কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় এবারের আলুর ফলন আশানুরূপ হয়েছে। গত মৌসুমে বাজারে চড়া দাম থাকার কারণে অনেক কৃষক বেশি জমিতে আলু চাষ করেছেন, তবে বাজারে কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পাওয়ায় তারা বেশ হতাশ হয়ে পড়েছেন। সম্প্রতি দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন হিমাগারে প্রচুর পরিমাণে আলু সংরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে, যার মধ্যে ব্র্যাক, সিদ্দিক ও হিমালয় হিমাগারগুলো মুখ্য। এই সব হিমাগারে বর্তমানে প্রায় ১৮ হাজার ৪১৫ মেট্রিক টন আলু মজুত রয়েছে, যেখানে তাদের ধারণক্ষমতা মোট ২৫ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন। তবে বাজারে আলুর ব্যাপক উৎপাদনের কারণে দাম অনেকটাই কমে গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, এবারে মোট ১৪৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে, যেখানে উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ৪৫,৪৫১ মেট্রিক টন আলু। তবে, ক্রেতাদের কাছে দাম না থাকায় কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত।”
সন্তোষ সরকার, শ্রীরায়ের চর গ্রামের একজন কৃষক, জানিয়েছেন, সাধারণত ভুট্টা চাষে ভালো লাভ হতো। কিন্তু এ বছর আলু চাষ করে তিনি বিপদে পড়েছেন। উৎপাদনের খরচের সঙ্গে বর্তমানে লাভের কোনো জায়গা নেই। তিনি বলেন, “ফলন ভালো হলেও বিক্রির সময় দাম পেতেছি না।”
অন্যদিকে, আলু ব্যবসায়ী জামসেদ আলী জানান, খুচরা বাজারে আলুর দাম কিছুটা ভালো থাকলেও হিমাগারে ন্যায্যমূল্য মিলছে না। তিনি বলবেন, “প্রতি কেজি আলু উৎপাদন ও সংরক্ষণে খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ টাকা, কিন্তু পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১২ থেকে ১৩ টাকায়। এতে কেজিপ্রতি ১২ থেকে ১৫ টাকা লোকসান হচ্ছে।”
দৌলতপুর ইউনিয়নের কৃষক আবু হাসান বলেন, অগাস্ট মাসে সরকারের নির্দেশে হিমাগার থেকে প্রতি কেজি আলু ২২ টাকায় বিক্রির কথা ছিলো, এবং সরকার ৫০ হাজার টন আলু কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। কিন্তু বাস্তবে সেই দামে বিক্রি হয়নি। বর্তমানে, হিমাগারে জমা থাকা প্রায় ৪ হাজার বস্তার মধ্যে মাত্র ১৫০ বস্তা বিক্রি হয়েছে, সেটিও উচ্চ লোকসানে।
ব্র্যাক কোল্ডস্টোরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তানভীর তারেক মাসুদ বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা ছিল, বীজ আলুর বাইরে সব আলু বিক্রি হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু দাম কমে যাওয়ায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বিক্রি করতে পারছেন না। লোকসানের চোখে পড়ায় তারা ক্ষতি এড়াতে ভাড়া কমিয়েছেন, তবুও সমাধান কঠিন।
দাউদকান্দি উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন জানান, এই বছর আলুর উৎপাদন চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে। তবে, কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকার শিগগিরই সরকারি ক্রয় ও সংরক্ষণ কার্যক্রম বাড়ানোর উদ্যোগ নেবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন, যাতে করে কৃষকেরা কিছুটা হলেও ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে পারেন।