১০:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
গুম-খুনের অভিযোগে ক্ষমা চেয়ে আয়নাঘরের কথা স্বীকার করলেন র‍্যাব ডিজি ঐক্যের ডাক হাসনাত আব্দুল্লাহর দেশের জন্য ক্ষতিকর চুক্তি বাতিলের দাবি করা হয়েছে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য চলমান অপচেষ্টা নতুন বাংলাদেশের যাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার রমেন রায়ের ওপর হামলার ঘটনাটি পুরোনো, তিনি চিন্ময়ের আইনজীবী নন ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা পশ্চিমবঙ্গের ৮ জেলায় বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ালো ভারত

এক দশকের মধ্যে ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকটে বাংলাদেশ

২০১৩ সালের পরে গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ। সরকারি তথ্য বিশ্লেষণ করে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স বলছে, বৈরি আবহাওয়া, কমতে থাকা রিজার্ভের কারণে জ্বালানি আমদানিতে ভোগান্তি ও টাকার মূল্য কমে যাওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশে জুলাই-অক্টোবরে বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকে। এরই মধ্যে আরও তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী সতর্ক করে জানিয়েছেন, আগামী দিনেও দেশে লোডশেডিং অব্যাহত থাকতে পারে।

চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ। ওয়ালমার্ট, এইচঅ্যান্ডএম এবং জারাসহ বিএএল খুচরা বিক্রেতারা ২০২৩ সালের প্রথম পাঁচ মাসে ১১৪ দিনের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বাধ্য হয়েছে। যা ২০২২ সালের ১১৩ দিনের সঙ্গে তুলনা করা হয়।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, সন্ধ্যা ও ভোরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ১০-১২ ঘণ্টা ধরে অঘোষিত বিদ্যুৎ বিভ্রাটের অভিযোগ করেছেন।

সামগ্রিক বিদ্যুৎ সরবরাহ ঘাটতি জুনের প্রথম সপ্তাহে গড়ে ১৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মে মাসের গড় ৫.২ শতাংশ ঘাটতির প্রায় তিনগুণ। সরকারি তথ্য বলছে, জ্বালানি ঘাটতিই সরবরাহ ঘাটতির প্রধান কারণ।

জাতীয় গ্রিড অপারেটরের ওয়েবসাইটের মতে, জ্বালানির অভাবে গত সোমবার দেশের গ্যাস-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১১.৫ গিগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় এক-চতুর্থাংশ এবং ৩.৪ গিগাওয়াট কয়লা-চালিত কেন্দ্রের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বন্ধ ছিল।

অপারেটরের মতে, ডিজেল এবং জ্বালানি তেলে চালিত ৭.৫ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৪০ শতাংশের বেশির কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিনোপেক, ইন্ডিয়ান অয়েলকে (আইওসি) অর্থ দিতে না পারার বিষয়ে সতর্ক করে এপ্রিলের শেষের দিকে এবং মে মাসের শুরুতে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পেট্রোলিয়াম সংস্থা। মার্কিন ডলারের ঘাটতির পাশাপাশি জ্বালানি তেলের মজুদ উদ্বেগজনকভাবে কমছে। মে মাস পর্যন্ত ১২ মাসে টাকার মূল্য এক ষষ্ঠাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে এবং এপ্রিলে ডলারের রিজার্ভ এক তৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়ে সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে।

গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বাড়ায় কয়লা এবং তরল জ্বালানিচালিত কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। এতে গড় বিদ্যুতের দামও বেড়েছে। স্থানীয় মজুদ কমে যাওয়ায় এবং বিশ্বব্যাপী সরবরাহকারীদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির অভাবে ২০২২ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার হ্রাস পেয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম ব্যাপকভাবে বাড়ে। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় দাম কমে আসায় তার ব্যবহার বেড়েছে। বাংলাদেশ সম্প্রতি কাতারএনার্জির সাথে ১৫ বছরের একটি এলএনজি চুক্তি করেছে।

২০২৩ সালের প্রথম পাঁচ মাসে বিদ্যুতের জন্য কয়লার ওপর নির্ভরতা বেড়ে ১৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, ২০২২ সালে যা ছিল ৮ শতাংশ। ২০২২ সালে জ্বালানি তেল ও ডিজেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন এক দশকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল।

ট্যাগ :
সর্বাধিক পঠিত

এক দশকের মধ্যে ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকটে বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ ১২:৩২:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুন ২০২৩

২০১৩ সালের পরে গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ। সরকারি তথ্য বিশ্লেষণ করে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স বলছে, বৈরি আবহাওয়া, কমতে থাকা রিজার্ভের কারণে জ্বালানি আমদানিতে ভোগান্তি ও টাকার মূল্য কমে যাওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশে জুলাই-অক্টোবরে বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকে। এরই মধ্যে আরও তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী সতর্ক করে জানিয়েছেন, আগামী দিনেও দেশে লোডশেডিং অব্যাহত থাকতে পারে।

চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ। ওয়ালমার্ট, এইচঅ্যান্ডএম এবং জারাসহ বিএএল খুচরা বিক্রেতারা ২০২৩ সালের প্রথম পাঁচ মাসে ১১৪ দিনের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বাধ্য হয়েছে। যা ২০২২ সালের ১১৩ দিনের সঙ্গে তুলনা করা হয়।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, সন্ধ্যা ও ভোরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ১০-১২ ঘণ্টা ধরে অঘোষিত বিদ্যুৎ বিভ্রাটের অভিযোগ করেছেন।

সামগ্রিক বিদ্যুৎ সরবরাহ ঘাটতি জুনের প্রথম সপ্তাহে গড়ে ১৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মে মাসের গড় ৫.২ শতাংশ ঘাটতির প্রায় তিনগুণ। সরকারি তথ্য বলছে, জ্বালানি ঘাটতিই সরবরাহ ঘাটতির প্রধান কারণ।

জাতীয় গ্রিড অপারেটরের ওয়েবসাইটের মতে, জ্বালানির অভাবে গত সোমবার দেশের গ্যাস-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১১.৫ গিগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় এক-চতুর্থাংশ এবং ৩.৪ গিগাওয়াট কয়লা-চালিত কেন্দ্রের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বন্ধ ছিল।

অপারেটরের মতে, ডিজেল এবং জ্বালানি তেলে চালিত ৭.৫ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৪০ শতাংশের বেশির কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিনোপেক, ইন্ডিয়ান অয়েলকে (আইওসি) অর্থ দিতে না পারার বিষয়ে সতর্ক করে এপ্রিলের শেষের দিকে এবং মে মাসের শুরুতে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পেট্রোলিয়াম সংস্থা। মার্কিন ডলারের ঘাটতির পাশাপাশি জ্বালানি তেলের মজুদ উদ্বেগজনকভাবে কমছে। মে মাস পর্যন্ত ১২ মাসে টাকার মূল্য এক ষষ্ঠাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে এবং এপ্রিলে ডলারের রিজার্ভ এক তৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়ে সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে।

গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বাড়ায় কয়লা এবং তরল জ্বালানিচালিত কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। এতে গড় বিদ্যুতের দামও বেড়েছে। স্থানীয় মজুদ কমে যাওয়ায় এবং বিশ্বব্যাপী সরবরাহকারীদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির অভাবে ২০২২ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার হ্রাস পেয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম ব্যাপকভাবে বাড়ে। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় দাম কমে আসায় তার ব্যবহার বেড়েছে। বাংলাদেশ সম্প্রতি কাতারএনার্জির সাথে ১৫ বছরের একটি এলএনজি চুক্তি করেছে।

২০২৩ সালের প্রথম পাঁচ মাসে বিদ্যুতের জন্য কয়লার ওপর নির্ভরতা বেড়ে ১৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, ২০২২ সালে যা ছিল ৮ শতাংশ। ২০২২ সালে জ্বালানি তেল ও ডিজেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন এক দশকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল।