জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং গণঅধিকার পরিষদ এর মধ্যে একীভূত হওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক আলোচনা চলছে। গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন এ কথা জানিয়েছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এই প্রক্রিয়ায় কোনো অন্তর্ঘাত বা নেতিবাচক মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে না করে একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কেউ যেন বাধা না দেন। রোববার রাতে নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি এ অনুরোধ জানান।
রাশেদ খাঁন বলেছেন, তরুণদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আলোচনা খুবই ইতিবাচকভাবে এগিয়ে চলছে। যদি আরও শক্তভাবে এই ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাহলে দেশের রাজনীতি অনেক পরিবর্তন দেখে। ইতিহাস বলছে, গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপি নেতাকর্মীরা ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন, ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন, ২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ঘিরে আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময় একসঙ্গে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই দীর্ঘ পথচলার মধ্যে তাদের মধ্যে অনেক পর্যায়ের সংহতি ও সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গণঅভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে একসঙ্গে আন্দোলন করার জন্যও তাদের মধ্যে একটি দৃশ্যমান সখ্যতা তৈরি হয়েছে। মো. রাশেদ খাঁন মনে করেন, দেশের তরুণরা এক হয়ে কাজ করলে পরিবর্তন শিগগিরই আসবে। তিনি এজন্য আরো আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন।
গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপির মধ্যে একীভূত হওয়ার বিষয়ে উভয় দলের নেতাদের মধ্যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, স্বতন্ত্রভাবে একটি বড় জোট বা ব্লক গঠন হচ্ছে যা তরুণদের নিয়ে তৈরি হবে। তিনি আরও জানান, এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের মধ্যে একীভূত হওয়ার গুঞ্জনও দৃঢ়ভাবে সত্যি।
গতকাল সোমবার, নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সাথে এনসিপি প্রতিনিধিদলের বৈঠকের পরে তিনি সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তরে বলেন, নিবন্ধনের জন্য এনসিপি আশা করছে যে, তারা শাপলা প্রতীকে ভোটে লড়ে আগামী একশো পঁচিশটি আসন পাবে বলে অভিমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তিনটি মূল ব্লক তৈরির প্রবণতা রয়েছে। একটো ইসলামিক ব্লক ইতোমধ্যেই গড়ে উঠেছে, অন্যটি বিএনপির নেতৃত্বে তৈরি হচ্ছে আর তৃতীয়টি হচ্ছে নিজেরা নিরপেক্ষ থাকছে। তবে, বিএনপি বা জামায়াতের অংশ না হতে পেরে এনসিপি অন্য ব্লকে যাচ্ছে না বলেও জোর দিয়ে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এনসিপির নেতৃত্বে তরুণদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করবে এবং গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রচার করা হবে। গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে এনসিপির একীভূত হওয়া বিষয়ে তিনি সম্মত হয়েই জানিয়েছেন, আলোচনা চলছে এবং আদর্শগত বিষয়গুলো স্পষ্ট করা হয়েছে, এর সাথে কিছু আসনের বিনিময় বা অর্থের বিষয় না, বরং মূলত নীতিগত বিষয়।
নাসীরুদ্দীন আরো বলেন, গত ১৫ বছরে বিভিন্ন ব্যানার ও সংগঠন অনেকগুলো জোটের আওতায় এসেছে, এখন একক বৃহত্তর তরুণ এলায়েন্স গঠনে এগোচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এনসিপির হাতে এখন কমপক্ষে ১৫০টি আসন থাকবে, যেখানে জামায়াত বা বিএনপি থেকে আসা তরুণরা অংশ নেবে আর যারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছে, তাদেরও সম্মান জানানো হবে।
তিনি বলেন, এটাই আমাদের স্পষ্ট ঘোষণা যে, দেশের সংযোজক সংসদে আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টি থাকছে না। বরং, দীর্ঘদিন ধরে বলছি, এবার হবে বড় ধরনের ভোটপ্রচারণা বা ব্যালটের রিভোলিউশন, যাতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি দুনিয়া থেকে হারিয়ে যায়।
প্রশ্নের উত্তরে, যদি গণঅধিকার পরিষদ এনসিপির সাথে একত্র হয়, তবে তাদের প্রতীক কী থাকবে—এ ব্যাপারে তিনি জানান, দলটির নাম থাকবে এনসিপি, এবং তাদের প্রতীকই অপরিবর্তিত থাকবে। অন্যান্য দলগুলোর নাম বা প্রতীক ভেঙে ফেলবে এবং অনেক দল এনসিপির ব্যানারে ইউনাইট করবে বলে আশা করছেন। এই প্রক্রিয়ায় বড় একটা পার্টি আকারে গড়ে উঠবে, এতে আরও অনেক দল ও ব্যানার যুক্ত হবে ইনশাআল্লাহ।