০৩:০৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
নবীনগরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হামলা-গুলিবর্ষণে নিহত ১, আহত ৩ নোয়াখালীতে গ্রাম আদালত বিষয়ক দ্বিতীয় ব্যাচের প্রশিক্ষণ শুরু জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, জাতীয় নির্বাচনের পরে তাবলিগের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে সরকার আশাবাদী সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে, ইসি আনোয়ারের দাবি সমাজ-রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী জড়িত নয়: রুহুল কবির রিজভী সারাদেশে ডিম ও মুরগি উৎপাদন বন্ধের ঘোষণা ফিলিস্তিনি বন্দিকে নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস, শীর্ষ ইসরাইলি জেনারেলের পদত্যাগ ভৈরবে মেঘনা নদী থেকে ভারতীয় ৬০ বস্তা ফুসকা ও ব্লেড সহ ৪ জন আটক কুলাউড়া সীমান্তে ১৩ ভারতীয় গরু আটক বিজিবির সীমান্তে আরাকান আর্মির পুতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে নিহত নায়েক আক্তার হোসেনের দাফন সম্পন্ন

জয়পুরহাটে অপ্র্যাপ্ত সময়ের বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা

জয়পুরহাট শিল্পে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আলু উৎপাদক জেলা হিসেবে পরিচিত। গত বছর এই জেলায় উপজাতীয় পাশে লাখ লাখ বস্তার আলু হিমাগারে সংরক্ষিত রয়েছে, যা কৃষকদের জন্য বড় ধরনের লাভের আশা তৈরি করেছিল। তবে, বর্তমানে এ জেলায় ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে পাঁচটি উপজেলার বিভিন্ন জমিতে অতিরিক্ত জল জমে গেছে। কৃষকেরা আগাম আলু রোপণের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন, কিন্তু এখন বৃষ্টির পানিতে জমে থাকা জমিতে আলুর বীজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে তারা খুবই উদ্বিগ্ন। এর পাশাপাশি রোপা আমন ধান ও বিভিন্ন শীতকালীন শাক-সবজির ক্ষতির সম্ভাবনাও জোরালো হয়েছে। এখনো কিছু জমিতে ধানের গাছ ঝুঁকে পড়েছে আর পানিতে ভাসছে, অন্যদিকে সরিষা ও শাকসবজির চাষও মার খাচ্ছে। জেলার কৃষকদের মতে, গত বছর আলুর দরকারি দাম না পাওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এবছর লাভের প্রত্যাশায় তারা আগাম আলু চাষ শুরু করেছিলেন। কিন্তু এবার আবহাওয়ার এই অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে তারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন। কৃষকদের মত, বৃষ্টির পানির কারণে আলুর বীজ পচে গেলে ব্যাপক সংকট সৃষ্টি হবে মাঠে। এছাড়া, জমিতে পানি জমে থাকা কারণে ধানের গাছও নুয়ে পড়েছে। সদর উপজেলার কৃষক গোলাপ হোসেন বলেন, গত বছর আলুর দাম ভালো ছিল না, এ কারণে এই বছর আগাম আলু চাষের জন্য তিনি দেড় বিঘা জমিতে বীজ রোপণ করেছিলেন। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় তার ব্যবসা ঝুঁকিতে পড়েছে। অন্য একজন কৃষক আব্দুল রশিদ বলেন, মাত্র এক সপ্তাহ আগে তিনি এক বিঘা জমিতে আলুর বীজ রোপণ করেছিলেন। এখন বৃষ্টির পানিতে বীজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা করছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জমি প্রস্তুত ছিল আলু চাষের জন্য, তবে বর্ষার কারণে অনেক জমিতে পানি জমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকেরা পানি সরানোর জন্য চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি, শাকসবজি যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, বেগুন ও অন্যান্য শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে আধা-পাকা ধানের গাছও পানিতে ডুবে গেছে। কৃষকদের অভিযোগ, রোপণের সময় প্রচুর টাকায় সার কেনা হলেও, বর্ষার পানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জমি। তারা এখন বেশ চিন্তিত। শত্রু উপজেলার কৃষক খায়রুল ইসলাম বলেন, আগে আলু চাষ করে অনেক লোকসান হয়েছে, এবার ভালো দাম পাওয়ার আশায় তারা নতুন করে আলু রোপণ করেছিলেন। কিন্তু প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের কারণে পরিস্থিতি অনির্দেশ্য হয়ে উঠেছে। একইভাবে, কালাই উপজেলার ধানকাটার মৌসুম কাছাকাছি থাকলেও, এখনো ধান ঝুঁকে পড়েছে ও গড়াগড়ি খাচ্ছে পানিতে। ধাপ গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, সার সিন্ডিকেটের কারণে প্রয়োজনীয় সার পাইনা। দুর্ভাগ্যবশত, উচ্চ মূল্য দিয়ে সার কিনে আবার বৃষ্টির কারণে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে তিনি ও দায়সারা কৃষকরা ক্ষতির মুখে। অন্যদিকে, তেলাল গ্রামের খায়রুল ইসলাম ও আব্দুল আজিজ বলেন, গত কয়েক দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে কাঁচা মরিচ, টমেটো, বেগুন ও অন্যান্য সবজির ক্ষতি হয়েছে। অনেক গাছের গোড়া পচে গেছে ও ফুল-আমসত্তা ঝরে গেছে। কৃষকেরা এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন, তারা ভাবছেন এই বৃষ্টির কারণে চাষের খরচের টাকা উঠবে কি না। জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ এ কে এম সাদিকুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন উপজেলার প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কয়েকদিনের এই অসময়ের বর্ষণে জয়পুরহাটের বেশ কিছু শাকসবজি, আমন ধান ও আগাম আলুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে, এখনই পূর্ণাঙ্গ হিসাব পাওয়া না গেলেও, বেশি ক্ষতি এখনও হয়নি। বর্ষণ খুব ভারী হয়নি, মূলত আলুর রোপণ কাজ শুরু হয়েছে এবং শীতকালীন সবজি ও ধানের ক্ষতি খুব বেশি হওয়ার সম্ভবনা নেই। তবে, কৃষকরা এই অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে তাদের ফসলের জন্য অশান্তির মধ্যে রয়েছেন, কারণ অব্যাহত জলাবদ্ধতা ও ক্ষতি এড়াতে তারা এখনো বেশ চিন্তিত।

ট্যাগ :

জয়পুরহাটে অপ্র্যাপ্ত সময়ের বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা

প্রকাশিতঃ ১১:৫৪:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫

জয়পুরহাট শিল্পে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আলু উৎপাদক জেলা হিসেবে পরিচিত। গত বছর এই জেলায় উপজাতীয় পাশে লাখ লাখ বস্তার আলু হিমাগারে সংরক্ষিত রয়েছে, যা কৃষকদের জন্য বড় ধরনের লাভের আশা তৈরি করেছিল। তবে, বর্তমানে এ জেলায় ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে পাঁচটি উপজেলার বিভিন্ন জমিতে অতিরিক্ত জল জমে গেছে। কৃষকেরা আগাম আলু রোপণের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন, কিন্তু এখন বৃষ্টির পানিতে জমে থাকা জমিতে আলুর বীজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে তারা খুবই উদ্বিগ্ন। এর পাশাপাশি রোপা আমন ধান ও বিভিন্ন শীতকালীন শাক-সবজির ক্ষতির সম্ভাবনাও জোরালো হয়েছে। এখনো কিছু জমিতে ধানের গাছ ঝুঁকে পড়েছে আর পানিতে ভাসছে, অন্যদিকে সরিষা ও শাকসবজির চাষও মার খাচ্ছে। জেলার কৃষকদের মতে, গত বছর আলুর দরকারি দাম না পাওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এবছর লাভের প্রত্যাশায় তারা আগাম আলু চাষ শুরু করেছিলেন। কিন্তু এবার আবহাওয়ার এই অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে তারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন। কৃষকদের মত, বৃষ্টির পানির কারণে আলুর বীজ পচে গেলে ব্যাপক সংকট সৃষ্টি হবে মাঠে। এছাড়া, জমিতে পানি জমে থাকা কারণে ধানের গাছও নুয়ে পড়েছে। সদর উপজেলার কৃষক গোলাপ হোসেন বলেন, গত বছর আলুর দাম ভালো ছিল না, এ কারণে এই বছর আগাম আলু চাষের জন্য তিনি দেড় বিঘা জমিতে বীজ রোপণ করেছিলেন। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় তার ব্যবসা ঝুঁকিতে পড়েছে। অন্য একজন কৃষক আব্দুল রশিদ বলেন, মাত্র এক সপ্তাহ আগে তিনি এক বিঘা জমিতে আলুর বীজ রোপণ করেছিলেন। এখন বৃষ্টির পানিতে বীজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা করছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জমি প্রস্তুত ছিল আলু চাষের জন্য, তবে বর্ষার কারণে অনেক জমিতে পানি জমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকেরা পানি সরানোর জন্য চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি, শাকসবজি যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, বেগুন ও অন্যান্য শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে আধা-পাকা ধানের গাছও পানিতে ডুবে গেছে। কৃষকদের অভিযোগ, রোপণের সময় প্রচুর টাকায় সার কেনা হলেও, বর্ষার পানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জমি। তারা এখন বেশ চিন্তিত। শত্রু উপজেলার কৃষক খায়রুল ইসলাম বলেন, আগে আলু চাষ করে অনেক লোকসান হয়েছে, এবার ভালো দাম পাওয়ার আশায় তারা নতুন করে আলু রোপণ করেছিলেন। কিন্তু প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের কারণে পরিস্থিতি অনির্দেশ্য হয়ে উঠেছে। একইভাবে, কালাই উপজেলার ধানকাটার মৌসুম কাছাকাছি থাকলেও, এখনো ধান ঝুঁকে পড়েছে ও গড়াগড়ি খাচ্ছে পানিতে। ধাপ গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, সার সিন্ডিকেটের কারণে প্রয়োজনীয় সার পাইনা। দুর্ভাগ্যবশত, উচ্চ মূল্য দিয়ে সার কিনে আবার বৃষ্টির কারণে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে তিনি ও দায়সারা কৃষকরা ক্ষতির মুখে। অন্যদিকে, তেলাল গ্রামের খায়রুল ইসলাম ও আব্দুল আজিজ বলেন, গত কয়েক দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে কাঁচা মরিচ, টমেটো, বেগুন ও অন্যান্য সবজির ক্ষতি হয়েছে। অনেক গাছের গোড়া পচে গেছে ও ফুল-আমসত্তা ঝরে গেছে। কৃষকেরা এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন, তারা ভাবছেন এই বৃষ্টির কারণে চাষের খরচের টাকা উঠবে কি না। জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ এ কে এম সাদিকুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন উপজেলার প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কয়েকদিনের এই অসময়ের বর্ষণে জয়পুরহাটের বেশ কিছু শাকসবজি, আমন ধান ও আগাম আলুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে, এখনই পূর্ণাঙ্গ হিসাব পাওয়া না গেলেও, বেশি ক্ষতি এখনও হয়নি। বর্ষণ খুব ভারী হয়নি, মূলত আলুর রোপণ কাজ শুরু হয়েছে এবং শীতকালীন সবজি ও ধানের ক্ষতি খুব বেশি হওয়ার সম্ভবনা নেই। তবে, কৃষকরা এই অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে তাদের ফসলের জন্য অশান্তির মধ্যে রয়েছেন, কারণ অব্যাহত জলাবদ্ধতা ও ক্ষতি এড়াতে তারা এখনো বেশ চিন্তিত।