যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপে পরিণত গাজার ফিলিস্তিনিদের জন্য জরুরি সাহায্য পৌঁছে দিতে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা এগিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চারটি— ফ্রিডম ফ্লোটিলা ফাউন্ডেশন, গ্লোবাল মুভমেন্ট টু গাজা, মাগরেব সুমুদ ফ্লোটিলা এবং সুমুদ নুসানতারা একযোগে এই মানবিক উদ্যোগের অংশ। গত ৩১ আগস্ট স্পেনের একটি বন্দরে থেকে ৪৩টি নৌকা নিয়ে এই বহর গাজার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়, যেখানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশ নিয়েছেন ৫০০ জনের বেশি নাগরিক, অধিকাংশই বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টারিয়ান, আইনজীবী, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডী ও স্বেচ্ছাসেবক।
বুধবার মধ্যরাতে চরিত্রগতভাবে গাজা উপকূলে কাছাকাছি পৌঁছে থাকা এই বহরকে ইসরায়েলি নৌবাহিনী কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে আটকে দেয়। হামাস-সুমুদ ফ্লোটিলার ১৩টি নৌযানকে ইসরায়েলি নৌবাহিনী আটক করে, যার মধ্যে স্পেক্টার, অ্যালমা ও সাইরাসের মতো জাহাজ রয়েছে। এই আটক কার্যক্রমের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে সেই যাত্রীরাই দাবি করেছেন, তাঁরা শান্তিপূর্ণ মানবিক সামগ্রী বহনের জন্য গাজায় সাহায্য পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন। গাজা উপকূলে পৌঁছানোর পর, নিহত ও আহত মানুষের জন্য জরুরি খাদ্য ও ওষুধ বহনের এই মিশন ইসরায়েলি বাধার মুখে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই ঘটনার জোরালো নিন্দা জানানো হয়েছে। আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস এক্সে পোস্ট করে বলেছেন, “আজ রাতে যা ঘটল, তা খুবই উদ্বেগজনক। এটি ছিল একটি শান্তিপूर्ण মানবিক উদ্যোগ, যাতে গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় নিরসনে সহযোগিতা করার লক্ষ্য ছিল।” একই সঙ্গে, তিনি প্রশাসনের এই ধরনের অবৈধ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।
বিএখানেই বলাই যায়, ইসরায়েলি অবরোধের দীর্ঘ ১৮ বছর পরেও এই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক নৌবহর গাজা উপকূলে পৌঁছানোর পথে। গাজার সমুদ্র উপকূলে কোনো বন্দরে প্রবেশাধিকারে বাধা দেয়ার এই নীতির কারণে এত দিন আন্তর্জাতিক কোনও জাহাজ সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। তবে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার এই সাহসী যাত্রা চালিয়ে যেতে পরিকল্পনা নিশ্চিত করেছে, এই বাধা অযৌক্তিক বলে তারা বিবৃতি দিয়েছে। তারা বলেছে, “ইসরায়েলের এই অবৈধ পদক্ষেপ আমাদের মিশন থামাতে পারবে না। আমরা মানবিক সাহায্য পৌঁছে দিতে থাকব এবং গাজায় একটি মানবিক করিডর সৃষ্টি করব।”
সুতরপুর, গাজা করে ৪৬ নটিক্যাল মাইল বা ৮৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে এই সমুদ্রবহর। এই প্রথমবারের মতো এত দীর্ঘ সময় ধরে গাজা উপকূলে আন্তর্জাতিক নৌবহরের উপস্থিতি ঘটছে, যা সবেচেয়ে বড় মানবিক সহায়তার প্রমাণ। এই উদ্যোগের মাধ্যমে গাজায় দীর্ঘদিনের অবরোধের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমাজের এক শক্তিশালী বার্তা পৌঁছানো হবে বলে আশা প্রকাশ করছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।