০৬:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
গুম-খুনের অভিযোগে ক্ষমা চেয়ে আয়নাঘরের কথা স্বীকার করলেন র‍্যাব ডিজি ঐক্যের ডাক হাসনাত আব্দুল্লাহর দেশের জন্য ক্ষতিকর চুক্তি বাতিলের দাবি করা হয়েছে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য চলমান অপচেষ্টা নতুন বাংলাদেশের যাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার রমেন রায়ের ওপর হামলার ঘটনাটি পুরোনো, তিনি চিন্ময়ের আইনজীবী নন ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা পশ্চিমবঙ্গের ৮ জেলায় বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ালো ভারত

ট্রেড ইউনিয়ন করার শর্ত শিথিলসহ শ্রম অধিকারের ১১ দফার বাস্তবায়ন চায় যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশে শ্রম অধিকার–সংক্রান্ত ১১ দফার দ্রুত বাস্তবায়ন চায় যুক্তরাষ্ট্র। এসব দফা বাস্তবায়ন হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকার বাণিজ্য সুবিধাও (জিএসপি) পাওয়া যাবে।

আজ রোববার ঢাকায় সচিবালয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্তর্জাতিক শ্রমবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি সফররত কেলি এম ফে রদ্রিগেজের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এমন আশাবাদের কথা শোনান বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এ সময় বাণিজ্যসচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা কত দ্রুত শ্রম অধিকারের এই ১১ দফা বাস্তবায়ন করতে পারি, সেটা নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে। এগুলো করতে পারলে আমরা অবশ্যই জিএসপি সুবিধা পাব।’

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলটি আলোচনায় ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারের বিষয়ে জোর দেয়। এসব অধিকার এখনো আছে, তবে বিপরীতে রয়েছে নানা শর্ত। যুক্তরাষ্ট্র চায় শর্তগুলো শিথিল করা হোক। অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এসব দফা বাস্তবায়নে প্রতিনিধিদলকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া অঞ্চলের একটি দল বাংলাদেশের শ্রম অধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে একটি কর্মপরিকল্পনা জানিয়ে যায়। ওই কর্মপরিকল্পনায় মোটাদাগে ১১টি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর প্রথমটিই হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়ন নেতা, শ্রমিক ও শ্রম অধিকারকর্মীদের যাঁরা নিপীড়ন করেন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালান, তাঁদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এরপরই রয়েছে শ্রমিকনেতা ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কাজ করে, এমন কারখানার মালিক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনা। এ ছাড়া রয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ট্রেড ইউনিয়নগুলো যে মানের অধিকার ভোগ করে, সে অনুযায়ী বাংলাদেশের শ্রম আইন ও বিদ্যমান শ্রমবিধি সংশোধন।

আরও যেসব বিষয় রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলোর (ইপিজেড) শ্রমিকেরা যাতে পুরোদমে ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারেন, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) আইনের ৩৪ নম্বর ধারা সংশোধন ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় (এসইজেড) সেটির প্রয়োগ এবং সেখানকার শ্রমিকেরা যাতে সংগঠিত হতে পারেন ও সম্মিলিতভাবে দর-কষাকষিতে সক্ষম হন, তা নিশ্চিত করা; ট্রেড ইউনিয়ন করার আবেদনের প্রক্রিয়া ৫৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করা; শ্রম অধিদপ্তরের মাধ্যমে তার বিদ্যমান অনলাইন নিবন্ধন পোর্টালে অপেক্ষমাণ থাকা সব আবেদনের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ; বার্ষিক বাজেটের মাধ্যমে শ্রম পরিদর্শক নিয়োগ ও এ জন্য তহবিল বরাদ্দ দেওয়া; আরও শ্রম পরিদর্শকের পদ অনুমোদন এবং নিবন্ধন বিলম্বিত বা বাধাগ্রস্ত করার অভ্যাস বন্ধ করা ইত্যাদি।

বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘এসব বিষয়ে প্রধানত কাজ করছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। শ্রমিকের জীবনযাপন, মানোন্নয়ন ও ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম করার জন্য এগুলো করা হচ্ছে। আমরা সবাই এক লাইনেই কাজ করছি। আমরা আমাদের দিক থেকে কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি করা যায়, তা নিয়ে তাগিদ দিয়েছি। তাঁরা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন। তাঁরা আমাদের শ্রমিকদের অধিকার ও ন্যূনতম মজুরিসহ অন্যান্য বিষয়ে নজর দিতে বলেছেন।’

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যে প্রায় ১৬ শতাংশ শুল্ক দিয়ে পণ্য রপ্তানি করতে হয়, এ বিষয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘কথা বলেছি। জিএসপি সুবিধা থাকলে এটা দিতে হতো না। বলেছি, জিএসপি সুবিধায় আমরা থাকতে চাই। শুল্ক ও কোটামুক্ত পণ্য রপ্তানির যে সুবিধা আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) পাচ্ছি, সেটা আমরা সব জায়গায় চাচ্ছি। তাঁদেরও বলেছি। কিন্তু তাঁরা সেই লাইনে কোনো কথা বলেননি।’

ট্যাগ :
সর্বাধিক পঠিত

ট্রেড ইউনিয়ন করার শর্ত শিথিলসহ শ্রম অধিকারের ১১ দফার বাস্তবায়ন চায় যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিতঃ ০১:০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশে শ্রম অধিকার–সংক্রান্ত ১১ দফার দ্রুত বাস্তবায়ন চায় যুক্তরাষ্ট্র। এসব দফা বাস্তবায়ন হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকার বাণিজ্য সুবিধাও (জিএসপি) পাওয়া যাবে।

আজ রোববার ঢাকায় সচিবালয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্তর্জাতিক শ্রমবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি সফররত কেলি এম ফে রদ্রিগেজের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এমন আশাবাদের কথা শোনান বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এ সময় বাণিজ্যসচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা কত দ্রুত শ্রম অধিকারের এই ১১ দফা বাস্তবায়ন করতে পারি, সেটা নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে। এগুলো করতে পারলে আমরা অবশ্যই জিএসপি সুবিধা পাব।’

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলটি আলোচনায় ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারের বিষয়ে জোর দেয়। এসব অধিকার এখনো আছে, তবে বিপরীতে রয়েছে নানা শর্ত। যুক্তরাষ্ট্র চায় শর্তগুলো শিথিল করা হোক। অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এসব দফা বাস্তবায়নে প্রতিনিধিদলকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া অঞ্চলের একটি দল বাংলাদেশের শ্রম অধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে একটি কর্মপরিকল্পনা জানিয়ে যায়। ওই কর্মপরিকল্পনায় মোটাদাগে ১১টি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর প্রথমটিই হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়ন নেতা, শ্রমিক ও শ্রম অধিকারকর্মীদের যাঁরা নিপীড়ন করেন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালান, তাঁদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এরপরই রয়েছে শ্রমিকনেতা ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কাজ করে, এমন কারখানার মালিক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনা। এ ছাড়া রয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ট্রেড ইউনিয়নগুলো যে মানের অধিকার ভোগ করে, সে অনুযায়ী বাংলাদেশের শ্রম আইন ও বিদ্যমান শ্রমবিধি সংশোধন।

আরও যেসব বিষয় রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলোর (ইপিজেড) শ্রমিকেরা যাতে পুরোদমে ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারেন, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) আইনের ৩৪ নম্বর ধারা সংশোধন ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় (এসইজেড) সেটির প্রয়োগ এবং সেখানকার শ্রমিকেরা যাতে সংগঠিত হতে পারেন ও সম্মিলিতভাবে দর-কষাকষিতে সক্ষম হন, তা নিশ্চিত করা; ট্রেড ইউনিয়ন করার আবেদনের প্রক্রিয়া ৫৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করা; শ্রম অধিদপ্তরের মাধ্যমে তার বিদ্যমান অনলাইন নিবন্ধন পোর্টালে অপেক্ষমাণ থাকা সব আবেদনের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ; বার্ষিক বাজেটের মাধ্যমে শ্রম পরিদর্শক নিয়োগ ও এ জন্য তহবিল বরাদ্দ দেওয়া; আরও শ্রম পরিদর্শকের পদ অনুমোদন এবং নিবন্ধন বিলম্বিত বা বাধাগ্রস্ত করার অভ্যাস বন্ধ করা ইত্যাদি।

বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘এসব বিষয়ে প্রধানত কাজ করছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। শ্রমিকের জীবনযাপন, মানোন্নয়ন ও ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম করার জন্য এগুলো করা হচ্ছে। আমরা সবাই এক লাইনেই কাজ করছি। আমরা আমাদের দিক থেকে কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি করা যায়, তা নিয়ে তাগিদ দিয়েছি। তাঁরা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন। তাঁরা আমাদের শ্রমিকদের অধিকার ও ন্যূনতম মজুরিসহ অন্যান্য বিষয়ে নজর দিতে বলেছেন।’

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যে প্রায় ১৬ শতাংশ শুল্ক দিয়ে পণ্য রপ্তানি করতে হয়, এ বিষয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘কথা বলেছি। জিএসপি সুবিধা থাকলে এটা দিতে হতো না। বলেছি, জিএসপি সুবিধায় আমরা থাকতে চাই। শুল্ক ও কোটামুক্ত পণ্য রপ্তানির যে সুবিধা আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) পাচ্ছি, সেটা আমরা সব জায়গায় চাচ্ছি। তাঁদেরও বলেছি। কিন্তু তাঁরা সেই লাইনে কোনো কথা বলেননি।’