গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চালক মামুনের হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ডালুংরা ও রাঙামাটিতে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এবং এর সহযোগী সংগঠনসমূহ সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি উত্তেজিত করে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এই সংঘর্ষে তিনজন নিহত এবং 많은 সাধারণ মানুষ আহত হন।
এক বছর পরে, এই ঘটনার সত্যানুস্মরণে ইউপিডিএফ এবং তার সহযোগী সংগঠনসমূহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করে এবং আবারও সহিংসতার চেষ্টা চালায়।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) রোববার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালা এলাকায় একটি স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে সন্দেহভাজন ইউপিডিএফ সদস্য শয়ন শীলকে পরদিন সেনাবাহিনীর সহায়তায় গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে এই মামলার আইনি প্রক্রিয়া চলমান।
শয়ন শীল গ্রেফতারের পরও ইউপিডিএফ-এর অঙ্গসংগঠন পিসিপি’র নেতা উখ্যানু মারমা ‘জুম্ম ছাত্র জনতা’ ব্যানারে সেদিনই বিক্ষোভ ও মানববন্ধন ডাকে। পরের দিন খাগড়াছড়িতে হরতাল পালন হয়। অনলাইনে কিছু ব্লগার ও স্থানীয় দায়িত্বশীলরা অপপ্রচার ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রকাশ করে।
২৬ সেপ্টেম্বর, ইউপিডিএফের প্ররোচনায় এবং সামাজিক মাধ্যমে উস্কানির ফলে খাগড়াছড়িতে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। অরক্ষিত অবরোধের মধ্যে ইউপিডিএফ কর্মীরা সেনাবাহিনীর ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে, যা ফলस्वরূপ তিন সেনা সদস্য আহত হন। তবে সেনাবাহিনী ধৈর্য্য ও মানবিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এবং হিংসা বন্ধ করতে বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকে।
গতকাল, আবারো ইউপিডিএফ ও তার অঙ্গসংগঠন বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করে বাঙালিসহ সাধারণ মানুষের উপর গুলি চালায়, রাস্তা অবরোধ করে এবং নাশকতা চালায়। এর ফলে খাগড়াছড়ির পৌরসভার সঙ্গে সংঘর্ষ হয়, যা বর্তমানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রূপ নিয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ধৈর্য্য ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আজ সকালে গুইমারার রামসু বাজার এলাকায় ইউপিডিএফ ও তার অঙ্গসংগঠন আবারো ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তার অবরোধ সৃষ্টি করে সাধারণ জনগণকে উসকানি দেয়। সাড়ে ১০টার দিকে তাদের সঙ্গে বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে সশস্ত্র ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র, ইটপাটকেল ও লাঠি নিয়ে সেনাদের ওপর হামলা চালায়। এতে ৩ অফিসারসহ ১০ সেনা আহত হয়, পাশাপাশি বিজিবির গাড়িও ভাঙচুর হয় এবং সদস্যরাও আহত হন।
রামসু বাজারের পাহাড়ে ইউপিডিএফের সশস্ত্র সদস্যরা অটোমেটিক অস্ত্র দিয়ে সেনা ও সাধারণ মানুষদের লক্ষ্য করে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। সেনাবাহিনী দ্রুত সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করে এলাকাছেড়ে যায়।
পরবর্তীতে, ইউপিডিএফের দুষ্কৃতকারীরা রামসু বাজার ও আশপাশের এলাকায় অগ্নিসংযোগ করে অবস্থার চরম অবনতি ঘটায়। এরপর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের ফলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থিতিশীলতা ভঙ্গের জন্য নারীদের ও স্কুলছাত্রীদের বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে বাধ্য করছে। এই অঞ্চলে বহিরাগত অস্ত্র বহন ও আনার চেষ্টা চালাচ্ছে দুর্বৃত্ত আরেকদিক থেকে। আজ বিকেলে, বিজিবির কাপ্তাই ব্যাটালিয়ন বড় পরিমাণে দেশীয় অস্ত্রসহ একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে অস্ত্র জব্দ করে।
গত ১৯ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খাগড়াছড়ি ও গুইমারা এলাকায় পরিস্থিতি বিশ্লেষণে স্পষ্ট হয়েছে যে, এটি একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। সেনাবাহিনী পার্বত্য অঞ্চলের সকল জনজাতিগোষ্ঠী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষকে শান্তি বজায় রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, অখণ্ডতা ও নিরাপত্তা রক্ষা জন্য সমস্ত ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণে তারা প্রস্তুত।