০৪:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
দুর্গাপূজায় ভারতে রপ্তানি হবে ১২০০ টন ইলিশ দুদকের হাসপাতালের বিল গ্রহণে আসামি, বরখাস্থ হয়েছেন পরিচালক খান মো. মীজানুল ইসলাম পুরানো দিনের বাইস্কোপ এখন শুধুই স্মৃতি যুক্তরাষ্ট্রের আয়রন ডোম প্রকল্পের নেতৃত্বে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শরিফুল খান ডাকসু নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাতীয় স্বার্থে বস্তুনিষ্ঠ ও জবাবদিহীমূলক গণমাধ্যম অপরিহার্য: পরিবেশ উপদেষ্টা নারী ও শিশুদের জন্য সাইবার স্পেস নিরাপদ করতে উদ্যোগ জরুরি: উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশীদ নির্বাচনের সময় গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ নিশ্চিতের আহ্বান পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাজে ফিরতে নির্দেশ আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস আজ

পুরানো দিনের বাইস্কোপ এখন শুধুই স্মৃতি

তোমার বাড়ির রঙের মেলায় দেখেছিলাম বাইস্কোপ, বাইস্কোপের নেশায় আমি তখন মোহচ্ছিন। প্রিয়জনের বাড়িতে বাইস্কোপ দেখার আকাঙ্ক্ষা এখন আর কেউ করেন না। সেই পুরোনো বাইস্কোপগুলোও আর দেখা যায় না, সেই সময়ের বাইস্কোপওয়ালাও এখন অপ্রচলিত। এখন আর কেউ আগ্রহের সঙ্গে বাইস্কোপ দেখার জন্য মিনতি করে না। বাইস্কোপওয়ালারা তখন অন্য পেশায় চলে গেছে বা হারিয়ে গেছে।

স্বাগতিক সুরে বলতেন বাইস্কোপওয়ালারা—“ওই দেখা যায়, কি মজা! জাবেদের ঘোড়া চলে গেলো, ইলিয়াছ কাঞ্চন এসে গেলো, চম্পাকে নিয়ে গেছে। আরে আলাদা কি মজা! দেখো, তাকদে না, মদিনা, তারপরেতে মধুবালা, এক্কাগাড়ীতে উত্তম কুমার আর সুচিত্রা সেন।” এভাবেই গ্রাম্য জনপদে তারা বিভিন্ন গানের সুরে বাইস্কোদের প্রদর্শনী করতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, রূপগঞ্জসহ অনেক গ্রামে এখন আর এমন মজার বাইস্কো দেখা যায় না। ছোটবেলায় হাট-বাজার ও মেলায় বাইস্কোপ দেখার অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ। আধুনmodern—সেলুলয়েডের রঙিন যুগে এখন এই ধরনের মনোরম আনন্দের স্মৃতি কেবলই পুরোনো আলমারির কোণে রেয়েছে।

আসলেই, তখন বাইস্কোপ দেখা মানে ছিল এক ধরনের আনন্দ ও উত্তেজনার খণ্ড। বাসার ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা নানা উত্তেজনায় ধান বা চাল দিতো বাইস্কোপ দেখার বিনিময়ে। মা-দাদারা ধান বা চাল দিয়ে সন্তুষ্ট হলেও জোর করে বলতে থাকতেন—“আর নে, দেখবি না।” ছেলে-মেয়েরা উদগ্রীব হয়ে ধান নিয়ে বাইস্কোপের সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসতো।

বাইস্কোপের পর্দা উঠলে তারা চোখ দিয়ে চুপি চুপি দেখতেন। এক হাতে বাইস্কোপের রিল ঘুরিয়ে, অন্য হাতে বলতেন—“מה সৌন্দর্য, কি সুন্দর করে দেখাইছে! প্রেমকুমার আইস্যা গেলো, আলোমতি আইস্যা গেলো, ইত্যাদি।“ সেই দিনের স্মৃতি এখন ইন্টারনেট, টিভি ও সেলুলয়েডের যুগে শুধুই অতীত। ছোটবেলার সেই বাইস্কোপ দেখার জন্য মাত্র দশ পয়সা বা এক হের চাল দিতে হতো।

রূপগঞ্জের বৃদ্ধ আওয়াল আলী বলছেন, “কি হবে রে, হারাবার সবই তো হারিয়ে যাবে। প্রযুক্তির যুগে সব কিছু দুনিয়া বদলাচ্ছে। এই যুগে হারিয়ে যাবে না তো কি! এরই মধ্যে শিলপাটার কাটা, ঘোড়ার গাড়ি—সবই বিলীন হয়ে গেছে। এখনকার প্রজন্ম নতুন পেশায় চলে গেছে বা কেউ কেউ মারা গেছে। “

মানুষের জীবনধারা বদলে গেছে, তাই প্রাচীন উৎসব ও সরঞ্জামগুলোর অবশিষ্টাংশও হারিয়ে যাচ্ছে। ঈদ, পূজা, আর বিভিন্ন মেলা গ্রামে তখন বাইস্কোপের ধ্বনি শোনা যেত—একটু সময়ের জন্য শিশু সমাজের বিনোদনের উৎস। গ্রামে তখন ভ্রাম্যমাণ সিনেমা হলের মত চালু ছিল—দলের সঙ্গে নানা ছবি দেখা, টিকিট কেটে স্বপ্নের সিনেমার জগতে প্রবেশ। কিন্তু এখন এই ঐতিহ্য গৌণ হয়ে গেছে ও হারিয়ে যাচ্ছে।

চাকরিজীবী ছালাম মুল্লা বলেন, “আমি নিজে দেখেছি বাইস্কোপ। দুপুরে বাড়ির উঠানে বসে সিনেমা দেখতাম, খুবই আনন্দ হতো। তবে এখন সেই দিনগুলো আর নেই, সব কিছু ভেঙে পড়ছে, আমাদের ইতিহাসের অঙ্গবিকৃতি হয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন প্রযুক্তির চাকায় ধাবিত।”

রূপগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ভুইয়া পরিবারের সন্তান ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান দপু বলছেন, “বিশ শতকের মাঝামাঝির দিকে আমি গ্রামে বাইস্কোপ দেখার অভিজ্ঞতা আছে। কতই না মজার মুহূর্ত তখন হতো। বাবা-মা’র বকুনি খেয়ে হলেও বাইস্কোপ দেখা থেকে বিরত থাকিনি। সেই সময়ের আনন্দ ভাষায় প্রকাশ impossible। সভ্যতা অনেক কিছু দিয়েছে, তবে অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে, বাইস্কোপের মতো স্মৃতিও।”

সবমিলিয়ে, প্রাচীন এই চাহিদা ও সামান্য বিনোদনের স্মৃতি এখন শুধুই অঙ্গীকার ও অতীতের পর্যায়ে। যতই আধুনিক প্রযুক্তির জোয়ার আসুক, পুরোনো দিনের নিখুঁত আনন্দ আজও চোখে চোখে ভাসে।

ট্যাগ :

তোশিমিৎসু মোতেগি জাপানের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে দৌড়ে ঘোষে উঠলেন

পুরানো দিনের বাইস্কোপ এখন শুধুই স্মৃতি

প্রকাশিতঃ ১০:৪৬:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

তোমার বাড়ির রঙের মেলায় দেখেছিলাম বাইস্কোপ, বাইস্কোপের নেশায় আমি তখন মোহচ্ছিন। প্রিয়জনের বাড়িতে বাইস্কোপ দেখার আকাঙ্ক্ষা এখন আর কেউ করেন না। সেই পুরোনো বাইস্কোপগুলোও আর দেখা যায় না, সেই সময়ের বাইস্কোপওয়ালাও এখন অপ্রচলিত। এখন আর কেউ আগ্রহের সঙ্গে বাইস্কোপ দেখার জন্য মিনতি করে না। বাইস্কোপওয়ালারা তখন অন্য পেশায় চলে গেছে বা হারিয়ে গেছে।

স্বাগতিক সুরে বলতেন বাইস্কোপওয়ালারা—“ওই দেখা যায়, কি মজা! জাবেদের ঘোড়া চলে গেলো, ইলিয়াছ কাঞ্চন এসে গেলো, চম্পাকে নিয়ে গেছে। আরে আলাদা কি মজা! দেখো, তাকদে না, মদিনা, তারপরেতে মধুবালা, এক্কাগাড়ীতে উত্তম কুমার আর সুচিত্রা সেন।” এভাবেই গ্রাম্য জনপদে তারা বিভিন্ন গানের সুরে বাইস্কোদের প্রদর্শনী করতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, রূপগঞ্জসহ অনেক গ্রামে এখন আর এমন মজার বাইস্কো দেখা যায় না। ছোটবেলায় হাট-বাজার ও মেলায় বাইস্কোপ দেখার অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ। আধুনmodern—সেলুলয়েডের রঙিন যুগে এখন এই ধরনের মনোরম আনন্দের স্মৃতি কেবলই পুরোনো আলমারির কোণে রেয়েছে।

আসলেই, তখন বাইস্কোপ দেখা মানে ছিল এক ধরনের আনন্দ ও উত্তেজনার খণ্ড। বাসার ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা নানা উত্তেজনায় ধান বা চাল দিতো বাইস্কোপ দেখার বিনিময়ে। মা-দাদারা ধান বা চাল দিয়ে সন্তুষ্ট হলেও জোর করে বলতে থাকতেন—“আর নে, দেখবি না।” ছেলে-মেয়েরা উদগ্রীব হয়ে ধান নিয়ে বাইস্কোপের সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসতো।

বাইস্কোপের পর্দা উঠলে তারা চোখ দিয়ে চুপি চুপি দেখতেন। এক হাতে বাইস্কোপের রিল ঘুরিয়ে, অন্য হাতে বলতেন—“מה সৌন্দর্য, কি সুন্দর করে দেখাইছে! প্রেমকুমার আইস্যা গেলো, আলোমতি আইস্যা গেলো, ইত্যাদি।“ সেই দিনের স্মৃতি এখন ইন্টারনেট, টিভি ও সেলুলয়েডের যুগে শুধুই অতীত। ছোটবেলার সেই বাইস্কোপ দেখার জন্য মাত্র দশ পয়সা বা এক হের চাল দিতে হতো।

রূপগঞ্জের বৃদ্ধ আওয়াল আলী বলছেন, “কি হবে রে, হারাবার সবই তো হারিয়ে যাবে। প্রযুক্তির যুগে সব কিছু দুনিয়া বদলাচ্ছে। এই যুগে হারিয়ে যাবে না তো কি! এরই মধ্যে শিলপাটার কাটা, ঘোড়ার গাড়ি—সবই বিলীন হয়ে গেছে। এখনকার প্রজন্ম নতুন পেশায় চলে গেছে বা কেউ কেউ মারা গেছে। “

মানুষের জীবনধারা বদলে গেছে, তাই প্রাচীন উৎসব ও সরঞ্জামগুলোর অবশিষ্টাংশও হারিয়ে যাচ্ছে। ঈদ, পূজা, আর বিভিন্ন মেলা গ্রামে তখন বাইস্কোপের ধ্বনি শোনা যেত—একটু সময়ের জন্য শিশু সমাজের বিনোদনের উৎস। গ্রামে তখন ভ্রাম্যমাণ সিনেমা হলের মত চালু ছিল—দলের সঙ্গে নানা ছবি দেখা, টিকিট কেটে স্বপ্নের সিনেমার জগতে প্রবেশ। কিন্তু এখন এই ঐতিহ্য গৌণ হয়ে গেছে ও হারিয়ে যাচ্ছে।

চাকরিজীবী ছালাম মুল্লা বলেন, “আমি নিজে দেখেছি বাইস্কোপ। দুপুরে বাড়ির উঠানে বসে সিনেমা দেখতাম, খুবই আনন্দ হতো। তবে এখন সেই দিনগুলো আর নেই, সব কিছু ভেঙে পড়ছে, আমাদের ইতিহাসের অঙ্গবিকৃতি হয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন প্রযুক্তির চাকায় ধাবিত।”

রূপগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ভুইয়া পরিবারের সন্তান ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান দপু বলছেন, “বিশ শতকের মাঝামাঝির দিকে আমি গ্রামে বাইস্কোপ দেখার অভিজ্ঞতা আছে। কতই না মজার মুহূর্ত তখন হতো। বাবা-মা’র বকুনি খেয়ে হলেও বাইস্কোপ দেখা থেকে বিরত থাকিনি। সেই সময়ের আনন্দ ভাষায় প্রকাশ impossible। সভ্যতা অনেক কিছু দিয়েছে, তবে অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে, বাইস্কোপের মতো স্মৃতিও।”

সবমিলিয়ে, প্রাচীন এই চাহিদা ও সামান্য বিনোদনের স্মৃতি এখন শুধুই অঙ্গীকার ও অতীতের পর্যায়ে। যতই আধুনিক প্রযুক্তির জোয়ার আসুক, পুরোনো দিনের নিখুঁত আনন্দ আজও চোখে চোখে ভাসে।