০৫:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
আজ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে অংশীজন সংলাপ শুরু দেশে সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের আত্মহননের ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাড়ে ১৩ হাজার শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা খুলনায় পলিথিন জব্দ, তিন প্রতিষ্ঠানকে অর্থদণ্ড ২৬টি রাজনৈতিক দল জুলাই সনদ পর্যালোচনা করে মতামত জমা দিল বিমানবন্দর এলাকায় ট্রেন লাইনচ্যুত, ঢাকামুখী ট্রেনের চলাচল ব্যাহত কুলাউড়ায় চক্ষু হাসপাতালে আমেরিকান ফ্যাকো মেশিনের উদ্বোধন এবারের ডাকসু নির্বাচনে ভোট গ্রহণ ৮ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তে বিজিবির অভিযানে মাদকসহ দুই যুবক আটক আইন সংশোধনে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন সম্ভব: সিইসি

দেশে সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের আত্মহননের ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে

গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রবণতার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, পেশাগত চাপ, পারিবারিক সমস্যা এবং মানসিক স্বাস্থ্যজনিত বিভিন্ন সংকটকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রবীণ সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারও তার জীবন-ending সিদ্ধান্ত নিয়ে এই হতাশার গল্পকে নতুন করে গভীর করে তুলেছেন। একটি খোলামেলা চিঠি রেখে তিনি নিজের পারিবারিক দুর্দশা, পেশাগত অসুবিধা এবং অর্থনৈতিক সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন, যা তাঁর আত্মহত্যার পেছনের কারণ হিসেবে ভাবা হচ্ছে। ৭১ বছর বয়সী এই সাংবাদিক ‘আজকের পত্রিকা’য়ে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ছিলেন। তাঁর পেশাগত জীবনে তিনি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কলাম লিখেছেন এবং সাংগঠনিক দায়িত্বে ছিলেন। তবে শেষের দিনগুলোতে অর্থনৈতিক সংকট এবং ব্যক্তিগত পারিবারিক সমস্যা তাঁকে গভীর হতাশার দিকে নিয়ে যায়। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায়, তাঁর অবস্থা এতটাই দুর্বল ছিল যে, তিনি নিজের জীবনের শেষ অনুভূতি প্রকাশ করতে চিঠিও লিখেছিলেন। আত্মহত্যার কারণ হিসেবে জানা গেছে, পারিবারিক দুঃখ, স্বাস্থ্যের অবনতি, সন্তানের উচ্চতর পরীক্ষায় ফেল, ছেলের চাকরি না পাওয়া এবং নিজস্ব অর্থের দৈন্যতা ছিল। এর ফলে তিনি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। এরকম ঘটনা একে একে বেড়ে চলেছে, যেখানে পেশাগত ও আর্থিক চাপের পাশাপাশি পারিবারিক অস্থিরতা আত্মহত্যার প্রধান কারণ হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। ২০১২ সালে বিশিষ্ট সাংবাদিক মিনার মাহমুদ, ২০১৮ সালে ব্যাংক কর্মকর্তা সুমন জাহিদ, ২০২৩ সালে অর্পিতা কবির, ২০২২ সালে শবনম শারমিন ও সোহারানা তুলি এবং সাম্প্রতিক সময়ে সকলের স্বজন এবং সহকর্মীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনাগুলোর ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর পেছনে হতাশা, মানসিক রোগ, পারিবারিক কলহ, কর্মস্থলে অস্থিরতা এবং আর্থিক সংকটের গল্প উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই প্রবণতা নিরসনে রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব রয়েছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হতাশাগ্রস্ত মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিষণ্নতা, মানসিক চাপ বা আর্থিক সংকটের কারণে আত্মহত্যার পথে হাঁটেন। তারা আরও বলছেন, এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন সহানুভূতি, মানসিক সহায়তা ও সামাজিক নিরাপত্তা বাড়ানো। এছাড়াও, সাংবাদিক সম্মেলন এবং শক্তিশালী পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের ভূমিকা অপরিহার্য। তারা মন্তব্য করেছেন, ‘সাংবাদিকদের কল্যাণের জন্য রাষ্ট্রের সক্রিয় উদ্যোগ দরকার। তাঁদের জন্য ন্যায্য ও সুসজ্জিত মানসিক স্বাস্থ্য সেবা, অর্থনৈতিক সম্মাননা এবং পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এর মাধ্যমে এই প্রবণতাকে কমানো সম্ভব।’ এই পরিস্থিতি বিকাশে সচেতন ও সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের আত্মহননের হার কমে আসল আশার আলো জ্বলে উঠতে পারে।

ট্যাগ :
সর্বাধিক পঠিত

আজ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে অংশীজন সংলাপ শুরু

দেশে সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের আত্মহননের ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে

প্রকাশিতঃ ১০:৪৬:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫

গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রবণতার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, পেশাগত চাপ, পারিবারিক সমস্যা এবং মানসিক স্বাস্থ্যজনিত বিভিন্ন সংকটকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রবীণ সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারও তার জীবন-ending সিদ্ধান্ত নিয়ে এই হতাশার গল্পকে নতুন করে গভীর করে তুলেছেন। একটি খোলামেলা চিঠি রেখে তিনি নিজের পারিবারিক দুর্দশা, পেশাগত অসুবিধা এবং অর্থনৈতিক সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন, যা তাঁর আত্মহত্যার পেছনের কারণ হিসেবে ভাবা হচ্ছে। ৭১ বছর বয়সী এই সাংবাদিক ‘আজকের পত্রিকা’য়ে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ছিলেন। তাঁর পেশাগত জীবনে তিনি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কলাম লিখেছেন এবং সাংগঠনিক দায়িত্বে ছিলেন। তবে শেষের দিনগুলোতে অর্থনৈতিক সংকট এবং ব্যক্তিগত পারিবারিক সমস্যা তাঁকে গভীর হতাশার দিকে নিয়ে যায়। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায়, তাঁর অবস্থা এতটাই দুর্বল ছিল যে, তিনি নিজের জীবনের শেষ অনুভূতি প্রকাশ করতে চিঠিও লিখেছিলেন। আত্মহত্যার কারণ হিসেবে জানা গেছে, পারিবারিক দুঃখ, স্বাস্থ্যের অবনতি, সন্তানের উচ্চতর পরীক্ষায় ফেল, ছেলের চাকরি না পাওয়া এবং নিজস্ব অর্থের দৈন্যতা ছিল। এর ফলে তিনি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। এরকম ঘটনা একে একে বেড়ে চলেছে, যেখানে পেশাগত ও আর্থিক চাপের পাশাপাশি পারিবারিক অস্থিরতা আত্মহত্যার প্রধান কারণ হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। ২০১২ সালে বিশিষ্ট সাংবাদিক মিনার মাহমুদ, ২০১৮ সালে ব্যাংক কর্মকর্তা সুমন জাহিদ, ২০২৩ সালে অর্পিতা কবির, ২০২২ সালে শবনম শারমিন ও সোহারানা তুলি এবং সাম্প্রতিক সময়ে সকলের স্বজন এবং সহকর্মীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনাগুলোর ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর পেছনে হতাশা, মানসিক রোগ, পারিবারিক কলহ, কর্মস্থলে অস্থিরতা এবং আর্থিক সংকটের গল্প উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই প্রবণতা নিরসনে রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব রয়েছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হতাশাগ্রস্ত মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিষণ্নতা, মানসিক চাপ বা আর্থিক সংকটের কারণে আত্মহত্যার পথে হাঁটেন। তারা আরও বলছেন, এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন সহানুভূতি, মানসিক সহায়তা ও সামাজিক নিরাপত্তা বাড়ানো। এছাড়াও, সাংবাদিক সম্মেলন এবং শক্তিশালী পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের ভূমিকা অপরিহার্য। তারা মন্তব্য করেছেন, ‘সাংবাদিকদের কল্যাণের জন্য রাষ্ট্রের সক্রিয় উদ্যোগ দরকার। তাঁদের জন্য ন্যায্য ও সুসজ্জিত মানসিক স্বাস্থ্য সেবা, অর্থনৈতিক সম্মাননা এবং পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এর মাধ্যমে এই প্রবণতাকে কমানো সম্ভব।’ এই পরিস্থিতি বিকাশে সচেতন ও সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের আত্মহননের হার কমে আসল আশার আলো জ্বলে উঠতে পারে।