নির্মাণাধীন মহেশখালী-মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরটির উন্নত অবকাঠামো ও লজিস্টিক সুবিধা দেশের মাছ ও সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানি খাতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধির সম্ভবনা সৃষ্টি করছে। এই আশা ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তারা।
মহেশখালী-মাতারবাড়ি ইন্টিগ্রেটেড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের একটি অংশ হিসেবে এই সামুদ্রিক বন্দর নির্মাণে জাপান গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা দিচ্ছে। এটি চট্টগ্রাম বন্দরের জট কমাতে এবং বড় বড় জাহাজ সরাসরি সমুদ্রে নোংরা সুবিধা দিতে সক্ষম হবে, যা দেশের সামুদ্রিক ব্যবসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
বিশেষ করে মৎস্য শিল্পে এর প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেই। দ্রুত ও যথাযথ পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে সামুদ্রিক মাছ ও খাদ্যপণ্য দ্রুত বাজারে পৌঁছানো সম্ভব হবে, বিশেষ করে হিমায়িত মাছের ক্ষেত্রে।
মহেশখালীর মাছ ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, নতুন এই বন্দরটি স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত পচনশীল সামুদ্রিক খাদ্য ও মাছের পরিবহন সময় অনেক কমিয়ে দেবে। এর ফলে আমাদের মাছের সতেজতা ও মান বজায় থাকবে এবং বিশ্ব বাজারে שלנו পণ্য সহজে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
অপরদিকে, মাতারবাড়ির জেলেরা বলছেন, গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে তাদের ধরা মাছ দ্রুত রপ্তানি হবে। এতে ন্যায্যমূল্য পেয়ে তাদের জীবন মান উন্নত হবে।
সামুদ্রিক মাছ ধরা ও প্রসেসিং বিশ্বে অনেক ডলারে ব্যাবসা হলেও বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে এখনও তুলনামূলকভাবে এগিয়ে আসতে পারেনি। তবে মহেশখালী-মাতারবাড়ি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এই খাতে বিশাল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্বের মোট মাছের প্রায় ৭ শতাংশ মৎস্য সম্পদ বঙ্গোপসাগর থেকে পাওয়া যায়। এছাড়া, বিশ্বের প্রায় ৪৫ কোটি মানুষ বঙ্গোপসাগরের অর্থনীতির উপর নির্ভরশীল, যেখানে মাছ উৎপাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বাংলাদেশ ‘ইন্ডিয়ান ওশান টুনা কমিশন’ (আইওটিসি) এর সদস্য হওয়ায় বাংলাদেশ নির্দিষ্ট দুই প্রজাতির টুনা মাছের জন্য কোটা পায়, তবে অন্য দুই প্রজাতির জন্য বেশি সুযোগ থাকলেও অনেক কোটা অপূর্ণ থেকে যায়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ও গভীর সমুদ্রে মাছ ধরাকে উৎসাহিত করতে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ২৮টি লংলাইনার ফিশিং জাহাজ তৈরির বা আমদানি করার অনুমতি দিয়েছে।
মাতারবাড়ি বন্দর চাঁকড়িয়া অঞ্চলে চিংড়ি শিল্পে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে পণ্য দ্রুত পৌঁছানোর সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
এছাড়া, এই বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানি প্রক্রিয়া সময় ও খরচ কমে যাবে। ফিলে, স্মোকড মাছ, রেডি-টু-ইট সামুদ্রিক খাদ্যসহ বিভিন্ন মানসম্পন্ন পণ্যের রপ্তানি সহজে ও সহজে করা সম্ভব হবে।
উদাহরণস্বরূপ, স্ক্যালপ (এক ধরনের শামুক) প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানির মাধ্যমে আটকে থাকা ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি, মিডার শক্তিশালী লজিস্টিক সেবা দেশে নতুন বিনিয়োগের ঝড় তুলবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।