বাংলাদেশে তীব্র গরমের কারণে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। বিশ্বব্যাংকের নতুন এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র ২০২৪ সালে বাংলাদেশে তাপজনিত কারণে প্রায় ২৫ কোটি কর্মদিবস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে দেশের জিডিপির প্রায় ০.৩ থেকে ০.৪ শতাংশ অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে, অর্থাৎ টাকার অংকে এ ক্ষতির পরিমাণ ছুঁইছুঁই ২১ হাজার কোটি টাকা।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর এক হোটেলে ‘অ্যান আনসাসটেইনেবল লাইফ: দ্য ইমপ্যাক্ট অব হিট অন হেলথ অ্যান্ড দ্য ইকোনমি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে জানানো হয়, যখন ঊষর তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয়, তখন কর্মীদের উৎপাদনশীলতা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যায়, যার প্রভাব পড়ে দেশের অর্থনীতির উপর। এ কারণে অধিক গরমে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, অবসাদসহ মানসিক সমস্যা যেমন বিষণ্নতা ও উদ্বেগ বাড়ছে।
প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, ১৯৭৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার ব্যবচ্ছেদ, সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ক্রমবৃদ্ধি এবং বিভিন্ন জরিপের ফলাফল। এর ফলাফলে দেখা গেছে, ১৯৮০ সালের পর থেকে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গড়ে ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু অনভূত তাপমাত্রার वृद्धि ঘটে ৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর ফলে ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্লেষণে আরও জানানো হয়েছে, রাজধানী ঢাকা দেশের অন্য অঞ্চলের তুলনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ১৯৮০ সাল থেকে ঢাকার তাপমাত্রা গড়ে ১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশের গ Durchschnittের চেয়ে প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি।
বিশ্বব্যাংক বলছে, তাদের এই গবেষণা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গরমের নেতিবাচক প্রভাব ও উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়ার বিষয়টি বিশ্লেষণ করেছে। জরিপে দেখা গেছে, দীর্ঘমেয়াদি কাশির সমস্যা বেশির ভাগ মানুষই ভোগেন, যেখানে শীতের তুলনায় গ্রীষ্মে কাশির হার দ্বিগুণ হয়। অর্ধবয়সী ও প্রবীনদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠলে, দীর্ঘমেয়াদি কাশির হার অনেকখানি বাড়ে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রীষ্মে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার শীতের চেয়ে বেশি, যা মূলত নারী ও শিশুরা বেশি ভোগে। ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় ডায়ারিয়ার সম্ভাবনা প্রায় অর্ধেকে প্রবীণ হয়।
উচ্চ তাপমাত্রার কারণে মানসিক স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শীতের তুলনায় গ্রীষ্মে বিষণ্নতা ও উদ্বেগের হার বেড়ে গেছে। স্পষ্টতই, গরমের প্রভাব শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যে নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবেশমন্ত্রী উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান উপদেষ্টা মো. সায়েদুর রহমান, বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশনস অফিসার ইফফাত মাহমুদ, সিনিয়র হেলথ স্পেশালিস্ট ওয়ামেক এ. রাজা, সহ অন্যান্যরা। প্রতিবেদনটি বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা দিয়ে দেশের উষ্ণায়নের প্রভাবের চিত্র স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে।