গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথম ধাপে ইসরায়েল ও হামাস সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার (৮ অক্টোবর) নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রুথে এক পোস্টে তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেন। ট্রাম্প লিখেছেন, ‘শান্তি চুক্তির মূল অর্থ হল খুব শীঘ্রই গাজার জিম্মি ও বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। এর জন্য ইসরায়েল তাদের সৈন্যদের গাজা থেকে প্রত্যাহার করে নেবে। এটা খুবই শক্তিশালী ও টেকসই, সম্ভবত চিরস্থায়ী শান্তির প্রথম বড় ধাপ।’ খবর অনুযায়ী, আল জাজিরা এবং বিবিসি এ খবর নিশ্চিত করেছে।
এর আগে, ট্রাম্প আরও ঘোষণা করেছিলেন যে, এই মাসের শেষদিকে মিশরে গাজা নিয়ে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে। গত মাসে ট্রাম্প গাজার জন্য ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন, যেখানে কোনো এক পক্ষই এই পরিকল্পনার প্রতি ইতিবাচক সাড়া দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে, গত সোমবার মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিরা বৈঠক করেন।
বুধবার (৮ অক্টোবর), মিসরে তৃতীয় দিনের মতো আলোচনা চালিয়ে যান দুই পক্ষের নেতারা। মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে তারা আলোচনা করেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও অংশ নেন। এদের মধ্যে স্টিভ উইটকফ, ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার, কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল থানি ও তুরস্কের গোয়েন্দা প্রধান ইব্রাহিম কালিন রয়েছেন।
অন্যদিকে, কাতার সরকারের মুখপত্র মাজেদ আল-আনসারী সামাজিকমাধ্যমে এক পোস্টে বলেছেন, ‘মধ্যস্থতাকারীরা সম্মত হয়েছেন যে, গাজার যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ের সব বিধান ও তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছেন। এই চুক্তির ফলে যুদ্ধের অবসান হবে, ইসরায়েলি জিম্মিরা দেশে ফিরে যাবে, ফিলিস্তিনিরা মুক্তি পাবে এবং গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ করবে।’
অপরদিকে হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘এই চুক্তি গাজার যুদ্ধের অবসান ঘটাবে। দখলদার বাহিনীর সব সৈন্য প্রত্যাহার নিশ্চিত করা হবে, মানবিক সহায়তা গাজায় প্রবেশ করবে এবং বন্দি বিনিময় কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে।’
বিবিসির মার্কিন সংবাদ অংশীদার সিবিএস জানিয়েছে, এই শান্তি প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা ও সমর্থন দেওয়ার জন্য কাতার, মিসর, তুরস্ক এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন হামাস। সংগঠনটি আরও বলেছে, ইসরায়েলি সরকার যেন এই চুক্তির শর্তগুলো পুরোপুরি মান্য করে তা নিশ্চিত করতে হবে।
হামাসের পক্ষ থেকে এও জানানো হয়েছে, যতক্ষণ না ফিলিস্তিন সম্পূর্ণভাবে স্বাধীনতা লাভ করেন, তারা লড়াই চালিয়ে যাবেন।
অপর দিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘এটি আজকের জন্য মহান দিন। এই চুক্তির ফলে জিম্মিরা স্বজনদের কাছে ফিরে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই চুক্তির জন্য আমি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও ট্রাম্প প্রশাসনের সমস্ত প্রচেষ্টাকে ধন্যবাদ জানাই।’
তবে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস গাজায় হামলা চালানোর পর থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল, এতে ১,২১৯ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নেয় হামাস, যার মধ্যে এখনো ৪৭ জন জিম্মি রয়েছে। ইসরায়েল দাবি করে, এর মধ্যে ২৫ জন আর বেঁচে নেই।
এই দিন থেকেই ইসরায়েল গাজায় দমন-পীড়ন চালাচ্ছে, যার ফলে গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুযায়ী, শেষ দু-বছরে ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ৬৭,১৭৩ জন নিহত ও হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন, যার মধ্যে ২০ হাজারেরও বেশি শিশু রয়েছে। This tragic পরিস্থিতি এখনও অব্যাহত রয়েছে।