০৪:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
উপদেষ্টা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানাবে সরকারকে মতামত সমন্বয় করে: আলী রীয়াজ জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে ১৫ অক্টোবর হবে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগের উন্নয়নে সরকারের নতুন উদ্যোগ শুক্রবারের মধ্যে জুলাই সংবিধানের চূড়ান্ত রোডম্যাপ প্রকাশের আশা স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট নভেম্বরের মধ্যে চায় জামায়াত হাসিনার বিরুদ্ধে আজ সাক্ষ্য দেবেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এনবিআরের সিদ্ধান্ত: এমপি কোটার ৩০ বিলাসবহুল গাড়ি নিলামে বিক্রির পরিবর্তে হস্তান্তর

যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তানে আকাশযুদ্ধ ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির অনুমোদন

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের কাছে আধুনিক মাঝারি পাল্লার আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এআইএম-১২০ এর উন্নত সংস্করণ বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সম্পর্কের নতুন দিকের সূচনা হয়, যেখানে ইসলামাবাদকে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের নতুন ক্রেতাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক সরকারি ঘোষণায় জানিয়েছে, পাকিস্তানের জন্য এই অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এনডিটিভির একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্ত আসে মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে স্বাগত জানিয়েছেন।

চুক্তির বর্ণনা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রে-থিয়ন একটি পূর্বের প্রতিরক্ষা চুক্তির সংশোধিত সংস্করণে ৪১.৬ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত বরাদ্দ পেয়েছে। এর মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্রের সি-৮ ও ডি-৩ মডেল তৈরি হবে। এই সংশোধিত চুক্তিতে পাকিস্তানকে যুক্ত করার ফলে এই প্রকল্পের মোট মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মে মাসের মধ্যে এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের কাজ সম্পন্ন হবে।

এই চুক্তির আওতায় পাকিস্তান ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড, জার্মানি, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, সৌদি আরব, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইসরাইল ও তুরস্কসহ মোট ৩০টির বেশি দেশের সঙ্গে এই অস্ত্র বিক্রির চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।

ভারতের জন্য এই অস্ত্রের অর্থনৈতিক ও সামরিক প্ৰভাব ব্যাপক। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, পাকিস্তান এফ-১৬ যুদ্ধবিমানে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের আকাশযুদ্ধ ক্ষমতা আরও জোরদার করবে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, ২০১৯ সালে ভারতীয় মিগ-২১ বিমানের বিরুদ্ধে পাকিস্তান এই ক্ষেপণাস্ত্র চালিয়েছিল, যা তখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

বিস্তারিত জানানো হয় যে, এআইএম-১২০ সি-৮ সংস্করণটি মূল ডি-শ্রেণির রপ্তানি সংস্করণ, যা পাকিস্তান আগেই সি-৫ সংস্করণের ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে থাকলেও এখন তারা নতুন এই সংস্করণে উন্নতি করছে। এই ক্ষেপণাস্ত্র মূলত বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দীর্ঘ-পাল্লার আকাশযুদ্ধ অস্ত্র, যার বিশেষত্ব হলো ‘লক্ষ্যে ছুড়ে ভুলে যাও’ বা ফায়ার এন্ড ফরগেট প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি পাইলটের নির্দেশনা ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে দীর্ঘ দূরত্বে লক্ষ্য শনাক্ত করে আঘাত হানতে সক্ষম।

সম্প্রতি পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মধ্যে নতুন দিক স্পষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে কয়েক দিনের সংঘাতে পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান স্বীকার করে সম্মিলিত শান্তির জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভূমিকা ছিলেন মুখ্য। এমনকি, ইসলামাবাদ ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টার জন্য নোবেল পুরস্কারের জন্যও প্রস্তাব করেছে। অন্যদিকে, ভারতের দাবি, এই শান্তি সমঝোতা দ্বিপক্ষীয় সামরিক আলোচনার মাধ্যমে হয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো মধ্যস্থতা ছিল না।

বিশ্লেষকদের মতে, এই অস্ত্র বিক্রি দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্যে নতুন মাত্রা যোগ করছে। ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এতে পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান আরও শক্তিশালী হবে, যা নিয়ন্ত্রণ রেখা এলাকায় সামরিক ভারসাম্য ক্ষুণ্ণ করতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, এই অস্ত্র বিক্রি ‘আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ক্ষুণ্ণ করবে না’, কিন্তু বাস্তবে এটি দিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্কের সূক্ষ্ম ভারসাম্য নতুন করে প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে।

পাকিস্তানের জন্য এটি কেবলমাত্র সামরিক শক্তি বৃদ্ধির পদক্ষেপই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের গভীরতারও একটি চিহ্ন। এই ব্যাপারটি স্পষ্ট করে দেয় যে, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নতুন পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে।

ট্যাগ :
সর্বাধিক পঠিত

বিজয় থালাপতির বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ

যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তানে আকাশযুদ্ধ ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির অনুমোদন

প্রকাশিতঃ ১০:৫৩:২৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের কাছে আধুনিক মাঝারি পাল্লার আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এআইএম-১২০ এর উন্নত সংস্করণ বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সম্পর্কের নতুন দিকের সূচনা হয়, যেখানে ইসলামাবাদকে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের নতুন ক্রেতাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক সরকারি ঘোষণায় জানিয়েছে, পাকিস্তানের জন্য এই অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এনডিটিভির একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্ত আসে মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে স্বাগত জানিয়েছেন।

চুক্তির বর্ণনা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রে-থিয়ন একটি পূর্বের প্রতিরক্ষা চুক্তির সংশোধিত সংস্করণে ৪১.৬ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত বরাদ্দ পেয়েছে। এর মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্রের সি-৮ ও ডি-৩ মডেল তৈরি হবে। এই সংশোধিত চুক্তিতে পাকিস্তানকে যুক্ত করার ফলে এই প্রকল্পের মোট মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মে মাসের মধ্যে এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের কাজ সম্পন্ন হবে।

এই চুক্তির আওতায় পাকিস্তান ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড, জার্মানি, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, সৌদি আরব, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইসরাইল ও তুরস্কসহ মোট ৩০টির বেশি দেশের সঙ্গে এই অস্ত্র বিক্রির চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।

ভারতের জন্য এই অস্ত্রের অর্থনৈতিক ও সামরিক প্ৰভাব ব্যাপক। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, পাকিস্তান এফ-১৬ যুদ্ধবিমানে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের আকাশযুদ্ধ ক্ষমতা আরও জোরদার করবে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, ২০১৯ সালে ভারতীয় মিগ-২১ বিমানের বিরুদ্ধে পাকিস্তান এই ক্ষেপণাস্ত্র চালিয়েছিল, যা তখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

বিস্তারিত জানানো হয় যে, এআইএম-১২০ সি-৮ সংস্করণটি মূল ডি-শ্রেণির রপ্তানি সংস্করণ, যা পাকিস্তান আগেই সি-৫ সংস্করণের ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে থাকলেও এখন তারা নতুন এই সংস্করণে উন্নতি করছে। এই ক্ষেপণাস্ত্র মূলত বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দীর্ঘ-পাল্লার আকাশযুদ্ধ অস্ত্র, যার বিশেষত্ব হলো ‘লক্ষ্যে ছুড়ে ভুলে যাও’ বা ফায়ার এন্ড ফরগেট প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি পাইলটের নির্দেশনা ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে দীর্ঘ দূরত্বে লক্ষ্য শনাক্ত করে আঘাত হানতে সক্ষম।

সম্প্রতি পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মধ্যে নতুন দিক স্পষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে কয়েক দিনের সংঘাতে পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান স্বীকার করে সম্মিলিত শান্তির জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভূমিকা ছিলেন মুখ্য। এমনকি, ইসলামাবাদ ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টার জন্য নোবেল পুরস্কারের জন্যও প্রস্তাব করেছে। অন্যদিকে, ভারতের দাবি, এই শান্তি সমঝোতা দ্বিপক্ষীয় সামরিক আলোচনার মাধ্যমে হয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো মধ্যস্থতা ছিল না।

বিশ্লেষকদের মতে, এই অস্ত্র বিক্রি দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্যে নতুন মাত্রা যোগ করছে। ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এতে পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান আরও শক্তিশালী হবে, যা নিয়ন্ত্রণ রেখা এলাকায় সামরিক ভারসাম্য ক্ষুণ্ণ করতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, এই অস্ত্র বিক্রি ‘আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ক্ষুণ্ণ করবে না’, কিন্তু বাস্তবে এটি দিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্কের সূক্ষ্ম ভারসাম্য নতুন করে প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে।

পাকিস্তানের জন্য এটি কেবলমাত্র সামরিক শক্তি বৃদ্ধির পদক্ষেপই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের গভীরতারও একটি চিহ্ন। এই ব্যাপারটি স্পষ্ট করে দেয় যে, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নতুন পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে।