ফিলিস্তিনের গাজায় খাবার ও ওষুধ পৌঁছে দিতে পরিকল্পিত আন্তর্জাতিক নৌবহর ‘সুমুদ ফ্লোটিলা’ গত বুধবার রাতের দুর্ঘটনায় ব্যাপক আলোচনায় আসে। ইসরায়েলি সেনাদের হামলার সময়, স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে অবস্থানরত দুজন ওয়েব ডেভেলপার দ্রুত এগিয়ে যান বহরের নৌযানগুলোর গতিবিধি পর্যবেক্ষণে। বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ তখন অনলাইনে এসব জাহাজের অবস্থান ও পরিস্থিতি দেখছিলেন। তাদের ক্যামেরা থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত ঝাপসা ফুটেজ ও ওয়েবসাইটে আপলোড হওয়া ভিডিও দেখা যায় যে, এই নৌবহরটি ইসরায়েলি নৌবাধা অতিক্রমের জন্য সরকারি ও সামাজিকভাবে সমর্থন পেয়ে এগুচ্ছে। ডেভেলপাররা এই মুহূর্তে নৌযানগুলোর স্থান হালনাগাদ করছিলেন এবং প্রতিটি জাহাজের ছোট ভিডিও আপলোড করে যাচ্ছিলেন। এই রিপোর্ট অনুযায়ী, ওয়েবসাইটে ওই সময় একদিনে ২৫ লাখ, আর পরের দিন ৩৫ লাখ ভিজিট রেকর্ড করা হয়—যা নজিরবিহীন। রূপান্তরিত লিজি ম্যালকম, একটি ডিজাইন ও সফটওয়্যার কোম্পানির সহ-প্রধান, রয়টার্সকে বলেছেন, “আমি আগে কখনো এই ধরনের সংখ্যার মুখোমুখি হইনি, নিশ্চয়ই আমার তৈরি কোনও ওয়েবসাইটে নয়।” এই উদ্যোগের প্রচারণা ও কার্যক্রম দ্রুত আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করে। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা মূল লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলি নৌবাধা ভেঙে গাজায় প্রয়োজনীয় খাবার ও ওষুধ পৌঁছে দেওয়া। এই অবরোধের কারণে চলতি দুই বছর ধরে গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, যেখানে হামাসের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইসরায়েল এই এলাকায় অবরোধ আরোপ করে আসছে। এই ফ্লোটিলাহতে প্রায় ৫০০ জন সংসদ সদস্য, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মীসহ ৪০টিরও বেশি বেসামরিক জাহাজ ছিল। তাদের মধ্যে সুইডেনের মানবাধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও ছিলেন। তবে, এই জাহাজগুলো গাজায় পৌঁছাতে পারেনি; ইসরায়েলি সেনারা তাদের আটকে দেয় এবং জাহাজগুলোকে দেশটির জলসীমায় নিয়ে যায়। এই বাধা সত্ত্বেও, এই আন্দোলন মাত্র ১০ দিনের মধ্যেই আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত হয়ে ওঠে। এই উদ্যোগকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়েছে নতুন কয়েকটি ফ্লোটিলা, যা ইতোমধ্যেই রওনা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমের ব্যাপক প্রচার, আধুনিক জাহাজ ট্র্যাকিং প্রযুক্তি, স্মার্ট ওয়েবসাইট এবং সংগঠনের সমন্বয় এই প্রচেষ্টাকে ব্যাপক শক্তি দিয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে এই অবরোধ বৈধ, তবে আন্তর্জাতিক সমাজের অনেক কেউই এই ফ্লোটিলাকে ‘উসকানিমূলক’ বলে ট্রাইট করছেন। এরই মধ্যে, এই আন্দোলনে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমর্থন সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপ, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো থেকে পাকিস্তান পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে এর প্রতিবাদ ও সমর্থন প্রকাশিত হচ্ছে। গাজায় ২০০৭ সালে হামাসের নিয়ন্ত্রণের পর থেকে ইসরায়েল এই অবরোধ চালিয়ে আসছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরের যুদ্ধের পর থেকে এ আন্দোলন নতুন গতি পায় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনায় আসে। প্রখ্যাত বিশ্লেষক ড্যান মেরসিয়ার মতে, এই আন্দোলন আরও রাজনৈতিক ও সাংস্কুশিত লক্ষ্যেও সফলতা পেয়েছে; দেশগুলো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সংগঠন ও দেশ হাস্যকরভাবেও বড় আকারে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। গ্রিক প্রতিনিধির মতে, এটি আরও বড় কিছু করার পরিকল্পনা ছিল, যার জন্য যোগাযোগ ও অভিজ্ঞতা বিনিময় অব্যাহত ছিল। এই বৃহৎ আন্দোলনের জন্ম হয় বিপুল সমর্থন পাওয়ার ফলস্বরূপ। শুরুতেই গ্রিক প্রতিনিধি জানান, এই প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য প্রায় ২০ হাজার আবেদন জমা পড়েছিল। ইতালির ‘মিউজিক ফর পিস’ সংস্থা মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে ৫০০ টনের বেশি সাহায্য সংগ্রহ করেছিল। ইউরোপ জুড়ে বিভিন্ন সংগঠন ও বন্দরকে ব্যাপকভাবে প্রস্তুত থাকতে দেখা গেছে; তারা ধর্মঘটসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এই বৃহত্তর আন্তর্জাতিক চেষ্টায় তরঙ্গ সৃষ্টি হয়েছে যেখানে নানা দেশের মানুষ ও সংগঠন মুখর হয়ে উঠেছেন গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য। এই আন্দোলন অবরোধের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা ও সমর্থন বাড়িয়ে তুলছে এবং আন্তর্জাতিক সমালোচনাও জোরদার করছে।
সর্বশেষঃ
বিশ্বজুড়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন সুমুদ ফ্লোটিলা
-
শ্রীমঙ্গল২৪ ডেস্ক
- প্রকাশিতঃ ১০:৫১:৫১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫
- 7