০২:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
শুক্রবারের মধ্যে জুলাই সংবিধানের চূড়ান্ত রোডম্যাপ প্রকাশের আশা স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট নভেম্বরের মধ্যে চায় জামায়াত হাসিনার বিরুদ্ধে আজ সাক্ষ্য দেবেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এনবিআরের সিদ্ধান্ত: এমপি কোটার ৩০ বিলাসবহুল গাড়ি নিলামে বিক্রির পরিবর্তে হস্তান্তর পাঁচ দিন ধরে সাগরে ভাসমান ২৬ জেলেকে উদ্ধার করলো নৌ বাহিনী মেনন-পলক-দস্তগীরসহ চারজনের বিরুদ্ধে নতুন মামলায় গ্রেফতার তীব্র যানজটে আটকা পড়ে সড়ক উপদেষ্টা মোটরসাইকেলে গন্তব্যে পৌঁছেছেন ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের পাশে আবর্জনার স্তূপ ঢেকে দেওয়া হলো বিশিষ্ট উপদেষ্টার আগমনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ: দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রত্যয়

জনপ্রিয়তার শীর্ষে বিএনপি: জরিপের নতুন চিত্র

আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের মূল রাজনৈতিক পরিচিতি ও পরিচালনা জন্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে নির্বাচন কমিশন। এই সময়ে কোনো দিক থেকে রাজনীতির মাঠে তৎপরতা একটু বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কারণ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের শক্তি বাড়ানোর জন্য সচেষ্ট। এর মধ্যেই ভোটারদের মতামত জানার জন্য বেসরকারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনোভেশন কনসাল্টিং একটি সম্প্রতি জরিপ চালিয়েছে, যার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এই জরিপের নাম ‘পিপলস ইলেকশন পালস সার্ভে রাউন্ড টু’। আজ বুধবার, রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আর্কাইভ ভবনে এক অনুষ্ঠানমাধ্যমে এই জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রুবাইয়াত সরওয়ার। এটি গণনার জন্য দেশের ৮টি বিভাগের ৬৪টি জেলা থেকে সংগৃহীত হয়েছে ৯ হাজার ৩৯৮টি পরিবারের মোট ১০ হাজার ৪১৩জন ভোটারের মতামত। জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, নির্বাচনকালীন সময়ে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। সকল সমীক্ষায় দেখা গেছে, সমর্থনকারীর মধ্যে ৪১.৩০ শতাংশ ভোটার তাদের পক্ষেও ভাবছেন। এরপর রয়েছে জামায়াতে ইসলামি, যাদের সমর্থনের হার ৩০.৩০ শতাংশ। গত বছর আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে পতনের পর এই অঙ্কে আরও পিছিয়ে পড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, যার ভোট শতাংশ ১৮.৮০। নতুনভাবে অংশ নেওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এসেছে চতুর্থ স্থানে, তাদের সমর্থন ৪.১০ শতাংশ। ভোটারদের মতামত বলছে, ভবিষ্যতের সরকার গঠনে বিএনপির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটার মনে করেন, বিএনপি সরকার গঠন করবে। অন্যদিকে, ২৩.৩ শতাংশ ভোটার মনে করেন জামায়াত সম্ভবত ভিত্তি স্থাপন করবে। আর ১২.১ শতাংশ মনে করেন আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। নতুন দল এনসিপির সরকারের সম্ভাবনাও কিছু ভোটারের কাছে আছে—৩.৮ শতাংশ। জরিপের আরেকটি অংশে দেখা গেছে, ৬৫.৫ শতাংশ ভোটার তাদের প্রার্থী ও প্রতীকের ভিত্তিতে ভোট দেওয়ার প্রবণতা অবলম্বন করতে চায়, যেখানে মাত্র ১৪.৭ শতাংশ মানুষ প্রতীকের উপর ভিত্তি করে ভোট দেবেন। স্থানীয় রাজনীতিতে দলের কার্যক্রমের সন্তুষ্টির হারও জরিপে উঠে এসেছে। দেখা গেছে, সাধারণভাবে অন্যান্য দলের তুলনায় জামায়াতের কার্যক্রমে ভোটাররা বেশি সন্তুষ্ট। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এবং নারীদের মধ্যে এই সন্তুষ্টি বেশি। বিএনপি, জামায়াত এবং এনসিপির কার্যক্রমে সন্তুষ্ট ভোটার হার যথাক্রমে ৮.২, ১৩.৭ ও ৯.১ শতাংশ। এছাড়াও জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, ভোটারদের একটি বড় অংশ, প্রায় ৪৫.৫৮ শতাংশ, মনে করেন, আওয়ামী লীগ তাদের বিচার হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন ও অংশগ্রহণ ঠিক নয়। অন্যদিকে, প্রায় একই হার ৪৫.৭৯ শতাংশ, মনে করেন, সমগ্র দলগুলোর জন্য নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকা উচিত। যদি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ না করে, তবে তাদের ভোটারদের একটি বড় অংশ অন্য দলের পক্ষে ঝোঁক দেখাতে পারে। জরিপে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রায় ২০ শতাংশ ভোটার বিএনপিকে, ১৪.৮ শতাংশ জামায়াতকে এবং ২.১ শতাংশ এনসিপিকে ভোট দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে, বেশ কিছু ভোটার মনে করেন, সরকারের জন্য সবচেয়ে যোগ্য দল হলো বিএনপি, যার হার ৩৯.১ শতাংশ। জামায়াতের জন্য এই হার ২৮.১ শতাংশ, আর এনসিপির জন্য ৪.৯ শতাংশ। ভিশন অনুযায়ী, ভবিষ্যত সরকারের জন্য অপেক্ষা করছে মূল দাবি—পুলিশ সংস্কার, দুর্নীতি রোধ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্বচ্ছতা। তবে, বেশিরভাগ ভোটার এখনো এই প্রশ্নে নিরপেক্ষ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। এই জরিপ দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও জনগণের মনোভাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ চিত্র তুলে ধরছে। উল্লেখ্য, গত মার্চ মাসে একই সংস্থা একটি জরিপ পরিচালনা করেছিল, যেখানে সেপ্টেম্বরের ফলাফলের সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে, বিএনপির অংশগ্রহণ শেয়ার ০.৪০ শতাংশ কমে গেছে, জামায়াতের ১.৩ শতাংশ এবং আওয়ামী লীগের ৪.৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি, বিভাগ অনুসারে চিত্র বদলে গেছে; বিএনপি ছয়টি বিভাগে এগিয়ে থাকলেও, জামায়াত রংপুরে এবং আওয়ামী লীগ বরিশালে এগিয়ে আছে। এই সমীক্ষার ফলে বোঝা যায়, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি ও জামায়াতের উপস্থিতি ও প্রভাব কতখানি, এবং কোনো দল কতটুকু সমর্থন ও গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে।

ট্যাগ :
সর্বাধিক পঠিত

জনপ্রিয়তার শীর্ষে বিএনপি: জরিপের নতুন চিত্র

প্রকাশিতঃ ০৬:০৭:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের মূল রাজনৈতিক পরিচিতি ও পরিচালনা জন্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে নির্বাচন কমিশন। এই সময়ে কোনো দিক থেকে রাজনীতির মাঠে তৎপরতা একটু বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কারণ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের শক্তি বাড়ানোর জন্য সচেষ্ট। এর মধ্যেই ভোটারদের মতামত জানার জন্য বেসরকারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনোভেশন কনসাল্টিং একটি সম্প্রতি জরিপ চালিয়েছে, যার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এই জরিপের নাম ‘পিপলস ইলেকশন পালস সার্ভে রাউন্ড টু’। আজ বুধবার, রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আর্কাইভ ভবনে এক অনুষ্ঠানমাধ্যমে এই জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রুবাইয়াত সরওয়ার। এটি গণনার জন্য দেশের ৮টি বিভাগের ৬৪টি জেলা থেকে সংগৃহীত হয়েছে ৯ হাজার ৩৯৮টি পরিবারের মোট ১০ হাজার ৪১৩জন ভোটারের মতামত। জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, নির্বাচনকালীন সময়ে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। সকল সমীক্ষায় দেখা গেছে, সমর্থনকারীর মধ্যে ৪১.৩০ শতাংশ ভোটার তাদের পক্ষেও ভাবছেন। এরপর রয়েছে জামায়াতে ইসলামি, যাদের সমর্থনের হার ৩০.৩০ শতাংশ। গত বছর আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে পতনের পর এই অঙ্কে আরও পিছিয়ে পড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, যার ভোট শতাংশ ১৮.৮০। নতুনভাবে অংশ নেওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এসেছে চতুর্থ স্থানে, তাদের সমর্থন ৪.১০ শতাংশ। ভোটারদের মতামত বলছে, ভবিষ্যতের সরকার গঠনে বিএনপির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটার মনে করেন, বিএনপি সরকার গঠন করবে। অন্যদিকে, ২৩.৩ শতাংশ ভোটার মনে করেন জামায়াত সম্ভবত ভিত্তি স্থাপন করবে। আর ১২.১ শতাংশ মনে করেন আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। নতুন দল এনসিপির সরকারের সম্ভাবনাও কিছু ভোটারের কাছে আছে—৩.৮ শতাংশ। জরিপের আরেকটি অংশে দেখা গেছে, ৬৫.৫ শতাংশ ভোটার তাদের প্রার্থী ও প্রতীকের ভিত্তিতে ভোট দেওয়ার প্রবণতা অবলম্বন করতে চায়, যেখানে মাত্র ১৪.৭ শতাংশ মানুষ প্রতীকের উপর ভিত্তি করে ভোট দেবেন। স্থানীয় রাজনীতিতে দলের কার্যক্রমের সন্তুষ্টির হারও জরিপে উঠে এসেছে। দেখা গেছে, সাধারণভাবে অন্যান্য দলের তুলনায় জামায়াতের কার্যক্রমে ভোটাররা বেশি সন্তুষ্ট। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এবং নারীদের মধ্যে এই সন্তুষ্টি বেশি। বিএনপি, জামায়াত এবং এনসিপির কার্যক্রমে সন্তুষ্ট ভোটার হার যথাক্রমে ৮.২, ১৩.৭ ও ৯.১ শতাংশ। এছাড়াও জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, ভোটারদের একটি বড় অংশ, প্রায় ৪৫.৫৮ শতাংশ, মনে করেন, আওয়ামী লীগ তাদের বিচার হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন ও অংশগ্রহণ ঠিক নয়। অন্যদিকে, প্রায় একই হার ৪৫.৭৯ শতাংশ, মনে করেন, সমগ্র দলগুলোর জন্য নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকা উচিত। যদি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ না করে, তবে তাদের ভোটারদের একটি বড় অংশ অন্য দলের পক্ষে ঝোঁক দেখাতে পারে। জরিপে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রায় ২০ শতাংশ ভোটার বিএনপিকে, ১৪.৮ শতাংশ জামায়াতকে এবং ২.১ শতাংশ এনসিপিকে ভোট দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে, বেশ কিছু ভোটার মনে করেন, সরকারের জন্য সবচেয়ে যোগ্য দল হলো বিএনপি, যার হার ৩৯.১ শতাংশ। জামায়াতের জন্য এই হার ২৮.১ শতাংশ, আর এনসিপির জন্য ৪.৯ শতাংশ। ভিশন অনুযায়ী, ভবিষ্যত সরকারের জন্য অপেক্ষা করছে মূল দাবি—পুলিশ সংস্কার, দুর্নীতি রোধ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্বচ্ছতা। তবে, বেশিরভাগ ভোটার এখনো এই প্রশ্নে নিরপেক্ষ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। এই জরিপ দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও জনগণের মনোভাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ চিত্র তুলে ধরছে। উল্লেখ্য, গত মার্চ মাসে একই সংস্থা একটি জরিপ পরিচালনা করেছিল, যেখানে সেপ্টেম্বরের ফলাফলের সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে, বিএনপির অংশগ্রহণ শেয়ার ০.৪০ শতাংশ কমে গেছে, জামায়াতের ১.৩ শতাংশ এবং আওয়ামী লীগের ৪.৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি, বিভাগ অনুসারে চিত্র বদলে গেছে; বিএনপি ছয়টি বিভাগে এগিয়ে থাকলেও, জামায়াত রংপুরে এবং আওয়ামী লীগ বরিশালে এগিয়ে আছে। এই সমীক্ষার ফলে বোঝা যায়, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি ও জামায়াতের উপস্থিতি ও প্রভাব কতখানি, এবং কোনো দল কতটুকু সমর্থন ও গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে।