০১:১৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
আন্তর্জাতিকভাবে দাবি জানানোয় বন্দিদের মুক্তি ঘোষণা বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দেশবাসীর দোয়ার আবেদন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্কটকালে মায়ের স্নেহ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমারও: তারেক রহমান মৌসুমি সবজি বাজারে ভরপুর, দাম কমে গেছে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনায় দোয়া ও মোনাজাত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের জন্য ভর্তুকির দাবি আরব আমিরাতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ২৪ ব্যক্তির মুক্তি আসছে বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা মনের আকাঙ্ক্ষা ও রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে দ্বন্দ্ব: তারেক রহমানের মন্তব্য বাজারে মৌসুমি সবজির সরবরাহ বৃদ্ধি ও দাম কমে যাচ্ছে

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার অধিকাংশ জাহাজই আটক.

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার গাজা উপত্যকার জন্য রওনা হওয়া ত্রাণ সহয়তা বহনের চেষ্টার সময় ইসরায়েলি নৌবাহিনী তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ৩১৭ জন কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করছে সংগঠকরা। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গাজাগামী মোট ৪৪টি জাহাজের মধ্যে মাত্র একটি জাহাজ ছাড়া সবাইকে আটক করা হয়েছে।

আটক হওয়া কর্মীরা বিভিন্ন দেশের, যেমন স্পেন, ইতালি, ব্রাজিল, তুরস্ক, গ্রিস, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সুইডেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ মোট ৩৭টি দেশের নাগরিক। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক রুহি আক্তারও এই ফ্লোটিলায় রয়েছেন, তার পাশাপাশি বাংলাদেশের শহিদুল আলমও এতে উপস্থিত। শহিদুল আলম ‘কনশায়েন্স’ নামে একটি বড় জাহাজে রয়েছেন, তবে এ পর্যন্ত সেটি আটক হওয়ার খবর জানা যায়নি।

তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি-ওয়ার্ল্ড জানিয়েছে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, গাজা উপত্যাকার পথে থাকা ট্রান্সপোর্টগুলো ইউরোপে ফেরত পাঠানো হবে। ভূমধ্যসাগরে এই ধরনের নৌযানগুলো আটক করার পর ইসরায়েলি সরকারের এই ঘোষণা আসে।

ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘নিজ নিজ দেশে থাকা যাত্রীরা নিরাপদে ও শান্তিপূর্ণভাবে ইসরায়েলে পৌঁছাচ্ছেন। সেখান থেকে তাদের ইউরোপে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। সকলে নিরাপদ এবং সুস্থ আছেন।’ এ সময় তাদের আটক গ্রেটা থুনবার্গসহ বেশ কয়েকজনের ছবি প্রকাশ করা হয়।

সংগঠকদের দাবি, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার অন্তত ২২৩ জন কর্মীকে ইসরায়েলি বাহিনী আটক করেছে। সংগঠকরা আরও জানিয়েছেন, বুধবার রাত থেকেই ইসরায়েলি বাহিনী অন্তত ১৫টি নৌযানকে আক্রমণ করেছে। আরও আটটি নৌযান এই আক্রমণের শিকার হতে পারে বা বর্তমানে আক্রমণের মুখে রয়েছে। ইনস্টাগ্রামে তারা আটক কর্মীদের নাম ও জাতীয়তা প্রকাশ করে চলেছে।

প্রসঙ্গত, গাজার নৌ অবরোধ ভাঙতে আন্তর্জাতিকভাবে অর্থ সহায়তা নিয়ে মোট ৪৪টি জাহাজের মাধ্যমে এই মহৎ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে এর আগেও ইসরায়েল এই ধরনের ফ্লোটিলাকে ব্যর্থ করে দিয়েছে। এই বছরও দেখা যাচ্ছে, এই অভিযান শেষ পর্যন্ত সফলতা পাবার সম্ভাবনা কম বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে, এই বহরটি গাজায় আঘাত হানার আগে ইসরায়েলি বাহিনীর লঙ্ঘনের ঘটনা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) নোটিসে পাঠানো হবে। আল জাজিরা জানিয়েছে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার সঙ্গে থাকা আইনজীবীরা ভূমধ্যসাগরে অবস্থানরত একটি জাহাজ থেকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

অধিকাংশ নৌকায় থাকা আইনি দল বলছে, তারা ইসরায়েলের মানবিক ও সামুদ্রিক আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি নথিভুক্ত করছে। ওই আইনজীবীরা নিশ্চিত—এমনকি একটি নৌকা গাজার কাছাকাছি পৌঁছালেও, এটি বিশাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও লড়াইকে অর্থপ্রকাশ করবে।

অন্যদিকে, ইতালির সিসিলি প্রদেশ থেকে রওনা হয়ে অন্যেকটি নৌবহর এখন গাজার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই অবস্থাও নির্দেশ করে, মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য পশ্চিমের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।

বিশ্বজুড়ে এই ‘গ্লোবাল সুমুদ’ নৌভ্রমণের প্রসঙ্গ উঠেছে, যেখানে ইসরায়েলের বাধা অতিক্রম করে অন্তত ৩০টি জাহাজ গাজার দিকে এগিয়ে চলছে। বর্তমানে তারা গাজার জলসীমায় অবস্থান করছে, তবে ইসরায়েলি বাহিনী কতটা এগোল, তা স্পষ্ট নয়।

আন্তর্জাতিক মহলে এই আক্রমণ জোরদার নিন্দার ঝড় তুলেছে। স্পেন, ইতালি, জার্মানি, তুরস্ক ও গ্রিসের মতো দেশের পাশাপাশি বহু রাজনৈতিক ও মানবাধিকার সংগঠন এই কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।

অবশেষে, গাজার জলসীমায় পৌঁছাতে অপেক্ষমাণ এই ফ্লোটিলার জাহাজগুলো এখনো অনেকের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সংগঠনগুলো বলছে, অবৈধ বাধা উপেক্ষা করে তারা মানবিক বিপর্যয় দুর করতে বাধ্য থাকবে। গাজার দরিদ্র ও বিপন্ন জনপদের জন্য এই মানবিক চালান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ট্যাগ :
সর্বাধিক পঠিত

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার অধিকাংশ জাহাজই আটক.

প্রকাশিতঃ ১০:৫৩:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার গাজা উপত্যকার জন্য রওনা হওয়া ত্রাণ সহয়তা বহনের চেষ্টার সময় ইসরায়েলি নৌবাহিনী তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ৩১৭ জন কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করছে সংগঠকরা। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গাজাগামী মোট ৪৪টি জাহাজের মধ্যে মাত্র একটি জাহাজ ছাড়া সবাইকে আটক করা হয়েছে।

আটক হওয়া কর্মীরা বিভিন্ন দেশের, যেমন স্পেন, ইতালি, ব্রাজিল, তুরস্ক, গ্রিস, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সুইডেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ মোট ৩৭টি দেশের নাগরিক। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক রুহি আক্তারও এই ফ্লোটিলায় রয়েছেন, তার পাশাপাশি বাংলাদেশের শহিদুল আলমও এতে উপস্থিত। শহিদুল আলম ‘কনশায়েন্স’ নামে একটি বড় জাহাজে রয়েছেন, তবে এ পর্যন্ত সেটি আটক হওয়ার খবর জানা যায়নি।

তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি-ওয়ার্ল্ড জানিয়েছে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, গাজা উপত্যাকার পথে থাকা ট্রান্সপোর্টগুলো ইউরোপে ফেরত পাঠানো হবে। ভূমধ্যসাগরে এই ধরনের নৌযানগুলো আটক করার পর ইসরায়েলি সরকারের এই ঘোষণা আসে।

ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘নিজ নিজ দেশে থাকা যাত্রীরা নিরাপদে ও শান্তিপূর্ণভাবে ইসরায়েলে পৌঁছাচ্ছেন। সেখান থেকে তাদের ইউরোপে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। সকলে নিরাপদ এবং সুস্থ আছেন।’ এ সময় তাদের আটক গ্রেটা থুনবার্গসহ বেশ কয়েকজনের ছবি প্রকাশ করা হয়।

সংগঠকদের দাবি, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার অন্তত ২২৩ জন কর্মীকে ইসরায়েলি বাহিনী আটক করেছে। সংগঠকরা আরও জানিয়েছেন, বুধবার রাত থেকেই ইসরায়েলি বাহিনী অন্তত ১৫টি নৌযানকে আক্রমণ করেছে। আরও আটটি নৌযান এই আক্রমণের শিকার হতে পারে বা বর্তমানে আক্রমণের মুখে রয়েছে। ইনস্টাগ্রামে তারা আটক কর্মীদের নাম ও জাতীয়তা প্রকাশ করে চলেছে।

প্রসঙ্গত, গাজার নৌ অবরোধ ভাঙতে আন্তর্জাতিকভাবে অর্থ সহায়তা নিয়ে মোট ৪৪টি জাহাজের মাধ্যমে এই মহৎ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে এর আগেও ইসরায়েল এই ধরনের ফ্লোটিলাকে ব্যর্থ করে দিয়েছে। এই বছরও দেখা যাচ্ছে, এই অভিযান শেষ পর্যন্ত সফলতা পাবার সম্ভাবনা কম বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে, এই বহরটি গাজায় আঘাত হানার আগে ইসরায়েলি বাহিনীর লঙ্ঘনের ঘটনা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) নোটিসে পাঠানো হবে। আল জাজিরা জানিয়েছে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার সঙ্গে থাকা আইনজীবীরা ভূমধ্যসাগরে অবস্থানরত একটি জাহাজ থেকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

অধিকাংশ নৌকায় থাকা আইনি দল বলছে, তারা ইসরায়েলের মানবিক ও সামুদ্রিক আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি নথিভুক্ত করছে। ওই আইনজীবীরা নিশ্চিত—এমনকি একটি নৌকা গাজার কাছাকাছি পৌঁছালেও, এটি বিশাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও লড়াইকে অর্থপ্রকাশ করবে।

অন্যদিকে, ইতালির সিসিলি প্রদেশ থেকে রওনা হয়ে অন্যেকটি নৌবহর এখন গাজার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই অবস্থাও নির্দেশ করে, মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য পশ্চিমের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।

বিশ্বজুড়ে এই ‘গ্লোবাল সুমুদ’ নৌভ্রমণের প্রসঙ্গ উঠেছে, যেখানে ইসরায়েলের বাধা অতিক্রম করে অন্তত ৩০টি জাহাজ গাজার দিকে এগিয়ে চলছে। বর্তমানে তারা গাজার জলসীমায় অবস্থান করছে, তবে ইসরায়েলি বাহিনী কতটা এগোল, তা স্পষ্ট নয়।

আন্তর্জাতিক মহলে এই আক্রমণ জোরদার নিন্দার ঝড় তুলেছে। স্পেন, ইতালি, জার্মানি, তুরস্ক ও গ্রিসের মতো দেশের পাশাপাশি বহু রাজনৈতিক ও মানবাধিকার সংগঠন এই কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।

অবশেষে, গাজার জলসীমায় পৌঁছাতে অপেক্ষমাণ এই ফ্লোটিলার জাহাজগুলো এখনো অনেকের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সংগঠনগুলো বলছে, অবৈধ বাধা উপেক্ষা করে তারা মানবিক বিপর্যয় দুর করতে বাধ্য থাকবে। গাজার দরিদ্র ও বিপন্ন জনপদের জন্য এই মানবিক চালান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।