অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাত ব্যাপকভাবে ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরশীল। সরকারি ও বেসরকারি খাতের অনেক প্রতিষ্ঠানই ঋণ নেয়, যার বেশিরভাগই পরিশোধ না করেই পার হয়ে যায়। এটি হল দেশের জন্য এক বড় ট্র্যাজেডি। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) যৌথ আয়োজনে ‘বাংলাদেশের বন্ড ও সুকুক বাজার উন্মোচন: রাজস্ব স্থিতি, অবকাঠামো বাস্তবায়ন এবং ইসলামী মানি মার্কেটের উন্নয়ন’ শীর্ষক বৈঠকে তিনি একথা বলেন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঝুঁকি ভাগ করে নেয়ার জন্য একটি কার্যকর পুঁজিবাজার এবং বেসরকারি খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জনগণকে বোঝাতে হবে যে, বন্ড, ডিবেঞ্চার ও সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের সঙ্গে ঝুঁকি জড়িত। পুঁজিবাজার চিরস্থায়ী আয় কোথাও емес।
তিনি আরও বলেন, ছোট বিনিয়োগকারীরা অনেক সময় মনে করেন, বিনিয়োগ করলে নিশ্চয়ই লাভ হবে, কিন্তু তারা এই বাজারের ঝুঁকি বুঝতে চায় না। এজন্য ডিএসই ও বিএসইসিকে আরও উদ্যোগী হতে হবে যাতে বিনিয়োগকারীরা আরও ভালোভাবে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সুকুক ইন্সট্রুমেন্টটি ব্যাংকের উপর চাপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, যদি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে দেশে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যের সুকুক রয়েছে, যেগুলো বেশিরভাগই সরকারি প্রকল্পের জন্য ব্যবহৃত হলেও, বেসরকারি খাতও এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অবকাঠামো এবং ব্যবসায়িক উদ্যোগে অর্থায়ন করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, একটি শক্তিশালী আর্থিক খাতের জন্য শুধু ব্যাংক নয়, পুঁজিবাজার, বিমা এবং বিশেষ ট্যাক্স ইনস্ট্রুমেন্টকেও আরও শক্তিশালী করতে হবে। জনগণ এবং সরকারের মধ্যে বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সবাই বুঝতে হবে, তারা কর দিয়ে দেশের সেবার সুযোগ লাভ করছে, যা ভালো শাসনব্যবস্থার অন্যতম লক্ষ্য।
অর্থ উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন যে, আমাদের দেশে মূল সমস্যা হলো অর্থায়নের অভাব। সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলরা মনে করেন, সব কিছু সহজে দেওয়া যাবে; তাই তারা প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহের পরিবর্তে নানা সময়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেন। দেশের অর্থের যথেষ্ট সামর্থ্য থাকলেও এর পুরোপুরি ব্যবহার হচ্ছে না।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজার এবং সুকুকের সম্প্রসারণ জরুরি, যাতে সরকারি ও বেসরকারি প্রকল্পের অর্থায়নে ব্যাংকের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমানো যায়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে অনেক কিছু করতে হবে। এর জন্য বিএসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংক যৌথভাবে কাজ করছে। তিনি জানান, তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করছে, যা শিগগিরই সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হবে। এই প্রতিবেদনে সরকারি ও করপোরেট বন্ডের চাহিদা বাড়ানোর পদক্ষেপসমূহ ও সরবরাহ কিভাবে বাড়ানো যায় তার বিস্তারিত আলোচনা থাকবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বন্ড মার্কেটের আকার সবচেয়ে ছোট হলেও, সেটিকে দেশের বৃহত্তম মার্কেটে রুপান্তরিত করার লক্ষ্য রয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও পুঁজিবাজার উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও অর্থনৈতিক বিভাগ সচিব নাজমা মোবারেক।
শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অর্লিন্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এম. কবীর হাসান। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খোন্দকার রাশেদ মাকসুদ।