০৬:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
তীব্র যানজটে আটকা পড়ে সড়ক উপদেষ্টা মোটরসাইকেলে গন্তব্যে পৌঁছেছেন ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের পাশে আবর্জনার স্তূপ ঢেকে দেওয়া হলো বিশিষ্ট উপদেষ্টার আগমনের জন্য পাঁচ দিন ধরে সাগরে ভাসমান ২৬ জেলেকে উদ্ধার করলো নৌ বাহিনী মেনন-পলক-দস্তগীরসহ চারজনের বিরুদ্ধে নতুন মামলায় গ্রেফতার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ: দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রত্যয় আওয়ামী লীগের বিচারকাজের জন্য আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু জয়পুরহাটের কানাইপুকুর গ্রামে বিরল শামুকখোল পাখির অভয়ারণ্য সিইসির মনে অবস্থান: এবারের নির্বাচন জীবনশেষের সুযোগ শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়ার প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিদায় সাক্ষাৎ জাতিসংঘের অভিবাসী সমন্বয়কের

নরসিংদীর কীটনাশকমুক্ত কাকরোল আন্তর্জাতিক বাজারে জনপ্রিয়তা পেল

সবজির জন্য জনপ্রিয় নরসিংদী এখন গ্রীষ্মকালীন সবজি কাকরোলের (কাঁকড়া) উৎপাদন ও রপ্তানির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। একসময় এই সবজি শুধুমাত্র স্থানীয় বাজারের চাহিদা মেটাতো, бірақ এখন এটি ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য সহ বিশ্বজুড়ে রপ্তানি হচ্ছে। স্বাস্থ্য সচেতন ভোক্তা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে এর বড় আকার, আকর্ষণীয় চেহারা এবং উন্নত স্বাদ ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

বেলাবো উপজেলার বারৈচা বাজার এখন কাকরোলের ব্যবসার অন্যতম কেন্দ্র। মৌসুমে প্রতিদিন শত শত টন কাকরোল এখানে পৌঁছায়। শ্রমিকরা আকার অনুযায়ী কাকরোলগুলো বাছাই করে ঝুড়ি, বস্তা ও ক্রেটে প্যাকেজ করে। কৃষকরা জানিয়েছেন, এ আয়ে প্রতিদিন কোটি টাকার লেনদেন হয়, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করছে।

নরসিংদীর ছয় উপজেলার মধ্যে শিবপুর ও বেলাবো স্থানীয়ভাবে সর্বাধিক কাকরোল উৎপাদনে শীর্ষে। এখানকার গ্রাম থেকে কাকরোল সরাসরি ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য বড় শহরে পাঠানো হয়, যা কৃষক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের উপকারে আসছে।

যদিও কার্গো পরিবহনে বিমান খরচ বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা কমছে রপ্তানি চাহিদা, তবে আন্তর্জাতিক বাজারে এর আবেদন ক্রমশ বাড়ছে। পাইকাররা আকার অনুযায়ী কাকরোল কিনতে কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় কিনছেন। কৃষকরা সরাসরি বাজারে আনয়ন করে বেশি লাভ করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য মতে, এ বছর নরসিংদীতে ১,৪৮৫ হেক্টর জমিতে মোট ২৮,৪৭৮ মেট্রিক টন কাকরোল উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০০ মেট্রিক টন রপ্তানি হয়েছে বিদেশে। উৎপাদন আরও বাড়ানোর জন্য আধুনিক প্রযুক্তি, সার ও উন্নত বীজের সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কৃষকরা বলছেন, উৎপাদন খরচ কিছু বেড়ে গেলেও লাভের পরিমাণ বর্তমানে আগের চেয়ে সন্তোষজনক। শিবপুরের সবুজপাহাড় গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের (৪৫) বলেন, “কাকরোল চাষে বিনিয়োগ কম, কিন্তু মুনাফা বেশি। আমি ২০ শতাংশ জমিতে ৮০ হাজার টাকা খরচ করে ইতিমধ্যে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় করেছি, আর বাকি ফসল থেকে আরও ৩৫–৪০ হাজার টাকা আয়ের আশা করছি।”

বেলাবোর বিন্নাবাইদের কাকরোল চাষের খেতের মালিক ফাতেমা বেগম (৩৮) জানিয়েছেন, “আমি ৩২ শতাংশ জমিতে কাকরোল চাষ করেছি। এর আয়ে আমার পরিবার ভরপুর চলে, আবার সন্তানদের পড়াশোনার খরচও জোটে।”

শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া (৫৫) বলেন, “সার ও শ্রমিকের খরচ বেড়ে গেলেও কাকরোলের চাষ লাভজনকভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে।”

বারৈচা বাজারের আড়তদার আবুল হাসান বললেন, “দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা এখানে এসে আকার ও মান অনুযায়ী প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায় কাকরোল কিনে থাকেন।”

স্থানীয় কৃষকদের বিশ্বাস, নরসিংদীর এই সফলতা প্রমাণ করে যে, পরিকল্পিত সহায়তা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাংলাদেশের সবজি খাত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম বড় উৎস হয়ে উঠবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মুহাম্মদ আব্দুল হাই বলেন, “আমরা কৃষকদের সবজি উৎপাদন ও বিপণনকে আগের থেকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে কাজ করছি। কাকরোল এখন আর শুধু স্থানীয় ফসল নয়, এটি কীটনাশকমুক্ত ও মানসম্পন্ন উৎপাদনের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম।”

ট্যাগ :
সর্বাধিক পঠিত

দৌলতপুরে মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান, অবৈধ জাল জব্দ ও জেলেকে জরিমানা

নরসিংদীর কীটনাশকমুক্ত কাকরোল আন্তর্জাতিক বাজারে জনপ্রিয়তা পেল

প্রকাশিতঃ ১০:৪৯:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫

সবজির জন্য জনপ্রিয় নরসিংদী এখন গ্রীষ্মকালীন সবজি কাকরোলের (কাঁকড়া) উৎপাদন ও রপ্তানির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। একসময় এই সবজি শুধুমাত্র স্থানীয় বাজারের চাহিদা মেটাতো, бірақ এখন এটি ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য সহ বিশ্বজুড়ে রপ্তানি হচ্ছে। স্বাস্থ্য সচেতন ভোক্তা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে এর বড় আকার, আকর্ষণীয় চেহারা এবং উন্নত স্বাদ ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

বেলাবো উপজেলার বারৈচা বাজার এখন কাকরোলের ব্যবসার অন্যতম কেন্দ্র। মৌসুমে প্রতিদিন শত শত টন কাকরোল এখানে পৌঁছায়। শ্রমিকরা আকার অনুযায়ী কাকরোলগুলো বাছাই করে ঝুড়ি, বস্তা ও ক্রেটে প্যাকেজ করে। কৃষকরা জানিয়েছেন, এ আয়ে প্রতিদিন কোটি টাকার লেনদেন হয়, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করছে।

নরসিংদীর ছয় উপজেলার মধ্যে শিবপুর ও বেলাবো স্থানীয়ভাবে সর্বাধিক কাকরোল উৎপাদনে শীর্ষে। এখানকার গ্রাম থেকে কাকরোল সরাসরি ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য বড় শহরে পাঠানো হয়, যা কৃষক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের উপকারে আসছে।

যদিও কার্গো পরিবহনে বিমান খরচ বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা কমছে রপ্তানি চাহিদা, তবে আন্তর্জাতিক বাজারে এর আবেদন ক্রমশ বাড়ছে। পাইকাররা আকার অনুযায়ী কাকরোল কিনতে কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় কিনছেন। কৃষকরা সরাসরি বাজারে আনয়ন করে বেশি লাভ করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য মতে, এ বছর নরসিংদীতে ১,৪৮৫ হেক্টর জমিতে মোট ২৮,৪৭৮ মেট্রিক টন কাকরোল উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০০ মেট্রিক টন রপ্তানি হয়েছে বিদেশে। উৎপাদন আরও বাড়ানোর জন্য আধুনিক প্রযুক্তি, সার ও উন্নত বীজের সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কৃষকরা বলছেন, উৎপাদন খরচ কিছু বেড়ে গেলেও লাভের পরিমাণ বর্তমানে আগের চেয়ে সন্তোষজনক। শিবপুরের সবুজপাহাড় গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের (৪৫) বলেন, “কাকরোল চাষে বিনিয়োগ কম, কিন্তু মুনাফা বেশি। আমি ২০ শতাংশ জমিতে ৮০ হাজার টাকা খরচ করে ইতিমধ্যে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় করেছি, আর বাকি ফসল থেকে আরও ৩৫–৪০ হাজার টাকা আয়ের আশা করছি।”

বেলাবোর বিন্নাবাইদের কাকরোল চাষের খেতের মালিক ফাতেমা বেগম (৩৮) জানিয়েছেন, “আমি ৩২ শতাংশ জমিতে কাকরোল চাষ করেছি। এর আয়ে আমার পরিবার ভরপুর চলে, আবার সন্তানদের পড়াশোনার খরচও জোটে।”

শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া (৫৫) বলেন, “সার ও শ্রমিকের খরচ বেড়ে গেলেও কাকরোলের চাষ লাভজনকভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে।”

বারৈচা বাজারের আড়তদার আবুল হাসান বললেন, “দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা এখানে এসে আকার ও মান অনুযায়ী প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায় কাকরোল কিনে থাকেন।”

স্থানীয় কৃষকদের বিশ্বাস, নরসিংদীর এই সফলতা প্রমাণ করে যে, পরিকল্পিত সহায়তা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাংলাদেশের সবজি খাত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম বড় উৎস হয়ে উঠবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মুহাম্মদ আব্দুল হাই বলেন, “আমরা কৃষকদের সবজি উৎপাদন ও বিপণনকে আগের থেকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে কাজ করছি। কাকরোল এখন আর শুধু স্থানীয় ফসল নয়, এটি কীটনাশকমুক্ত ও মানসম্পন্ন উৎপাদনের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম।”