০৯:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
তীব্র যানজটে আটকা পড়ে সড়ক উপদেষ্টা মোটরসাইকেলে গন্তব্যে পৌঁছেছেন ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের পাশে আবর্জনার স্তূপ ঢেকে দেওয়া হলো বিশিষ্ট উপদেষ্টার আগমনের জন্য পাঁচ দিন ধরে সাগরে ভাসমান ২৬ জেলেকে উদ্ধার করলো নৌ বাহিনী মেনন-পলক-দস্তগীরসহ চারজনের বিরুদ্ধে নতুন মামলায় গ্রেফতার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ: দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রত্যয় আওয়ামী লীগের বিচারকাজের জন্য আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু জয়পুরহাটের কানাইপুকুর গ্রামে বিরল শামুকখোল পাখির অভয়ারণ্য শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়ার প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন সিইসির মনে অবস্থান: এবারের নির্বাচন জীবনশেষের সুযোগ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিদায় সাক্ষাৎ জাতিসংঘের অভিবাসী সমন্বয়কের

মা ইলিশ ধরার ও বিক্রয় ২২ দিন নিষিদ্ধ: অক্টোবর ৪ থেকে ২৫ পর্যন্ত পুরো প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার আজ বলেছেন, এই বছরে মা ইলিশের প্রজনন এবং ডিম ছাড়া ইলিশের আহরণ থেকে রক্ষা করতে ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ব্যাপী বিশেষ কঠোর অভিযান চালানো হবে। এর মধ্যে ইলিশ ধরা, পরিবহন, বিক্রয় ও মজুতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। তিনি আজ দুপুরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান, যেখানে তিনি ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৫’ এবং দেশের ইলিশের প্রাপ্যতা, বাজারের চাহিদা, মূল্য ও রপ্তানি পরিস্থিতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

উপদেষ্টা বলেন, মা ইলিশের রক্ষা ও নিশ্চিত প্রজননের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সময়সীমা নির্ধারণে মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাসহ মৎস্যজীবীদের মতামত বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, এই প্রজনন মৌসুমে অর্থাৎ আশ্বিন মাসের ১৯ তারিখ থেকে কার্তিকের ৯ তারিখ পর্যন্ত – যা ১৪৩২ বঙ্গাব্দের অনুসারে ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত – এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। আশ্বিনী পূর্ণিমার পূর্বের চারদিন এবং অমাবস্যার পরের তিন দিন যুক্ত করে মোট ২২ দিন এই অভিযান চলবে। কারণ এই সময়গুলো ইলিশ ডিম পাড়ার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, তাই দুই পর্যায়কে অন্তর্ভুক্ত করে জোরদার করা হয়েছে। এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে “মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৫”। এতে মৎস্য বিভাগ ছাড়াও নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীসহ সব ধরনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অংশগ্রহণ করবে।

জেলেদের জন্য সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, দেশের ৩৭টি জেলা ও ১৬৫টি উপজেলার ৬ লাখ ২০ হাজার ১৪০ পরিবারের এক কোটি ছয় লাখ নম্বর পরিবারকে ফুড কোঅর্ডিনেটেড ফোরাম (ভিজিএফ) এর আওতায় ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। এর জন্য মোট প্রয়োজন হবে প্রায় ১৫ হাজার ৫০৩.৫০ মেট্রিক টন চাল। পাশাপাশি, জলসীমার বাইরে মাছ ধরা ট্রলারের অনুপ্রবেশ কড়াকড়ি ও নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নদীতে ড্রেজিং কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। একই সময় সমুদ্র, উপকূল ও মোহনায়ও মাছ ধরা বন্ধ থাকবে, যাতে মা ইলিশের প্রজনন নিশ্চিত হয়।

উপদেষ্টা আরও বলেন, বিএফআরআই এর গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৪ সালের নিষেধাজ্ঞার ফলে মোট ৫২.৫% মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছেড়েছিল, যার ফলে প্রায় ৪৪.২৫ হাজার কোটি জাটকা বা রেণু ইলিশ পরিবারের মধ্যে পৌঁছায়। এই রেণুগুলো বড় হলে ভবিষ্যতে পরিপক্ক ইলিশে পরিণত হবে।

ইলিশের আহরণের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি জানান, গত পাঁচ বছরে দেশের ইলিশ আহরণ প্রায় ১০% কমে গেছে। ২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত সময়কালে ধরা পড়া ইলিশের পরিমাণ ক্রমেই কমছে। চলতি বছর জুন থেকে জুলাই ও আগস্ট মাসে আহরণের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় যথাক্রমে ৩৩.২০% এবং ৪৭.৩১% হ্রাস পেয়েছে, যা মোট ৩৫,৯৯৩.৫০ মেট্রিক টনের কাছাকাছি। এই দুটি মাসে আহরণের পরিমাণ ২২,৯৪১.৭৮ মেট্রিক টন কমে গেছে।

অতিরিক্তভাবে তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানি অতীতের তুলনায় হ্রাস পাচ্ছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে ৮,৫৩৮.৭৭ মেট্রিক টন রপ্তানি হয়ে প্রায় ৩৫২.৪৯ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে। এরপর থেকে রপ্তানি কমতে থাকায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানির অনুমোদন ২,৪২০ মেট্রিক টন হলেও, বাস্তবে মোট রপ্তানি হচ্ছে মাত্র ৫৭৪ মেট্রিক টন, যার মূল্য দাঁড়িয়েছে ৬৮ কোটি টাকা। সামগ্রিকভাবে, অনুমোদনকৃত পর্যায়ের তুলনায় রপ্তানি হার ক্রমশ কমে আসছে।

উপদেষ্টা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মূল্য নির্ধারণ সম্পর্কে বলেন, প্রতি কেজি ইলিশের রপ্তানি মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ১২.৫০ ডলার। এই হিসাব অনুযায়ী বেনাপোল বন্দরে ৮১,৪৩৮ কেজি ইলিশের বাজার মূল্য প্রায় ১২ কোটি ৩৯ লাখ ৭ হাজার ৯১৭ টাকা। আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ২২.২৬ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে, যার মূল্য ৩ কোটি ৩৮ লাখ ১৫৪ টাকা।

ট্যাগ :
সর্বাধিক পঠিত

দৌলতপুরে মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান, অবৈধ জাল জব্দ ও জেলেকে জরিমানা

মা ইলিশ ধরার ও বিক্রয় ২২ দিন নিষিদ্ধ: অক্টোবর ৪ থেকে ২৫ পর্যন্ত পুরো প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশিতঃ ১০:৪৭:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার আজ বলেছেন, এই বছরে মা ইলিশের প্রজনন এবং ডিম ছাড়া ইলিশের আহরণ থেকে রক্ষা করতে ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ব্যাপী বিশেষ কঠোর অভিযান চালানো হবে। এর মধ্যে ইলিশ ধরা, পরিবহন, বিক্রয় ও মজুতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। তিনি আজ দুপুরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান, যেখানে তিনি ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৫’ এবং দেশের ইলিশের প্রাপ্যতা, বাজারের চাহিদা, মূল্য ও রপ্তানি পরিস্থিতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

উপদেষ্টা বলেন, মা ইলিশের রক্ষা ও নিশ্চিত প্রজননের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সময়সীমা নির্ধারণে মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাসহ মৎস্যজীবীদের মতামত বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, এই প্রজনন মৌসুমে অর্থাৎ আশ্বিন মাসের ১৯ তারিখ থেকে কার্তিকের ৯ তারিখ পর্যন্ত – যা ১৪৩২ বঙ্গাব্দের অনুসারে ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত – এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। আশ্বিনী পূর্ণিমার পূর্বের চারদিন এবং অমাবস্যার পরের তিন দিন যুক্ত করে মোট ২২ দিন এই অভিযান চলবে। কারণ এই সময়গুলো ইলিশ ডিম পাড়ার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, তাই দুই পর্যায়কে অন্তর্ভুক্ত করে জোরদার করা হয়েছে। এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে “মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৫”। এতে মৎস্য বিভাগ ছাড়াও নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীসহ সব ধরনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অংশগ্রহণ করবে।

জেলেদের জন্য সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, দেশের ৩৭টি জেলা ও ১৬৫টি উপজেলার ৬ লাখ ২০ হাজার ১৪০ পরিবারের এক কোটি ছয় লাখ নম্বর পরিবারকে ফুড কোঅর্ডিনেটেড ফোরাম (ভিজিএফ) এর আওতায় ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। এর জন্য মোট প্রয়োজন হবে প্রায় ১৫ হাজার ৫০৩.৫০ মেট্রিক টন চাল। পাশাপাশি, জলসীমার বাইরে মাছ ধরা ট্রলারের অনুপ্রবেশ কড়াকড়ি ও নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নদীতে ড্রেজিং কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। একই সময় সমুদ্র, উপকূল ও মোহনায়ও মাছ ধরা বন্ধ থাকবে, যাতে মা ইলিশের প্রজনন নিশ্চিত হয়।

উপদেষ্টা আরও বলেন, বিএফআরআই এর গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৪ সালের নিষেধাজ্ঞার ফলে মোট ৫২.৫% মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছেড়েছিল, যার ফলে প্রায় ৪৪.২৫ হাজার কোটি জাটকা বা রেণু ইলিশ পরিবারের মধ্যে পৌঁছায়। এই রেণুগুলো বড় হলে ভবিষ্যতে পরিপক্ক ইলিশে পরিণত হবে।

ইলিশের আহরণের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি জানান, গত পাঁচ বছরে দেশের ইলিশ আহরণ প্রায় ১০% কমে গেছে। ২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত সময়কালে ধরা পড়া ইলিশের পরিমাণ ক্রমেই কমছে। চলতি বছর জুন থেকে জুলাই ও আগস্ট মাসে আহরণের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় যথাক্রমে ৩৩.২০% এবং ৪৭.৩১% হ্রাস পেয়েছে, যা মোট ৩৫,৯৯৩.৫০ মেট্রিক টনের কাছাকাছি। এই দুটি মাসে আহরণের পরিমাণ ২২,৯৪১.৭৮ মেট্রিক টন কমে গেছে।

অতিরিক্তভাবে তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানি অতীতের তুলনায় হ্রাস পাচ্ছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে ৮,৫৩৮.৭৭ মেট্রিক টন রপ্তানি হয়ে প্রায় ৩৫২.৪৯ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে। এরপর থেকে রপ্তানি কমতে থাকায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানির অনুমোদন ২,৪২০ মেট্রিক টন হলেও, বাস্তবে মোট রপ্তানি হচ্ছে মাত্র ৫৭৪ মেট্রিক টন, যার মূল্য দাঁড়িয়েছে ৬৮ কোটি টাকা। সামগ্রিকভাবে, অনুমোদনকৃত পর্যায়ের তুলনায় রপ্তানি হার ক্রমশ কমে আসছে।

উপদেষ্টা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মূল্য নির্ধারণ সম্পর্কে বলেন, প্রতি কেজি ইলিশের রপ্তানি মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ১২.৫০ ডলার। এই হিসাব অনুযায়ী বেনাপোল বন্দরে ৮১,৪৩৮ কেজি ইলিশের বাজার মূল্য প্রায় ১২ কোটি ৩৯ লাখ ৭ হাজার ৯১৭ টাকা। আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ২২.২৬ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে, যার মূল্য ৩ কোটি ৩৮ লাখ ১৫৪ টাকা।