প্রায় ছয় দশকের দীর্ঘ পেশাদার সংগীতজীবন এখনও চলমান বাংলা সংগীতের একজন অমোঘ ব্যক্তিত্ব সাবিনা ইয়াসমীন। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অসুস্থতার কারণে তার গানের পরিবেশনা ছিল খুবই কম, তবে গত রোববার সন্ধ্যায় আবার দেখা গেল চিরচেনা সেই সাবিনা ইয়াসমীনে। এই বিশেষ রাতটি ছিল সম্মাননা, সংগীতসহ স্মৃতিচারণায় ভরপুর, যা সবার জন্যই এক অনুপম অনুভূতির রাত হয়ে উঠেছিল। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে এ দিন infancia একটি বিশেষ অনুষ্ঠান ছিল, যেখানে তাকে সম্মাননা প্রদান এবং একক সংগীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সংগীত ও সংস্কৃতির জগতে তার দীর্ঘ দিন ধরে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, যার আয়োজন ও পরিচালনায় ছিল শিল্পকলা একাডেমি। এর শুরু হয়েছিল গত সপ্তাহে, যখন শিল্পকলা একাডেমির মহড়াকক্ষে সাংগীতিক দলের সাথে কঠোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সাবিনা ইয়াসমীন। সেখানে দেখা যায়, তার ধ্যানে মনোযোগী ও আত্মবিশ্বাসী এক শিল্পীকে—তবলা, হারমনিয়াম, কি-বোর্ড, গিটার ও বেহালার সম্মিলিত সুরে তিনি যোগ দিচ্ছেন। মহড়ার প্রতিটি মুহূর্তে তার নিষ্ঠা ও একাগ্রতা স্পষ্ট, যেখানে বহু অন্য শিল্পী ও সংগীতপ্রেমীর জন্যই অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠেন তিনি। সন্ধ্যা সাতটা ২৭ মিনিটে, আফজাল হোসেন মঞ্চে উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেন। প্রথমেই তার স্বরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়, সেই সঙ্গে সম্প্রতি প্রয়াত লেখক, গবেষক ও রাজনীতিবিদের স্মরণে গভীর শোক প্রকাশ করে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এই প্রামাণ্যচিত্রে তাকে নিয়ে কথা বলছেন তার সমসাময়িক, অগ্রজ ও অনুজ শিল্পীরা। অনুষ্ঠানের এই অংশের পর, শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা সাবিনা ইয়াসমীনের জনপ্রিয় গানের তাল ‘গীতিময় সেই দিন চিরদিন’ এর সাথে একত্রিত হয়ে নৃত্য পরিবেশন করেন। এরপর মঞ্চে উঠেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, যিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐশ্বর্যকে উদযাপন করতে চাই। আজকের এই রাতটি খুবই বিশেষ কারণ আমাদের কাছে একজন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পীই শুধু নয়, তিনি আমাদের এক গর্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ।’ মূলত, অনুষ্ঠানের শুরুতে এ সম্মাননা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছিল, তবে পরে সিদ্ধান্ত হয়, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সরাসরি এই সম্মাননা দেবার। শনিবার তথ্যটি নিশ্চিত করতে তিনি রাজি হন। এর পর, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সাবিনা ইয়াসমীনকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও উত্তরীয় পরানো হয়। উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ উল্লেখ করেন, ‘আজকে যেকার জন্য আমরা এই সম্মাননা দিচ্ছি, তিনি আমাদের গৌরবের ধন।’ এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সংস্কৃতি সচিবসহ অনেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। তারা শিল্পীর প্রতি শুভকামনা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে, সাবিনা ইয়াসমীন একের পর এক মন মাতানো দশটি জনপ্রিয় গান পরিবেশন করেন, যেমন ‘সুন্দর সুবর্ণ’, ‘আমি রজনীগন্ধা’, ‘শত জনমের স্বপ্ন’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’, ‘আমি আছি থাকব’, ‘ইশারায় শিস দিয়ে’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ও ‘সে যে কেন এল না’। গান পরিবেশনের মধ্যেই চলে হাস্যরসপূর্ণ আড্ডা ও স্মৃতিচারণা, যা এই বিশেষ সন্ধ্যাটিকে করে তোলে আরও স্মরণীয় এবং হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এটি ছিল বাংলার সংগীতজ্ঞদের জন্য এক জীবন্ত উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার রাত।
সর্বশেষঃ
সাবিনা ইয়াসমীনকে উপহার দিলেন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ও স্মরণীয় এক সন্ধ্যা
-
শ্রীমঙ্গল২৪ ডেস্ক
- প্রকাশিতঃ ১০:৫৩:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- 2
ট্যাগ :
সর্বাধিক পঠিত