বছর কারাদ- এবং ২০০ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ বছরের সাজা দেওয়া হয়।
রফিকুল আমিনসহ মামলার ৪৬ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং তাদের মোট ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। এরমধ্যে আসামি হারুন-অর-রশীদকে দেওয়া হয় চার বছরের কারাদ-। সেই সঙ্গে তাকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে ছয় মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কারাদণ্ড প্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন—মো. দিদারুল আলম, হারুন-অর-রশিদ, জেসমিন আক্তার (মিলন), জিয়াউল হক মোল্লা, সাইফুল ইসলাম রুবেল, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, ডেসটিনির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোফরানুল হক, পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন, ফারাহ দীবা, সাঈদ-উর-রহমান, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, জমশেদ আরা চৌধুরী, ইরফান আহমেদ, শেখ তৈয়বুর রহমান, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস, জাকির হোসেন, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, এসএম আহসানুল কবির, জুবায়ের হোসেন, মোসাদ্দেক আলী খান, আবদুল মান্নান, আবুল কালাম আজাদ, আজাদ রহমান, মো. আকবর হোসেন সুমন, মো. সুমন আলী খান, শিরীন আকতার, রফিকুল ইসলাম সরকার, মো. মজিবুর রহমান, ড. এম হায়দারুজ্জামান, মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, কাজী মো. ফজলুল করিম, মোল্লা আল আমীন, মো. শফিউল ইসলাম, ওমর ফারুক, সিকদার কবিরুল ইসলাম, মো. ফিরোজ আলম, সুনীল বরণ কর্মকার ওরফে এসবি কর্মকার, ফরিদ আকতার, এস সহিদুজ্জামান চয়ন, আবদুর রহমান তপন, সাকিবুজ্জামান খান, এসএম আহসানুল কবির (বিপ্লব), এএইচএম আতাউর রহমান রেজা, গোলাম কিবরিয়া মিল্টন, মো. আতিকুর রহমান, খন্দকার বেনজীর আহমেদ, একেএম সফিউল্লাহ, শাহ আলম, মো. দেলোয়ার হোসেন ও মো. শফিকুল হক।