০২:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
শুক্রবারের মধ্যে জুলাই সংবিধানের চূড়ান্ত রোডম্যাপ প্রকাশের আশা স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট নভেম্বরের মধ্যে চায় জামায়াত হাসিনার বিরুদ্ধে আজ সাক্ষ্য দেবেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এনবিআরের সিদ্ধান্ত: এমপি কোটার ৩০ বিলাসবহুল গাড়ি নিলামে বিক্রির পরিবর্তে হস্তান্তর তীব্র যানজটে আটকা পড়ে সড়ক উপদেষ্টা মোটরসাইকেলে গন্তব্যে পৌঁছেছেন ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের পাশে আবর্জনার স্তূপ ঢেকে দেওয়া হলো বিশিষ্ট উপদেষ্টার আগমনের জন্য পাঁচ দিন ধরে সাগরে ভাসমান ২৬ জেলেকে উদ্ধার করলো নৌ বাহিনী মেনন-পলক-দস্তগীরসহ চারজনের বিরুদ্ধে নতুন মামলায় গ্রেফতার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ: দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রত্যয়

চট্টগ্রামে পরিকল্পিত প্রকল্পের মাধ্যমে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনে বড় পরিবর্তন

চট্টগ্রাম জেলা বাংলাদেশের এক গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থনৈতিকভাবে উত্তম স্থান। এখানে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ানো ছিল বহু বছর ধরেই। তবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এই পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নিরাপদ পানি, স্যাঁটপায়ন সুবিধা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, যা স্থানীয় জনগণের জীবনমানের উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটিয়েছে। উপরন্তু, এসব উদ্যোগ জেলার জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

সরকারের প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাবমার্সিবল পাম্পযুক্ত গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে, যাতে জনগণ সুপেয় পানির সহজলভ্যতা নিশ্চিত হয়। বিশেষ করে, জলস্তর নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলের মাধ্যমে পানি উত্তোলন কঠিন হয়ে পড়েছিল। ফলে অনেক এলাকায় পানিবাহিত রোগের সমস্যা বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর আধুনিক প্রযুক্তি Hydraulic Rig পদ্ধতি ব্যবহার করে গভীর নলকূপ স্থাপন করছে। এর ফলে জনগণের জন্য নিরাপদ ও সুপেয় পানির অভাব কিছুটা পূরণ হয়েছে।

বিশেষ করে সীতাকুণ্ড উপজেলার ক্ষেত্রে, যেখানে মাটির নিচে পাথরের স্তর থাকার কারণে সাধারণ নলকূপ স্থাপন সম্ভব ছিল না, সেখানে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নত উপায়ে গভীর নলকূপ বসানো হচ্ছে। এর ফলে এসব এলাকার মানুষ পানির সংকট থেকে কিছুটা মুক্তি পেয়েছেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলায় কমিউনিটি ও রুরাল ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে হাজার হাজার পরিবারের প্রতিদিনের পানির চাহিদা পূরণ হচ্ছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পিইডিপি-৪ প্রকল্পের আওতায় বহু বিদ্যালয়ে ওয়াশব্লক ও গভীর নলকূপ স্থাপন হচ্ছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা বাড়ি থেকে পানি সংগ্রহের প্রয়োজন কমে গেছে এবং শিক্ষার মান আরও উন্নত হয়েছে। পাহাড়ি এলাকা ও দ্বীপ সন্দ্বীপেও কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ওয়াশব্লক ও গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে, যাতে শিশু ও যুবকদের জন্য স্যানিটেশন সুযোগ এবং পরিষ্কার পানি নিশ্চিত হয়।

মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগণের জন্য ১৪,৭০০টি টুইনপিট ল্যাট্রিন নির্মাণ করা হয়েছে, যা জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। পাশাপাশি নানা পর্যায়ে পয়ঃপ্রয়োজনায় ব্যবহৃত পানির জন্য কোটি কোটি লিটার পানি সরবরাহের পরিকল্পনা চলছে। প্রতিটি ছোট স্কিমে ৩০ থেকে ৪০ পরিবারের জন্য পানি নিশ্চিত করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি, নতুন কমিউনিটি ও পাবলিক টয়লেট, ক্লিনিকের টয়লেট ও হ্যান্ড ওয়াশিং বেসিন নির্মাণের মাধ্যমে স্যানিটেশন অবকাঠামো উন্নত করা হচ্ছে।

বৃষ্টির পানি সংগ্রহের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ও ক্যাচমেন্ট এরিয়া তৈরি করা হয়েছে। এই প্রকল্পগুলো স্থানীয় পানির সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে পানির সংকট কমাতে সহায়তা করছে।

৩২টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে নানা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সাতকানিয়া পৌরসভায় কমিউনিটি টয়লেট, ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও ড্রেন নির্মাণের মাধ্যমে জনসংখ্যার স্যানিটেশন সুবিধা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাঁশখালী ও চন্দনাইশ পৌরসভায় আধুনিক ও উন্নত টয়লেট নির্মাণের পাশাপাশি ড্রেন নির্মাণের কাজ চলমান। সব মিলিয়ে, চট্টগ্রাম জেলা এখন জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সুস্থ ও নিরাপদ জীবনের আশা জাগিয়ে তুলছে। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন ইতিমধ্যেই জেলার জীবনযাত্রার মানের ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে, যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

ট্যাগ :
সর্বাধিক পঠিত

চট্টগ্রামে পরিকল্পিত প্রকল্পের মাধ্যমে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনে বড় পরিবর্তন

প্রকাশিতঃ ০৬:১২:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

চট্টগ্রাম জেলা বাংলাদেশের এক গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থনৈতিকভাবে উত্তম স্থান। এখানে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ানো ছিল বহু বছর ধরেই। তবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এই পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নিরাপদ পানি, স্যাঁটপায়ন সুবিধা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, যা স্থানীয় জনগণের জীবনমানের উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটিয়েছে। উপরন্তু, এসব উদ্যোগ জেলার জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

সরকারের প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাবমার্সিবল পাম্পযুক্ত গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে, যাতে জনগণ সুপেয় পানির সহজলভ্যতা নিশ্চিত হয়। বিশেষ করে, জলস্তর নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলের মাধ্যমে পানি উত্তোলন কঠিন হয়ে পড়েছিল। ফলে অনেক এলাকায় পানিবাহিত রোগের সমস্যা বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর আধুনিক প্রযুক্তি Hydraulic Rig পদ্ধতি ব্যবহার করে গভীর নলকূপ স্থাপন করছে। এর ফলে জনগণের জন্য নিরাপদ ও সুপেয় পানির অভাব কিছুটা পূরণ হয়েছে।

বিশেষ করে সীতাকুণ্ড উপজেলার ক্ষেত্রে, যেখানে মাটির নিচে পাথরের স্তর থাকার কারণে সাধারণ নলকূপ স্থাপন সম্ভব ছিল না, সেখানে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নত উপায়ে গভীর নলকূপ বসানো হচ্ছে। এর ফলে এসব এলাকার মানুষ পানির সংকট থেকে কিছুটা মুক্তি পেয়েছেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলায় কমিউনিটি ও রুরাল ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে হাজার হাজার পরিবারের প্রতিদিনের পানির চাহিদা পূরণ হচ্ছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পিইডিপি-৪ প্রকল্পের আওতায় বহু বিদ্যালয়ে ওয়াশব্লক ও গভীর নলকূপ স্থাপন হচ্ছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা বাড়ি থেকে পানি সংগ্রহের প্রয়োজন কমে গেছে এবং শিক্ষার মান আরও উন্নত হয়েছে। পাহাড়ি এলাকা ও দ্বীপ সন্দ্বীপেও কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ওয়াশব্লক ও গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে, যাতে শিশু ও যুবকদের জন্য স্যানিটেশন সুযোগ এবং পরিষ্কার পানি নিশ্চিত হয়।

মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগণের জন্য ১৪,৭০০টি টুইনপিট ল্যাট্রিন নির্মাণ করা হয়েছে, যা জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। পাশাপাশি নানা পর্যায়ে পয়ঃপ্রয়োজনায় ব্যবহৃত পানির জন্য কোটি কোটি লিটার পানি সরবরাহের পরিকল্পনা চলছে। প্রতিটি ছোট স্কিমে ৩০ থেকে ৪০ পরিবারের জন্য পানি নিশ্চিত করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি, নতুন কমিউনিটি ও পাবলিক টয়লেট, ক্লিনিকের টয়লেট ও হ্যান্ড ওয়াশিং বেসিন নির্মাণের মাধ্যমে স্যানিটেশন অবকাঠামো উন্নত করা হচ্ছে।

বৃষ্টির পানি সংগ্রহের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ও ক্যাচমেন্ট এরিয়া তৈরি করা হয়েছে। এই প্রকল্পগুলো স্থানীয় পানির সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে পানির সংকট কমাতে সহায়তা করছে।

৩২টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে নানা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সাতকানিয়া পৌরসভায় কমিউনিটি টয়লেট, ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও ড্রেন নির্মাণের মাধ্যমে জনসংখ্যার স্যানিটেশন সুবিধা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাঁশখালী ও চন্দনাইশ পৌরসভায় আধুনিক ও উন্নত টয়লেট নির্মাণের পাশাপাশি ড্রেন নির্মাণের কাজ চলমান। সব মিলিয়ে, চট্টগ্রাম জেলা এখন জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সুস্থ ও নিরাপদ জীবনের আশা জাগিয়ে তুলছে। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন ইতিমধ্যেই জেলার জীবনযাত্রার মানের ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে, যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।