০১:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
দুর্গাপূজায় ভারতে রপ্তানি হবে ১২০০ টন ইলিশ দুদকের হাসপাতালের বিল গ্রহণে আসামি, বরখাস্থ হয়েছেন পরিচালক খান মো. মীজানুল ইসলাম পুরানো দিনের বাইস্কোপ এখন শুধুই স্মৃতি যুক্তরাষ্ট্রের আয়রন ডোম প্রকল্পের নেতৃত্বে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শরিফুল খান ডাকসু নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাতীয় স্বার্থে বস্তুনিষ্ঠ ও জবাবদিহীমূলক গণমাধ্যম অপরিহার্য: পরিবেশ উপদেষ্টা পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাজে ফিরতে নির্দেশ নারী ও শিশুদের জন্য সাইবার স্পেস নিরাপদ করতে উদ্যোগ জরুরি: উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশীদ নির্বাচনের সময় গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ নিশ্চিতের আহ্বান আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস আজ

তিস্তা স্পার বাঁধের অব্যাহত ধ্বংসের ঝুঁকি: অবৈধ বালু উত্তোলন বাঁধকে বিপন্ন করে তুলছে

অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে তিস্তা নদীর তীরবর্তী আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সলেডি স্পার বাঁধ একের পর এক ধ্বংসের মুখে পড়ছে। এই বাঁধটির নির্মাণ ব্যয় ছিল প্রায় ৫ কোটি টাকা, যা নদীর পানির ভাঙন ঠেকাতে নির্মিত হয়েছিল লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের গোবর্দ্ধন গ্রামে। কিন্তু এখন বাঁধের একশো গজ ভাটিতে বোমা মেশিন বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে একটি চক্র, যা বাঁধের শক্তিকে মারাত্মকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। প্রশাসনের চোখের আড়াল করে এই বেআইনি কার্যক্রম চলাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, ২০০২ সালে তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এই বাঁধ নির্মাণ করে। তবে এখন এই বাঁধের পাশে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে এক চক্র, যার নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের এপিএস মিজানুর রহমানের ঘনিষ্ঠ শওকত হোসেন বা বালু শওকত। গত ১১ বছর ধরে তিনি তিস্তা নদীর বালু উত্তোলন ও বিক্রির ব্যবসা দেখে আসছেন। যদিও মিজান এখন পলাতক, তবুও শওকত পাল্টে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সরকারি কথিত নানা অজুহাতে এই চক্র তিস্তার বালু উত্তোলন করছে। বর্তমানেও তারা সরকারি কাজের অজুহাতে বাঁধের কাছের ভাটিতে বালু তোলা চালাচ্ছেন। এই বালু উত্তোলনের জন্য ব্যবহৃত বোমা মেশিনটি বাঁধের প্রায় একশ গজ দূরে রাখা হয়েছে, যা বাঁধের স্থিতিস্থাপকতা ও স্থায়িত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে। ফলে বাঁধটি যে কোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে, যা বিপত্মকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। ধসের মুখে পড়বে শত শত বসতভিটা ও আবাদি জমি, আর এতে করে তিস্তার নদীর প্রবল ভাঙন আরও বাড়বে।

সহজভাবে দেখা যায়, বাঁধের কাছে স্তূপীকৃত বালুর আনাগোনা কার্যত এখানকার পরিবেশ ও মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। কয়েক দিন আগেই বিভিন্ন স্থানে স্তূপগুলো গড়ে তোলা হয়, যেখানে তখনকার দিনগুলোতে স্থানীয়রা দেখেছেন, এ যেনো অবৈধ বালু ব্যবসার এক চালু ধারাই। শ্রমিকদের মতে, শওকত তার নিজের নির্দেশে এই বালু উত্তোলন কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তবে তারা জানাচ্ছেন, মূল পরিকল্পনাকারীর বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই অবৈধ বালু উত্তোলনে বাঁধের স্থায়িত্ব আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। বন্যার সময় বাঁধটি বেশ কেঁপে উঠে, ואকালে প্রতিবাদ করলে তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ। এ পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের প্রতিবাদে কেউ আওয়াজ তুলতে সাহস পাচ্ছেন না।

শওকত আলী বা বালু শওকত অবশ্য দাবি করেছেন যে, তিনি একটি দিগন্তমূলক প্রকল্পের আওতায় জিও ব্যাগে বালু ভরাটের কাজ করেছেন, এবং এই কাজের জন্য তিনি নির্দিষ্ট একজন ঠিকাদারের সাথে চুক্তিবদ্ধ। তবে বাঁধের ক্ষতি বা অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। পাশাপাশি, মূল ঠিকাদারটির নাম বা নম্বরও তিনি দেননি।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনিল কুমার বলেন, এই বালু ভরাট ও ডাম্পিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। তবে বাঁধের কাছাকাছি মেশিন বসানো ঠিক নয় এবং বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এই ধরণের বেআইনি কার্যক্রম চালিয়ে গেলে আশপাশের সরাই ও বাঁধের ক্ষতি হবে, যা খুবই বিপজ্জনক।

ট্যাগ :

তোশিমিৎসু মোতেগি জাপানের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে দৌড়ে ঘোষে উঠলেন

তিস্তা স্পার বাঁধের অব্যাহত ধ্বংসের ঝুঁকি: অবৈধ বালু উত্তোলন বাঁধকে বিপন্ন করে তুলছে

প্রকাশিতঃ ১০:৫০:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে তিস্তা নদীর তীরবর্তী আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সলেডি স্পার বাঁধ একের পর এক ধ্বংসের মুখে পড়ছে। এই বাঁধটির নির্মাণ ব্যয় ছিল প্রায় ৫ কোটি টাকা, যা নদীর পানির ভাঙন ঠেকাতে নির্মিত হয়েছিল লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের গোবর্দ্ধন গ্রামে। কিন্তু এখন বাঁধের একশো গজ ভাটিতে বোমা মেশিন বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে একটি চক্র, যা বাঁধের শক্তিকে মারাত্মকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। প্রশাসনের চোখের আড়াল করে এই বেআইনি কার্যক্রম চলাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, ২০০২ সালে তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এই বাঁধ নির্মাণ করে। তবে এখন এই বাঁধের পাশে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে এক চক্র, যার নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের এপিএস মিজানুর রহমানের ঘনিষ্ঠ শওকত হোসেন বা বালু শওকত। গত ১১ বছর ধরে তিনি তিস্তা নদীর বালু উত্তোলন ও বিক্রির ব্যবসা দেখে আসছেন। যদিও মিজান এখন পলাতক, তবুও শওকত পাল্টে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সরকারি কথিত নানা অজুহাতে এই চক্র তিস্তার বালু উত্তোলন করছে। বর্তমানেও তারা সরকারি কাজের অজুহাতে বাঁধের কাছের ভাটিতে বালু তোলা চালাচ্ছেন। এই বালু উত্তোলনের জন্য ব্যবহৃত বোমা মেশিনটি বাঁধের প্রায় একশ গজ দূরে রাখা হয়েছে, যা বাঁধের স্থিতিস্থাপকতা ও স্থায়িত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে। ফলে বাঁধটি যে কোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে, যা বিপত্মকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। ধসের মুখে পড়বে শত শত বসতভিটা ও আবাদি জমি, আর এতে করে তিস্তার নদীর প্রবল ভাঙন আরও বাড়বে।

সহজভাবে দেখা যায়, বাঁধের কাছে স্তূপীকৃত বালুর আনাগোনা কার্যত এখানকার পরিবেশ ও মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। কয়েক দিন আগেই বিভিন্ন স্থানে স্তূপগুলো গড়ে তোলা হয়, যেখানে তখনকার দিনগুলোতে স্থানীয়রা দেখেছেন, এ যেনো অবৈধ বালু ব্যবসার এক চালু ধারাই। শ্রমিকদের মতে, শওকত তার নিজের নির্দেশে এই বালু উত্তোলন কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তবে তারা জানাচ্ছেন, মূল পরিকল্পনাকারীর বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই অবৈধ বালু উত্তোলনে বাঁধের স্থায়িত্ব আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। বন্যার সময় বাঁধটি বেশ কেঁপে উঠে, ואকালে প্রতিবাদ করলে তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ। এ পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের প্রতিবাদে কেউ আওয়াজ তুলতে সাহস পাচ্ছেন না।

শওকত আলী বা বালু শওকত অবশ্য দাবি করেছেন যে, তিনি একটি দিগন্তমূলক প্রকল্পের আওতায় জিও ব্যাগে বালু ভরাটের কাজ করেছেন, এবং এই কাজের জন্য তিনি নির্দিষ্ট একজন ঠিকাদারের সাথে চুক্তিবদ্ধ। তবে বাঁধের ক্ষতি বা অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। পাশাপাশি, মূল ঠিকাদারটির নাম বা নম্বরও তিনি দেননি।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনিল কুমার বলেন, এই বালু ভরাট ও ডাম্পিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। তবে বাঁধের কাছাকাছি মেশিন বসানো ঠিক নয় এবং বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এই ধরণের বেআইনি কার্যক্রম চালিয়ে গেলে আশপাশের সরাই ও বাঁধের ক্ষতি হবে, যা খুবই বিপজ্জনক।