আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নতুন গেজেট প্রকাশ করেছে যা রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর জন্য আচরণবিধি সম্পর্কিত নির্দেশনা দেয়। এই গেজেটে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই বার প্রথমবারের মতো নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রার্থীরা একত্রে একটি মঞ্চে তাঁদের ইশতেহার ঘোষণা করতে পারবেন এবং আচরণবিধি মেনে চলার অঙ্গীকারনামা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে ব্যক্তির জন্য সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড ও এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। তদ্ব্যতীত, দল বা সংগঠনের জন্য এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা ও প্রার্থিতা বাতিলের সম্ভাবনা রয়েছে। বিধিমালা লঙ্ঘনের জন্য নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এবং প্রার্থীরা কোনও পরিস্থিতিতে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে অযোগ্য ঘোষণা হতে পারে।
গেজেটে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভোটের প্রচারে ড্রোন বা কোয়াডকপ্টার ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষেধ। এ ছাড়া, বিদেশে প্রচার কার্যক্রম চালানো ও প্রচারণায় ব্যবহৃত পোস্টার, বিলবোর্ডের আকার নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। প্রার্থী তার নির্বাচনী এলাকায় ২০টির বেশি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবে না, যার দৈর্ঘ্যmaximum ১৬ ফুট এবং প্রস্থ ৯ ফুট।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা অন্য কোনো ব্যক্তি ভোটার স্লিপ বিতরণ করতে পারবেন, তবে সেখানে প্রার্থীর নাম, ছবি বা প্রতীক উল্লেখ করা যাবে না। এছাড়া, ডিজিটাল বিলবোর্ডে কেবল আলো ও বিদ্যুতের ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে; অতিরিক্ত আলোকসজ্জার উপকরণ নিষিদ্ধ।
নির্বাচনী প্রচারণায় সোশাল মিডিয়া ব্যবহারে কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোনও প্রার্থী বা তার এজেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার-প্রচার চালাতে পারবে, কিন্তু সেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টের তথ্য রিটার্নিং অফিসারকে আগে থেকেই জমা দিতে হবে।
নির্বাচনী কার্যক্রমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বা কৃত্রিম উপাদান ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে মানা হবে না। ঘৃণামূলক বক্তব্য, ভুল তথ্য, ব্যক্তির চেহারা বিকৃত করা বা ভুয়া তথ্য প্রচারও নিষিদ্ধ। প্রতিদ্বন্দ্বী বা অন্য কোনো গোষ্ঠীকে কটাক্ষ, ব্যক্তিগত আক্রমণ বা উসকানিমূলক ভাষা ব্যবহার করতে অ exemption দেয়া হয়নি। এছাড়া, ধর্মীয় বা জাতিগত অনুভূতিকে অপব্যবহার করা পুরোটাই নিষিদ্ধ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা অন্যান্য মাধ্যমে নির্বাচনী কনটেন্ট প্রকাশের আগে তার সত্যতা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। গুজব ছড়ানো, বিভ্রান্তিকর বা পক্ষপাতময় কনটেন্ট তৈরি, প্রচার ও শেয়ার করা আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শত্রুতা তৈরি বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য চিত্র, ভাষা বা তথ্যের ভিত্তিতে যেকোনো প্রকার অপপ্রয়োগও নিষিদ্ধ।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা হলো, বিদেশ থেকে কোনও প্রকার জনসভা বা প্রচারণা চালানো যাবে না। প্রচারে পোস্টার ও ফেস্টুনের ব্যবহারও নিষিদ্ধ, যদি না তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হয়। প্রার্থী বা দল তার নির্বাচনী এলাকার জন্য সর্বোচ্চ ২০টি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবে, যার আকার সর্বাধিক ১৬ ফুট উচ্চতা ও ৯ ফুট চওরা।
নির্বাচনের দিন ও প্রচারের সময় কোনও ধরনের ড্রোন বা অনুরূপ প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে না। ভোটার স্লিপ বিতরণে কোনও বাধা নেই, কিন্তু সেখানে প্রার্থী বা প্রতীক উল্লেখ করতে হবে না। শুধুমাত্র ডিজিটাল বিলবোর্ডে আলো ও বিদ্যুতের ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। প্রচারপত্র, ব্যানার বা ফেস্টুনের জন্য প্লাস্টিক বা পলিথিনের ব্যবহারও নিষেধ।
পরিবেশ সৃষ্টি ও সংরক্ষণে জোর দেয়ার জন্য, প্রচারে পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শব্দের পরিমাণ রাখা হবে সর্বোচ্চ ৬০ ডেসিবেল।
রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের অঙ্গীকারনামা জমা দিতে হবে, যেখানে তারা সকল বিধি মেনে চলার অঙ্গীকার করবে। প্রার্থী নিজেও সেই অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করবেন, এবং বিধিমালা লঙ্ঘন করলে শাস্তির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
সাধারণত, প্রার্থীরা একাত্তরে সংলাপ করবে এবং রিটার্নিং কর্মকর্তা সব প্রার্থীকে একক মঞ্চে ইশতেহার ঘোষণা করার জন্য আহবান করবেন। যদি কোনও প্রার্থী বা তার এজেন্ট বিধিমালা লঙ্ঘন করে বা চেষ্টা করে, তাহলে তাৎক্ষণিক তদন্তের নির্দেশ দেয়া হবে। তদন্তের ফলাফলে দেখা গেলে যে, আইন লঙ্ঘন হয়েছে বা চেষ্টার প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাহলে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শ্রীমঙ্গল২৪ ডেস্ক 















