শুভ মহালয়া আজ রোববার। বাঙালি হিন্দুদের বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব দুর্গোৎসবের শুরুতে আজকের দিনটি বিশেষ গুরুত্ব-সহকারে পালিত হচ্ছে। মহালয়া উপলক্ষে চণ্ডী পাঠের মাধ্যমে মর্ত্যলোকে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা ঘোষণা করা হয়। এটি দুর্গোৎসবের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে আজ থেকেই দেবীপক্ষের সূচনা হয়ে যায়। এই দিন থেকেই দেবীর আরাধনা ও পূজার প্রস্তুতি শুরু হয়।
হিন্দু ধর্ম মতে, মহালয়া দিনে দেব-দেবীকুল নিজেদের জাগ্রত করেন এবং দুর্গাপূজার জন্য প্রস্তুতি নেন। এদিন ভক্তরা ভোরের প্রার্থনায় মন্দিরে মন্দিরে চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবীকে স্বাগত জানান। গঙ্গাতীরে তারা তাদের মৃত আত্মীয়-পরিজন ও পূর্বপুরুষদের জন্য সমাধির জন্য তর্পণ করেন, শান্তি ও স্বর্গ লাভের জন্য কামনা করেন।
মহালয়ার সাত দিন পরে, অর্থাৎ ২৮ সেপ্টেম্বর, ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে। আজ থেকেই দেবী দুর্গার আগমন ও অধিবাসের ধ্বনি শোনা যাবে। হিন্দু বিশ্বাস ও পঞ্জিকামতে, এবার দেবী দুর্গা স্বর্গ থেকে গজে (হাতি) চড়ে মর্ত্যলোকে আসবেন, যার ফলে পৃথিবী শস্য-ফসলে ভরে উঠবে। আবার তিনি স্বর্গে ফিরে যাবেন দোলায় (পালকি) চড়িয়ে, আর এর ফলস্বরূপ বাড়বে রোগ, মহামারি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
অতএব, এই মহালয়া থেকে শুরু হওয়া সময়ে দুর্গাপূজার বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা পরবর্তী দিনগুলোতে সম্পন্ন হবে। ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠীতে দেবীর অধিবাস ও আমন্ত্রণ, ২৯ সেপ্টেম্বর মহাসপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর মহাষ্টমী ও কুমারীপূজা, এবং ১ অক্টোবর মহানবমী পূজার পর, ২ অক্টোবর বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে এই পাঁচ দিনের দুর্গোৎসব সমাপ্ত হবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, দেশের ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ২৩৬টি, অর্থাৎ এবার নতুন করে ১ হাজার ১১৯টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ঢাকায় এই বছর ২৫৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে, যা গতবারের চেয়ে ৫টি বেড়েছে।
মহালয়া উপলক্ষে আজ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন মন্দির ও পূজামণ্ডপে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালিত হবে। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে ভোর ৬টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের মেলাঙ্গনে মহালয়ার বিশেষ অনুষ্ঠানে চণ্ডীপাঠ ও সংগীত পরিবেশিত হবে।
এছাড়াও, বনানী মাঠে গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজামণ্ডপে মহালয়ার বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান হবে। রামকৃষ্ণ মিশন, মন্দির, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, সতীশ্বরী পূজামণ্ডপসহ রাজধানীর বিভিন্ন মন্দির ও পূজামণ্ডপে চণ্ডীপাঠ, পূজা, ধর্মীয় আলোচনা সভা, ভক্তিমূলক গান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে।