০২:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
গুম-খুনের অভিযোগে ক্ষমা চেয়ে আয়নাঘরের কথা স্বীকার করলেন র‍্যাব ডিজি ঐক্যের ডাক হাসনাত আব্দুল্লাহর দেশের জন্য ক্ষতিকর চুক্তি বাতিলের দাবি করা হয়েছে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য চলমান অপচেষ্টা নতুন বাংলাদেশের যাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার রমেন রায়ের ওপর হামলার ঘটনাটি পুরোনো, তিনি চিন্ময়ের আইনজীবী নন ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা পশ্চিমবঙ্গের ৮ জেলায় বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ালো ভারত

পেঁয়াজে হঠাৎ কারসাজির ঝাঁজ

পেঁয়াজের বাজারে হঠাৎ করে ঝাঁজ বেড়ে গেছে। অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে পণ্যটির দাম। দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিষয়টিকে বাড়তি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কারসাজি হিসেবে দেখছেন ভোক্তা স্বার্থ নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে উঠলে দাম কমে আসবে। তা ছাড়া ভারত থেকেও প্রচুর আমদানি হচ্ছে পণ্যটি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনুবিভাগের (আইআইটি) অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, দাম নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। ভারত রপ্তানি বন্ধ করেনি। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে কেউ যেন দাম বাড়াতে না পারে, সেই বিষয়ে তদারকিও থাকবে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার, মালিবাগসহ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশি পেঁয়াজের কেজিতে ২০ টাকা দাম বেড়ে হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। গত সপ্তাহের শুরুতেও এটা ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মিয়ানমারের পেঁয়াজের দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ১৫ টাকা দাম বেড়ে এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। এ ছাড়া কেজিতে ২৫ টাকা বেড়ে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম দাঁড়িয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।

গত কয়েক বছর ধরেই সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সময়ে অস্থির হয়ে ওঠে মসলাজাতীয় এই পণ্যটির বাজার। এটা ডিসেম্বর-জানুয়ারি পর্যন্ত গড়ায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ৩০০ টাকা পর্যন্তও দাম ছুঁয়েছে পেঁয়াজ। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থল ও নৌবন্দরের পাশাপাশি উড়োজাহাজে করেও পণ্যটি আনতে হয়েছে। এ বছরও অক্টোবরের শুরুর দিকে হঠাৎ করে দাম বেড়ে যায়। কেজিপ্রতি দাম ওঠে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আমদানিতে শুল্ক্ক প্রত্যাহার করে নেয় সরকার। এতে দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় নেমে এলেও তা স্থায়ী হয়নি বেশিদিন। মাস খানেক বিরতি দিয়ে গত চার-পাঁচ দিনের ব্যবধানে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়ে আবারও ৮০ টাকায় পৌঁছেছে।

হঠাৎ করেই দাম বাড়ার চিত্র পাওয়া গেছে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির দৈনিক বাজার দরের তথ্যেও। সংস্থাটি বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজে বেড়েছে ২৯ শতাংশ। দাম বৃদ্ধির জন্য বৃষ্টিতে পেঁয়াজের ফলন নষ্ট ও মজুদ কমে আসাকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা।

হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের সভাপতি হারুন-উর রশীদের ধারণা, ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়া দেশে দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, ভারতের নাসিক, ব্যাঙ্গালুরুসহ যেসব জায়গায় পেঁয়াজ বেশি উৎপাদন হয় সেসব এলাকায় প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। ফলে পেঁয়াজের মুখে পচন ধরেছে। সে কারণে দেশটিতে দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বাজারেও। শ্যামবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আব্দুল মাজেদ বলেন, বছরের এই সময়টায় দেশি পেঁয়াজের মজুদ কমে আসে। সে কারণে দাম বেড়ে যায়। তবে আগামী সাত-আট দিনের মধ্যেই বাজার স্বাভাবিক হবে। কারণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। আমদানিতেও কোনো সমস্যা নেই। প্রতিদিনই আমদানি হচ্ছে। দু-এক টাকা করে দাম কমতে শুরু করেছে। একই ধরনের মত দিয়েছেন হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের সভাপতি হারুন-উর রশীদ। তিনি বলেন, আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে। প্রতিদিনই পেঁয়াজ আসছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম হাতের নাগালে আসতে পারে। তবে হঠাৎ এই দামবৃদ্ধিকে ‘অস্বাভাবিক’ উল্লেখ করে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, এটা মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের কারসাজি। এখনই দাম বৃদ্ধির লাগাম টানতে হবে। সরকারকে বাজারে তদারকি বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানি স্বাভাবিক রাখতে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় সাশ্রয়ী মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি অব্যাহত রাখবে টিসিবি। সংস্থাটির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে টিসিবি সারাদেশে ৩০ টাকা দরে প্রতিদিন পেঁয়াজ বিক্রি করছে। বিক্রি অব্যাহত থাকবে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। টিসিবির কাছে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ২৫ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ২৯ লাখ ৫৫ হাজার টন। তবে জমি থেকে তোলার সময় নষ্ট হওয়া, নিম্নমান ও পচে যাওয়ার কারণে প্রতিবছর প্রায় ২৫ শতাংশ পেঁয়াজ ফেলে দিতে হয়। ফলে ছয় থেকে সাত লাখ টন আমদানি করা হয়ে থাকে। আমদানি করা পেঁয়াজের ৮ থেকে ১০ শতাংশ প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় নষ্ট হয়। দেশে যত পেঁয়াজ আমদানি হয়, তার ৮০ শতাংশের বেশি ভারত থেকেই আসে।

ট্যাগ :
সর্বাধিক পঠিত

পেঁয়াজে হঠাৎ কারসাজির ঝাঁজ

প্রকাশিতঃ ১২:২০:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২১

পেঁয়াজের বাজারে হঠাৎ করে ঝাঁজ বেড়ে গেছে। অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে পণ্যটির দাম। দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিষয়টিকে বাড়তি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কারসাজি হিসেবে দেখছেন ভোক্তা স্বার্থ নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে উঠলে দাম কমে আসবে। তা ছাড়া ভারত থেকেও প্রচুর আমদানি হচ্ছে পণ্যটি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনুবিভাগের (আইআইটি) অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, দাম নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। ভারত রপ্তানি বন্ধ করেনি। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে কেউ যেন দাম বাড়াতে না পারে, সেই বিষয়ে তদারকিও থাকবে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার, মালিবাগসহ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশি পেঁয়াজের কেজিতে ২০ টাকা দাম বেড়ে হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। গত সপ্তাহের শুরুতেও এটা ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মিয়ানমারের পেঁয়াজের দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ১৫ টাকা দাম বেড়ে এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। এ ছাড়া কেজিতে ২৫ টাকা বেড়ে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম দাঁড়িয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।

গত কয়েক বছর ধরেই সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সময়ে অস্থির হয়ে ওঠে মসলাজাতীয় এই পণ্যটির বাজার। এটা ডিসেম্বর-জানুয়ারি পর্যন্ত গড়ায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ৩০০ টাকা পর্যন্তও দাম ছুঁয়েছে পেঁয়াজ। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থল ও নৌবন্দরের পাশাপাশি উড়োজাহাজে করেও পণ্যটি আনতে হয়েছে। এ বছরও অক্টোবরের শুরুর দিকে হঠাৎ করে দাম বেড়ে যায়। কেজিপ্রতি দাম ওঠে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আমদানিতে শুল্ক্ক প্রত্যাহার করে নেয় সরকার। এতে দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় নেমে এলেও তা স্থায়ী হয়নি বেশিদিন। মাস খানেক বিরতি দিয়ে গত চার-পাঁচ দিনের ব্যবধানে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়ে আবারও ৮০ টাকায় পৌঁছেছে।

হঠাৎ করেই দাম বাড়ার চিত্র পাওয়া গেছে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির দৈনিক বাজার দরের তথ্যেও। সংস্থাটি বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজে বেড়েছে ২৯ শতাংশ। দাম বৃদ্ধির জন্য বৃষ্টিতে পেঁয়াজের ফলন নষ্ট ও মজুদ কমে আসাকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা।

হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের সভাপতি হারুন-উর রশীদের ধারণা, ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়া দেশে দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, ভারতের নাসিক, ব্যাঙ্গালুরুসহ যেসব জায়গায় পেঁয়াজ বেশি উৎপাদন হয় সেসব এলাকায় প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। ফলে পেঁয়াজের মুখে পচন ধরেছে। সে কারণে দেশটিতে দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বাজারেও। শ্যামবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আব্দুল মাজেদ বলেন, বছরের এই সময়টায় দেশি পেঁয়াজের মজুদ কমে আসে। সে কারণে দাম বেড়ে যায়। তবে আগামী সাত-আট দিনের মধ্যেই বাজার স্বাভাবিক হবে। কারণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। আমদানিতেও কোনো সমস্যা নেই। প্রতিদিনই আমদানি হচ্ছে। দু-এক টাকা করে দাম কমতে শুরু করেছে। একই ধরনের মত দিয়েছেন হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের সভাপতি হারুন-উর রশীদ। তিনি বলেন, আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে। প্রতিদিনই পেঁয়াজ আসছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম হাতের নাগালে আসতে পারে। তবে হঠাৎ এই দামবৃদ্ধিকে ‘অস্বাভাবিক’ উল্লেখ করে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, এটা মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের কারসাজি। এখনই দাম বৃদ্ধির লাগাম টানতে হবে। সরকারকে বাজারে তদারকি বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানি স্বাভাবিক রাখতে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় সাশ্রয়ী মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি অব্যাহত রাখবে টিসিবি। সংস্থাটির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে টিসিবি সারাদেশে ৩০ টাকা দরে প্রতিদিন পেঁয়াজ বিক্রি করছে। বিক্রি অব্যাহত থাকবে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। টিসিবির কাছে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ২৫ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ২৯ লাখ ৫৫ হাজার টন। তবে জমি থেকে তোলার সময় নষ্ট হওয়া, নিম্নমান ও পচে যাওয়ার কারণে প্রতিবছর প্রায় ২৫ শতাংশ পেঁয়াজ ফেলে দিতে হয়। ফলে ছয় থেকে সাত লাখ টন আমদানি করা হয়ে থাকে। আমদানি করা পেঁয়াজের ৮ থেকে ১০ শতাংশ প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় নষ্ট হয়। দেশে যত পেঁয়াজ আমদানি হয়, তার ৮০ শতাংশের বেশি ভারত থেকেই আসে।