জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, বিশেষজ্ঞ, রাজনীতি দল ও জোটগুলোর দেয়া মতামত সমন্বয় করে কমিশন আগামী দু-এক দিনের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে সরকারকে পরামর্শ প্রদান করবে। তিনি জানান, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কমিশন জুলাই সনদ প্রণয়ন করছে তার একটি সম্পূর্ণ ও বিস্তারিত প্রতিবেদনও প্রকাশিত হবে, যা খুব শিগগিরই সংশ্লিষ্ট দল ও জোটগুলোকে জানানো হবে। এছাড়া, কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নির্ধারিত ১৫ অক্টোবরে এই ঐতিহাসিক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে অনুষ্ঠিত বৈঠকের শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন। ড. আলী রীয়াজ জানান, ১৫ অক্টোবরের মধ্যে কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে, এবং ইতোমধ্যে বেশ কিছু কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের আশাকরি, আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যেই ‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’ এর চূড়ান্ত স্বাক্ষর সম্পন্ন হবে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এই সনদ স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত, তাই আমরা আরও চেষ্টা করছি দ্রুত এই কাজটি সম্পন্ন করতে। তিনি আরও জানান, ১৮-১৯ অক্টোবরের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়ার উপর একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ হবে। এতে সনদ প্রণয়নের প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক দলগুলোর জমা দেওয়া দলিল এবং সম্মত বিষয়ের পাশাপাশি অসন্তুষ্টির বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ৫ অক্টোবরের আলোচনায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়নে গণভোটের আয়োজন করা হবে। এই বৈঠকের মূল বিষয় ছিল, কিভাবে এবং কখন এই ভোটটি অনুষ্ঠিত হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া। বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে একাধিক বৈঠক ও আলোচনা চালিয়ে যায় গেছে। তাঁরা পরামর্শ দিয়েছেন, এক ধরনের ঘোষণা জারি করে গণভোট আয়োজন করতে হবে, যেখানে সমর্থিত বিষয়গুলো এক অংশে থাকবে এবং নোট অব ডিসেন্স বা ভিন্নমত অন্য অংশে। এই ভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে সংবিধান সংস্করণ ও সংবিধান সংশোধনের জন্য একটি সরকারের অন্তর্ভুক্তি ঘটবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং জোটের মধ্যে কিছু সেটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভোট এবং অন্যরা তার আগে বা পরে ভোটের প্রস্তাব করেন। এছাড়া, আরও জানা গেছে যে, রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে ত্রয়োদশ সংসদে ‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’ বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানে প্রাপ্ত পরিবর্তনের জন্য যথাযথ ক্ষমতা দেওয়া জরুরি। দলগুলো চাইছে, মতামত ও সমর্থনের ভিত্তিতে কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারকে জানাবে। কমিশনের প্রধান ও উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ড. আলী রীয়াজ বলেন, এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ফলশ্রুতি হিসেবে এখন সেই সনদ স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত। তিনি জানান, কমিশনের কর্মকাণ্ডের মধ্যে মূল দায়িত্ব পালন করেছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি সব সময় যোগাযোগ রেখেছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়া দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে, যা ভবিষ্যতেও চলবে। তিনি সকলের দায়িত্ব ও দায়িত্ববোধের কথা উল্লেখ করে বলেন, শুধু একটি স্বাক্ষরই যথেষ্ট নয়, আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দীর্ঘ পথ চলতে হবে। গত বছরে ফ্যাসিবাদ পতনের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠার স্মৃতি আমাদের অমোঘ দায়িত্ব। সমান্তরালভাবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতাও চলবে, তবে ঐক্য বজায় রেখে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে এই ঐক্যই হচ্ছে দেশের অগ্রগতির মূল মূল শক্তি। এই বৈঠকটি দুপুর ২টায় শুরু হয়ে শেষ হয়, যেখানে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি, এবি পার্টিসহ প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ, উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্যরা, ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া। এছাড়াও, জাতীয় ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
সর্বশেষঃ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানাবে সরকারকে মতামত সমন্বয় করে: আলী রীয়াজ
-
শ্রীমঙ্গল২৪ ডেস্ক
- প্রকাশিতঃ ১০:৪৬:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
- 4
ট্যাগ :
সর্বাধিক পঠিত