দৈনিক বাংলা ডেস্ক
যুক্তরাজ্য সরকার তাদের সরকারি ওয়েবসাইটে ফিলিস্তিনের একটি আপডেটেড মানচিত্র প্রকাশ করেছে। এর আগে যেখানে ‘অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল’ লেখা থাকত, সেখানে এখন সরাসরি ‘ফিলিস্তিন’ লেখা হয়েছে। রোববার যুক্তরাজ্য সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়। এ ঘটনার পর থেকে তাদের ওয়েবসাইটের বিভিন্ন অংশের মানচিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ নথিতে ‘অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল’ শব্দের পরিবর্তে ‘ফিলিস্তিন’ লিখা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের এই নতুন মানচিত্র প্রকাশের খবর মিডিয়ার মাধ্যমে জানা গেছে, তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন সম্পর্কিত ভ্রমণ পরামর্শ, বিদেশে যুক্তরাজ্য দূতাবাসের তালিকা, এবং অঞ্চলের ভিত্তিতে তৈরি সরকারি মানচিত্রে সকল উল্লেখ বদলে ‘ফিলিস্তিন’ দেখানো হয়েছে।
গত রোববার এক সাংবাদিক সম্মেলনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যেই আমরা শান্তি ও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য কাজ চালিয়ে যাব।’ প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, ‘হামাসের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তারা কোনও সরকার বা নিরাপত্তা কাঠামোতে ভূমিকা রাখতে পারবে না।’
স্টারমার উল্লেখ করেন, এই স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে বহু দেশের মধ্যে বৃহত্তর সমর্থন পেয়েছে, বিশেষ করে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার সাথে যৌথ উদ্যোগে। ব্রিটেন এখন কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার পরে জি-সেভেনের তৃতীয় দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। এই ঘোষণা আসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ঠিক আগে, যেখানে সৌদি আরব ও ফ্রান্সের সহায়তায় আরো কয়েকটি দেশও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, এই স্বীকৃতি ঘিরে প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল কঠোর নিন্দা জানিয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অভিযোগ করে বলেন, এটি সন্ত্রাসবাদের পুরস্কার। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইভেট কুপার জানিয়েছেন, তারা ইসরায়েলকে সতর্ক করেছেন যেন এই স্বীকৃতির প্রতিশোধ হিসেবে পশ্চিম তীরের আরও কিছু অংশ দখল না করে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি যে, ইসরায়েলের নিরাপত্তার পাশাপাশি ফিলিস্তিনীদের নিরাপত্তার জন্যও আমাদের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’
কুপার আরও জানান, এই সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের জন্য, পাশাপাশি অঞ্চলের স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ফিলিস্তিনের নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অধিকারকেও স্বীকৃতি দিতে হলে আরও কাজ চালিয়ে যেতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য রাষ্ট্র ক্রমাগত মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক সমঝোতা গড়ে তুলতে গুরুত্ব দিচ্ছে। রোববারের এই স্বীকৃতি কার্যক্রমের সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার বলেছিলেন, তিনি শান্তি ও দ্বি-রাষ্ট্রের সমাধানের আশাকে টিকিয়ে রাখতে চান।
অপর দিকে, ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়া খুবই নিন্দুক; তারা বলছে, এই স্বীকৃতি হবেনা। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আরও বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র কখনোই হবে না।’ বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র ডেভিড মেনসার মন্তব্যে বলা হয়েছে, ‘এটি ইহুদি সম্প্রদায়ের জন্য বিশ্বাসঘাতকতা এবং হিংসাত্মক কাজের পুরস্কার।’