০৬:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
তীব্র যানজটে আটকা পড়ে সড়ক উপদেষ্টা মোটরসাইকেলে গন্তব্যে পৌঁছেছেন ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের পাশে আবর্জনার স্তূপ ঢেকে দেওয়া হলো বিশিষ্ট উপদেষ্টার আগমনের জন্য পাঁচ দিন ধরে সাগরে ভাসমান ২৬ জেলেকে উদ্ধার করলো নৌ বাহিনী মেনন-পলক-দস্তগীরসহ চারজনের বিরুদ্ধে নতুন মামলায় গ্রেফতার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ: দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রত্যয় আওয়ামী লীগের বিচারকাজের জন্য আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু জয়পুরহাটের কানাইপুকুর গ্রামে বিরল শামুকখোল পাখির অভয়ারণ্য শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়ার প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন সিইসির মনে অবস্থান: এবারের নির্বাচন জীবনশেষের সুযোগ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিদায় সাক্ষাৎ জাতিসংঘের অভিবাসী সমন্বয়কের

দেশব্যাপী কঠোর নিরাপত্তায় শেষ হলো প্রতিমা বিসর্জন উৎসব

শারদীয় দুর্গোৎসবের অসামান্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই বৃহৎ ধর্মীয় উৎসবের বিদায়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীর দিন, বিভিন্ন স্থান থেকে দেবী দুর্গার প্রতিমাগুলোর বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা চলমান ছিল। রাজধানীসহ সারাদেশের নদী ও পুকুরে স্রোতের মতো প্রবাহিত হয় প্রতিমা বিসর্জনের উৎসব। ভোর থেকেই মণ্ডপগুলোতে ভক্তদের ভিড় ছিল লক্ষাধিক। তারা দেবীর চরণে অঞ্জলি অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রার্থনা করেন বিজয় ও শান্তির জন্য। এরপর শোভাযাত্রার আয়োজন করে ভক্তরা পরিবেশের মধ্য দিয়ে প্রতিমা নিয়ে যান বিসর্জনের জন্য নির্ধারিত স্থানে। ঢাকঢোল, উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনি গর্জে উঠেছিল স্থানীয় পরিবেশে। বিশ্বাসীরা মনে করেন, বিজয়া দশমীর মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের মনের অশুভ প্রবৃত্তি— কাম, ক্রোধ, হিংসা ও লালসা—বিসর্জন দিয়ে ভ্রাতৃত্ব ও শান্তির বন্ধন গড়ে তোলা। এই উৎসবের মাধ্যমে সকলের মধ্যে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও হৃদ্যতা বাড়ানোর আশাও পোষণ করা হয়। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, এ বছর দুর্গাপূজা নানা উৎসাহ-উদ্দীপনায়, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। সারাদেশে মোট ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়, যার মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ২৫৮টি। নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি পূজা কমিটিগুলিও বন্দোবস্ত করে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা—সিসিটিভি ক্যামেরা, স্বেচ্ছাসেবক কমিটি ও নিরাপত্তা পাহারার ব্যবস্থা।প্রতিনিধিদের রিপোর্ট অনুযায়ী, চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার পর প্রতিমা বিসর্জনের কার্যক্রম শুরু হয়। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতসহ নগরীর অন্য প্রান্তগুলোতে বিসর্জন চলে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা হলেও, উৎসবের প্রাণচাঞ্চল্য ছিল চোখে পড়ার মতো। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল নিরাপত্তার তদারকিতে। গত রোববার থেকে শুরু হয়েছিল ষষ্ঠী পূজা ও অন্নপূর্ণা আরাধনা; এরপর পঞ্চম দিনে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে পূজা শেষ হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর বিভিন্ন পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আর গভীর স্বচ্ছলতা ছিল। বিশেষ করে, জেএমসেন হলে, ১৬টি থানার অধীনে ২৯২টি পূজামণ্ডপে উৎসব পালিত হয়। চট্টগ্রামের অন্য উপজেলা ও স্থানেও বিভিন্ন পর্যায়ে חג উদযাপনের দৃশ্য দেখা যায়। গাংনী ও মেহেরপুরেও উৎসবের সরগরম দেখা গেছে। বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে কক্সবাজারের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতেও। প্রতিমা ট্রাকে করে সৈকত ও পার্বত্য জেলা থেকে প্রতিমাগুলোর বিসর্জন হয় নির্ভয়ে। নিরাপত্তার জন্য তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল—সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও ট্যুরিস্ট পুলিশ সক্রিয়ভাবে টহল দেয়। দূর-দূরান্ত থেকে আসা পূজামণ্ডপ ও দর্শনার্থীরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রশাসনের এই নিরাপত্তা ও সংহতির জন্য। অন্যদিকে নেত্রকোনাতেও দুর্গাপূজার মহানবমী পালিত হয়, যেখানে ভক্তরা দেবী দুর্গার উদ্দেশ্যে ফুল, পাতার অঞ্জলি নিবেদন করেন। এছাড়াও মহামারি পরিস্থিতিতে নিরাপদে পূজা পালনের জন্য প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেয়। সিলেট ও ময়মনসিংহেও উৎসবের শেষ দিন ছিল আনন্দের পাশাপাশি বিষাদের সুর। সিলেটের সুরমা নদীতে বিকেলে বিসর্জন সম্পন্ন হয় হাজারো ভক্তের উপস্থিতিতে, আর ময়মনসিংহে মহানগর ও বিভিন্ন উপজেলার প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হয় এই শারদীয় দুর্গোৎসব। সামগ্রিকভাবে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে করোনার মতো চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, সুমহান ঐতিহ্য ও ধর্মীয় অনुष्ठান গৌরবের সঙ্গে পালন করা হয়েছে। শান্তি, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বার্তা নিয়ে এই প্রাণবন্ত উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে।

ট্যাগ :
সর্বাধিক পঠিত

দৌলতপুরে মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান, অবৈধ জাল জব্দ ও জেলেকে জরিমানা

দেশব্যাপী কঠোর নিরাপত্তায় শেষ হলো প্রতিমা বিসর্জন উৎসব

প্রকাশিতঃ ১০:৫০:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫

শারদীয় দুর্গোৎসবের অসামান্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই বৃহৎ ধর্মীয় উৎসবের বিদায়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীর দিন, বিভিন্ন স্থান থেকে দেবী দুর্গার প্রতিমাগুলোর বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা চলমান ছিল। রাজধানীসহ সারাদেশের নদী ও পুকুরে স্রোতের মতো প্রবাহিত হয় প্রতিমা বিসর্জনের উৎসব। ভোর থেকেই মণ্ডপগুলোতে ভক্তদের ভিড় ছিল লক্ষাধিক। তারা দেবীর চরণে অঞ্জলি অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রার্থনা করেন বিজয় ও শান্তির জন্য। এরপর শোভাযাত্রার আয়োজন করে ভক্তরা পরিবেশের মধ্য দিয়ে প্রতিমা নিয়ে যান বিসর্জনের জন্য নির্ধারিত স্থানে। ঢাকঢোল, উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনি গর্জে উঠেছিল স্থানীয় পরিবেশে। বিশ্বাসীরা মনে করেন, বিজয়া দশমীর মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের মনের অশুভ প্রবৃত্তি— কাম, ক্রোধ, হিংসা ও লালসা—বিসর্জন দিয়ে ভ্রাতৃত্ব ও শান্তির বন্ধন গড়ে তোলা। এই উৎসবের মাধ্যমে সকলের মধ্যে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও হৃদ্যতা বাড়ানোর আশাও পোষণ করা হয়। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, এ বছর দুর্গাপূজা নানা উৎসাহ-উদ্দীপনায়, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। সারাদেশে মোট ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়, যার মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ২৫৮টি। নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি পূজা কমিটিগুলিও বন্দোবস্ত করে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা—সিসিটিভি ক্যামেরা, স্বেচ্ছাসেবক কমিটি ও নিরাপত্তা পাহারার ব্যবস্থা।প্রতিনিধিদের রিপোর্ট অনুযায়ী, চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার পর প্রতিমা বিসর্জনের কার্যক্রম শুরু হয়। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতসহ নগরীর অন্য প্রান্তগুলোতে বিসর্জন চলে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা হলেও, উৎসবের প্রাণচাঞ্চল্য ছিল চোখে পড়ার মতো। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল নিরাপত্তার তদারকিতে। গত রোববার থেকে শুরু হয়েছিল ষষ্ঠী পূজা ও অন্নপূর্ণা আরাধনা; এরপর পঞ্চম দিনে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে পূজা শেষ হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর বিভিন্ন পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আর গভীর স্বচ্ছলতা ছিল। বিশেষ করে, জেএমসেন হলে, ১৬টি থানার অধীনে ২৯২টি পূজামণ্ডপে উৎসব পালিত হয়। চট্টগ্রামের অন্য উপজেলা ও স্থানেও বিভিন্ন পর্যায়ে חג উদযাপনের দৃশ্য দেখা যায়। গাংনী ও মেহেরপুরেও উৎসবের সরগরম দেখা গেছে। বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে কক্সবাজারের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতেও। প্রতিমা ট্রাকে করে সৈকত ও পার্বত্য জেলা থেকে প্রতিমাগুলোর বিসর্জন হয় নির্ভয়ে। নিরাপত্তার জন্য তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল—সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও ট্যুরিস্ট পুলিশ সক্রিয়ভাবে টহল দেয়। দূর-দূরান্ত থেকে আসা পূজামণ্ডপ ও দর্শনার্থীরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রশাসনের এই নিরাপত্তা ও সংহতির জন্য। অন্যদিকে নেত্রকোনাতেও দুর্গাপূজার মহানবমী পালিত হয়, যেখানে ভক্তরা দেবী দুর্গার উদ্দেশ্যে ফুল, পাতার অঞ্জলি নিবেদন করেন। এছাড়াও মহামারি পরিস্থিতিতে নিরাপদে পূজা পালনের জন্য প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেয়। সিলেট ও ময়মনসিংহেও উৎসবের শেষ দিন ছিল আনন্দের পাশাপাশি বিষাদের সুর। সিলেটের সুরমা নদীতে বিকেলে বিসর্জন সম্পন্ন হয় হাজারো ভক্তের উপস্থিতিতে, আর ময়মনসিংহে মহানগর ও বিভিন্ন উপজেলার প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হয় এই শারদীয় দুর্গোৎসব। সামগ্রিকভাবে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে করোনার মতো চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, সুমহান ঐতিহ্য ও ধর্মীয় অনुष्ठান গৌরবের সঙ্গে পালন করা হয়েছে। শান্তি, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বার্তা নিয়ে এই প্রাণবন্ত উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে।