নরসিংদী দেশের অন্যতম সবজি উৎপাদন জেলা হিসেবে পরিচিত হলেও এখন সে দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও তার কাকরোলের জন্য খ্যাতি লাভ করেছে। গ্রীষ্মকালীন এই জনপ্রিয় সবজিটি এখন দেশের বাহিরে বিশেষ করে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি হয়ে যাচ্ছে, এর মাধ্যমে জেলার অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
প্রথমে শুধুমাত্র স্থানীয় পর্যায়ে পরিচিত nabízাক কাকরোল এখন বিদেশি বাজারে মুখ চর্চা করছে। স্বাস্থ্য সচেতন নাগরিক ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে এর বিশেষ জনপ্রিয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এর বিশাল আকার, আকর্ষণীয় চেহারা এবং উন্নত স্বাদ বাংলাদেশের কৃষকদের মাঝে এই সবজিটিকে একটি উচ্চমানের পণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
বেলাবো উপজেলার বারৈচা বাজার এখন কাকরোলের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র। মৌসুমে প্রতিদিন শত শত টন কাকরোল এখানে আসছে, যেখানে শ্রমিকরা পুঁথি আকারের উপর ভিত্তি করে কাকরোলগুলো বাছাই ও প্যাকেজ করেন। কৃষকরা জানিয়েছেন, এই পণ্য দিয়ে প্রতিদিন কোটি টাকা লেনদেন হয় যা স্থানীয় অর্থনীতিকে আরও সচল করে তুলছে।
নরসিংদীর ছয়টি উপজেলার মধ্যে শিবপুর ও বেলাবোই শীর্ষস্থানীয় কাকরোল উৎপাদনে। এই সবজি গ্রাম থেকে শহর তথা ঢাকা ও দেশের অন্য গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে সরবরাহ হয়, যেখানে এই পণ্য লাভজনক। কৃষক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা কেউই এর থেকে পিছিয়ে থাকেন না।
যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বিমান পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানির কিছুটা ক্ষতি হয়েছে, তবে তার চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি সাধারণত ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়, এবং কৃষকেরা সরাসরি বাজারে গেলে আরও বেশি লাভ পান।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই বছর নরসিংদীতে প্রায় ২৮,৪৭৮ মেট্রিক টন কাকরোল উৎপাদিত হয়েছে, এর মধ্যে প্রায় ১০০ মেট্রিক টন রপ্তানি করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত সার ও বীজের ব্যবহার বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে, যা উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক হবে।
কৃষকরা বলছেন, উৎপাদন খরচ কিছুটা বাড়লেও লাভ এখনও সন্তোষজনক। শিবপুরের আব্দুল কাদের বলেন, ‘কাকরোল চাষে বিনিয়োগ কম হলেও লাভ বেশি। আমি ২০ শতাংশ জমিতে ৮০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে এখন ২ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় করেছি। আশা করছি আরও উপার্জন হবেই।’
বেলাবো এলাকার কালেক্টর ফাতেমা বেগমও জানালেন, ‘সাড়ে ৩২ শতাংশ জমিতে কাকরোল চাষ করে সংসার চলে। সন্তানদের পড়াশোনা ও খরচ মেটাতে পারছি।’
শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘সার ও শ্রমিকের খরচ বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও, কাকরোল চাষ লাভজনক।’
বারৈচা বাজারের আড়তদার আবুল হাসান জানান, ‘বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এখানে এসে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায় কাকরোল কিনে নিয়ে যান।’
স্থানীয় কৃষকদের বিশ্বাস, এই সাফল্য প্রমাণ করে দেশঙের সবজি খাতের উন্নয়নের জন্য পরিকল্পিত সহায়তা ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। এইভাবে আরও বেশি করে কৃষকরা উপকৃত হতে পারেন এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভূমিকা রাখতে পারেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মুহাম্মদ আব্দুল হাই বলছেন, ‘আমরা কৃষকদের জন্য সবজি উৎপাদন ও বাজারে পৌঁছানোর নানা উদ্যোগ নিয়েছি। এখন কাকরোল শুধু স্থানীয় নয়, এটি বৈশ্বিক মানসম্পন্ন এবং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম।’