কৃষি নির্ভর মেহেরপুর জেলার প্রাণকেন্দ্র বামন্দী ইউনিয়নে অবস্থিত এই পশু হাসপাতালটি ১৯৯১-১৯৯২ সালে নির্মাণ করা হয়। তখন থেকে এটি দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় ধরে ব্যবহার বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতালটি পরিত্যক্ত হয়ে গেছে, এবং দীর্ঘদিন ধরে এখানে কোনো প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী চোখে পড়েননি। ফলে, পশু চিকিৎসার প্রয়োজন হলে khamaris ও ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যেতে, যেখানে ব্যয়ও বাড়ে এবং কষ্ট আরও বেড়ে যায়।
অভিজ্ঞ স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, হাসপাতালটির প্রবেশপথের সামনে এখন বালি দিয়ে তৈরি হয়েছে বিশাল একটি স্তূপ। দিনভর সেখানে বালি ব্যবসা চললেও রাতে তা পরিণত হয় মাদক ব্যবসায়ীদের জগন্নাথস্থল হিসেবে। এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত এই অচলাবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ও পশু চিকিৎসার সুবিধা নিশ্চিত করতে এই হাসপাতালটি পুনরায় চালু করা জরুরি।
বামন্দী পশুহাটের মালিকরা বলছেন, এই হাটটি জেলার অন্যতম করদাতা। সেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার গরু, ছাগল আসা-যাওয়া করে, এবং এই পশুদের জন্য দ্রুত পশু হাসপাতালে সেবা গুরুত্বপূর্ণ।
গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তারা দ্রুতপত্র প্রস্তুত করে এই বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন।
স্থানীয় মানুষজন যেমন জনি আহমেদ বলছেন, ‘আমি পঁচিশ বছর ধরে এই এলাকায় বাস করছি, আর দেখতে পাচ্ছি হাসপাতালটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। এখন শুধু ঘরটিই রয়ে গেছে, কোনো দরজা-জানালা নেই, আর পশু চিকিৎসার সরঞ্জামগুলোও হারিয়ে গেছে। বিড়ম্বনা বাড়ছে, কারণ এখন এখানে বালি দিয়ে ব্যবসা হয় এবং রাত্রে তা মাদক বিক্রিয়ার কেন্দ্র হয়ে গেছে। দ্রুত এই অবস্থা থেকে মুক্তি চাচ্ছি।’
বামন্দী ব্যবসায়ীসমিতির সভাপতি ও বামন্দী পশুহাটের ইজারাদার মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘হাসপাতালটি বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। আমরা জোর দাবি জানাই, এর পুনঃচালু প্রয়োজন। কারণ, এই হাট থেকে জেলা भरেই আমরা সবচেয়ে বেশি কর দেন, এবং আমাদের হাটে প্রতিদিন বর্হি গরু-ছাগল আসে। পশু যদি অসুস্থ হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসা সুবিধা না থাকলে ব্যবসায়ীদের ও খামারিদের খুবই কষ্ট হয়।’
খামারি আ. জাব্বার বলেন, ‘আমাদের ব্যবসায় গরুর সংখ্যা প্রচুর। কিন্তু পশু অসুস্থ হলে জনসম্মুখে বা উপজেলা প্রাণিসম্পদে চিকিৎসা নিতে হয়, যা অনেক কষ্টের। আমরা চাই, এই হাসপাতালটি দ্রুত চালু হোক, যাতে আমাদের পশু চিকিৎসার জন্য বেশি খরচ করে দূরদূরান্তে যেতে না হয়।’
স্থানীয় পশু চিকিৎসক ইউসুফ আলীও বলেন, ‘আমরা এই জমি ক্রয় করেছি যাতে প্রাণীগুলোর উন্নত চিকিৎসা সেবা দেয়া যায়। পরে উপজেলা পরিষদের অর্থে ঘর নির্মিত হয়, কিন্তু দীর্ঘদিন ব্যবহারের অভাবে সেটিও নষ্ট হয়ে গেছে। আমি চাই এই হাসপাতালটি আবার চালু হয়, যেন এলাকার পশুর প্রয়োজনে দ্রুত সেবা পাওয়া যায়।’
গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মোত্তালেব আলি বলেন, ‘বামন্দী উপকেন্দ্রের এই পশু হাসপাতালটি প্রায় ১৯৯০ বা ১৯৯১ সালে নির্মিত হয়। দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় পড়ে থাকার কারণে এটি অকেজো হয়ে গেছে। বর্তমানে আমরা কাজ শুরু করেছি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে দ্রুত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবো এবং এই কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করব।’
তিনি আরও জানান, ‘সারেজমিনে দেখা গেছে, সেখানে তিনটি রুমের একটি ঘর ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই। জানালা, দরজা বা চিকিৎসার সরঞ্জামগুলোও এখানে চোখে পড়েনি। এখন আমরা এই পরিস্থিতির উন্নতির জন্য কাজ করছি এবং বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করছি।’