০১:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
বিএসসির নিজস্ব অর্থায়নে জাহাজ অর্জন: এক যুগান্তকারী মাইলফলক সকল ধর্মের মূল বার্তা মানবতা, শান্তি ও দেশপ্রেম: ড. এম সাখাওয়াত হোসেন পিআর পদ্ধতি সম্পর্কে জনসচেতনতার অভাব বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে গুলশানে ফ্ল্যাটের মালিক টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার বিস্তারিত জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমানকে বদলি রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ফের পিছিয়ে যেতে পারে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা জুলাই অভ্যুত্থান কেবল আন্দোলন নয়, ন্যায়ের সংগ্রামের প্রতীক: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পূজার ছুটিতে পূর্বাঞ্চলে চার জোড়া স্পেশাল ট্রেন চালু আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনার দাবি নাহিদ ইসলামের

যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রস্বীকৃতি প্রদান

ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া। রোববার একযোগে এই তিন দেশ ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি দেয়, যা আসলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শিল্পোন্নত দেশ হিসেবে পরিচিত জি সেভেনের মধ্যে যুক্তরাজ্য ও কানাডা প্রথম এ ধরনের স্বীকৃতি প্রদান করল। আশা করা হচ্ছে, নিউইয়র্কে শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে ফ্রান্স ও অন্যান্য বেশ কয়েকটি দেশও এ পথে হাঁটবে।

কানাডা প্রথম ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এক বিবৃতিতে জানান, আজ থেকে কানাডা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে মান্য করছে। তিনি এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তিপূর্ণ ও সম্মতিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজও এই স্বীকৃতি দেন। তিনি স্পষ্ট করেন যে, এই সিদ্ধান্তে হামাসের কোনও ভূমিকা থাকছে না।

এর কয়েক ঘণ্টা পরে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে আমরা কাজ করছি। তার মন্তব্যে উঠে আসে, দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান ও শান্তির সম্ভাবনাকে অক্ষুণ্ন রাখতে এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও জানান, আজকের এই স্বীকৃতি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যাশিত ছিল।

গাজার পরিস্থিতি বর্তমানে খুবই ভয়াবহ। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে সেখানে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলি সেনা হামলায় অসংখ্য ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নারী, শিশু ও প্রবীণরা খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সেবা না পেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত। ত্রাণবাহী গাড়ি ও সহায়তা সামগ্রী সীমান্তে আটকে রাখা হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও মারাত্মক করে তুলেছে। হাসপাতালগুলো ধ্বংসের মুখে ও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটে আক্রান্ত। সাধারণ মানুষের জীবনে নেমে এসেছে দুর্দশা। অথচ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।

আন্তর্জাতিক দেশগুলোর মধ্যে বেশ কিছু দেশ এখনও ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে বেশিরভাগ দেশ তাদের স্বীকৃতি দিয়ে আছেন। আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত ১৪৬টি দেশের ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি রয়েছে। এর মধ্যে ২০২৫ সালের মধ্যে স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোর তালিকায় যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া রয়েছে। ২০২৪ সালে আরও কিছু দেশ, যেমন বাহামা, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো, জামাইকা ও বারবাডোজ, ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি দিয়েছে।

ফিলিস্তিনের জন্য জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সদস্যপদ ও স্বীকৃতি অনেকটাই অপ্রতুল হলেও তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কোয়ে পূর্ণ সদস্য হওয়ার মাধ্যমে এর উপকারিতা বিশাল। ২০১১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনের ‘সদস্যপদহীন পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র’ হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া এবং ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তাদের সংযুক্তি এই সমর্থনকে শক্তিশালী করে।

বিশ্বের কয়েকটি দেশ, যেমন আইসল্যান্ড, চিলি, গায়ানা, পেরু, সুরিনাম, উরুগুয়ে, লেসোথো, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, লাইবেরিয়া, এল সালভাদোর, হন্ডুরাস, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইনস, বেলিজ, ডোমিনিকা, অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, গ্রেনাডা, থাইল্যান্ড, গুয়েতেমালা, হাইতি, ভ্যাটিকান সিটি, সুউডেন, সেইন্ট লুসিয়া, কলোম্বিয়া, সেইন্ট কিটস ও নেভিস সহ বহু দেশ ২০১১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

অসলো চুক্তির আগে, ১৯৯৯ সালের মধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি। তবে কিছু দেশ ২০০৪ থেকে ২০১০ এর মধ্যে তাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। এদিকে, ১৯৯৩ সালে প্রথম অসলো চুক্তি স্বাক্ষর হয়, যার মাধ্যমে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের সমাধানের জন্য আলোর পথ উন্মুক্ত হয়। ১৯৯৫ সালে দ্বিতীয় অসলো চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও বাস্তবায়নে কিছু বাধা এসেছে। ১৯৮৮ সালে ইয়াসির আরাফাত প্রথম ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, যা আলজেরিয়া থেকে দেওয়া। এরপর বহু দেশ বিভিন্ন সময় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা স্বীকৃতি দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আরব দেশগুলো ও কো reguliere অন্যান্য দেশ।

ট্যাগ :

যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রস্বীকৃতি প্রদান

প্রকাশিতঃ ১০:৫৫:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া। রোববার একযোগে এই তিন দেশ ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি দেয়, যা আসলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শিল্পোন্নত দেশ হিসেবে পরিচিত জি সেভেনের মধ্যে যুক্তরাজ্য ও কানাডা প্রথম এ ধরনের স্বীকৃতি প্রদান করল। আশা করা হচ্ছে, নিউইয়র্কে শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে ফ্রান্স ও অন্যান্য বেশ কয়েকটি দেশও এ পথে হাঁটবে।

কানাডা প্রথম ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এক বিবৃতিতে জানান, আজ থেকে কানাডা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে মান্য করছে। তিনি এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তিপূর্ণ ও সম্মতিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজও এই স্বীকৃতি দেন। তিনি স্পষ্ট করেন যে, এই সিদ্ধান্তে হামাসের কোনও ভূমিকা থাকছে না।

এর কয়েক ঘণ্টা পরে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে আমরা কাজ করছি। তার মন্তব্যে উঠে আসে, দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান ও শান্তির সম্ভাবনাকে অক্ষুণ্ন রাখতে এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও জানান, আজকের এই স্বীকৃতি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যাশিত ছিল।

গাজার পরিস্থিতি বর্তমানে খুবই ভয়াবহ। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে সেখানে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলি সেনা হামলায় অসংখ্য ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নারী, শিশু ও প্রবীণরা খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সেবা না পেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত। ত্রাণবাহী গাড়ি ও সহায়তা সামগ্রী সীমান্তে আটকে রাখা হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও মারাত্মক করে তুলেছে। হাসপাতালগুলো ধ্বংসের মুখে ও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটে আক্রান্ত। সাধারণ মানুষের জীবনে নেমে এসেছে দুর্দশা। অথচ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।

আন্তর্জাতিক দেশগুলোর মধ্যে বেশ কিছু দেশ এখনও ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে বেশিরভাগ দেশ তাদের স্বীকৃতি দিয়ে আছেন। আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত ১৪৬টি দেশের ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি রয়েছে। এর মধ্যে ২০২৫ সালের মধ্যে স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোর তালিকায় যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া রয়েছে। ২০২৪ সালে আরও কিছু দেশ, যেমন বাহামা, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো, জামাইকা ও বারবাডোজ, ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি দিয়েছে।

ফিলিস্তিনের জন্য জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সদস্যপদ ও স্বীকৃতি অনেকটাই অপ্রতুল হলেও তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কোয়ে পূর্ণ সদস্য হওয়ার মাধ্যমে এর উপকারিতা বিশাল। ২০১১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনের ‘সদস্যপদহীন পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র’ হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া এবং ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তাদের সংযুক্তি এই সমর্থনকে শক্তিশালী করে।

বিশ্বের কয়েকটি দেশ, যেমন আইসল্যান্ড, চিলি, গায়ানা, পেরু, সুরিনাম, উরুগুয়ে, লেসোথো, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, লাইবেরিয়া, এল সালভাদোর, হন্ডুরাস, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইনস, বেলিজ, ডোমিনিকা, অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, গ্রেনাডা, থাইল্যান্ড, গুয়েতেমালা, হাইতি, ভ্যাটিকান সিটি, সুউডেন, সেইন্ট লুসিয়া, কলোম্বিয়া, সেইন্ট কিটস ও নেভিস সহ বহু দেশ ২০১১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

অসলো চুক্তির আগে, ১৯৯৯ সালের মধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি। তবে কিছু দেশ ২০০৪ থেকে ২০১০ এর মধ্যে তাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। এদিকে, ১৯৯৩ সালে প্রথম অসলো চুক্তি স্বাক্ষর হয়, যার মাধ্যমে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের সমাধানের জন্য আলোর পথ উন্মুক্ত হয়। ১৯৯৫ সালে দ্বিতীয় অসলো চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও বাস্তবায়নে কিছু বাধা এসেছে। ১৯৮৮ সালে ইয়াসির আরাফাত প্রথম ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, যা আলজেরিয়া থেকে দেওয়া। এরপর বহু দেশ বিভিন্ন সময় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা স্বীকৃতি দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আরব দেশগুলো ও কো reguliere অন্যান্য দেশ।