সরকার দেশের কর ব্যবস্থা আরো স্বচ্ছ, প্রযুক্তিনির্ভর এবং ব্যবসা বান্ধব করার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান। তিনি বলেন, কর প্রশাসনে সুশৃঙ্খলা ও দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ডিজিটালাইজেশন এবং কর আইন সংস্কার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বুধবার আগারগাঁওয়ে এনবিআর কার্যালয়ে ফরেন ইনভেস্টর্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ‘মিট দ্যা বিজনেস’ শীর্ষক অংশীজন সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুর রহমান খান জানান, আয়কর আইন ২০২৩-এর ইংরেজি সংস্করণ মুদ্রণের জন্য সরকারি প্রেসে পাঠানো হয়েছে, কাস্টমস আইন টেকনিক্যালাল চেক-অপের মধ্যে এবং ভ্যাট আইনও চূড়ান্ত পর্যায়ে। তিনি বলেন, ‘শিগগিরই এই তিনটি অগ্রগামী কর আইন—আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট—অফিসিয়ালি ইংরেজিতে প্রকাশিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, কর ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য কিছু নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ‘গত বছর আমরা করদাতাদের নগদ ফেরত দিতে পারিনি, এবার আমরা এটি বাস্তবায়নের পথে আছি,’ তিনি জানান।
এছাড়াও, তিনি জানান, আগামী বছর থেকে করপোরেট ট্যাক্স রিটার্ন সম্পূর্ণ অনলাইনে জমা দেওয়া হবে, যা স্বচ্ছতা নিয়ে আসবে। ‘এতে তথ্য বিকৃতি বা পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে না— এতে দেশে একটি কার্যকর এবং সচ্ছ কর ব্যবস্থা গড়ে উঠবে,’ এনবিআর চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন।
রহমান বলেন, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজস্ব আদায় প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে গত বছর এই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৩ শতাংশ।
তিনি আরও জানান, এনবিআর শিগগিরই ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো (NSW) সিস্টেমে দ্বৈত কর সংক্রান্ত সার্টিফিকেট ইস্যু প্রক্রিয়াটিকে সম্পূর্ণ ডিজিটাল করবে। এখন পর্যন্ত, সিঙ্গেল উইন্ডোর মাধ্যমে ৬ লাখ ২৫ হাজারের বেশি সার্টিফিকেট ও পারমিট ইস্যু হয়েছে, যার ৮০ শতাংশই জমির এক ঘণ্টার মধ্যে প্রদান করা হয়।
অন্যদিকে, অনিয়মের বিরুদ্ধে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। করদাতাদের হয়রানি এড়াতে আমরা শূন্য সহনশীলতা বজায় রাখব।’
ন্যায্য শুল্ক মূল্যায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি অবশ্যই মূল লেনদেনের প্রকৃত মূল্য অনুযায়ী হতে হবে। অতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয় আদায় করা উচিত নয়।’
উপসংহারে, তিনি বলেন, ‘একটি আধুনিক, ন্যায়সঙ্গত এবং প্রযুক্তিনির্ভর কর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা সরকারের আস্থা, ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা এবং করদাতাদের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে চাই।’