প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশকে এখনই পরিবেশবান্ধব, নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী জ্বালানি সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে হবে, যেন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও টেকসই ও শক্তিশালী হয়। তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে বাংলাদেশের জন্য বিকল্প পরিচ্ছন্ন জ্বালানি বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা, যেখানে সৌরবিদ্যুৎ বিল্ডিং বা স্থাপন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে অ্যানথ্রোপোসিন ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান কার্ল পেজ ও তার সহকর্মীদের সাথে ভার্চুয়াল এক সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস উল্লেখ করেছেন, বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল থাকায় তার সামর্থ্য কম।
কার্ল পেজ তার বক্তব্যে পারমাণবিক প্রযুক্তি ও হাইব্রিড বিদ্যুৎ সরঞ্জামের আধুনিক অগ্রগতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই প্রযুক্তিগুলো নির্ভরযোগ্য, শূন্য-কার্বন উত্পাদনে সক্ষম এবং ভাসমান বা বার্জ-মাউন্টেড রিঅ্যাক্টর বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী শিল্প ও বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে তুলনামূলকভাবে কম খরচে এবং কম রক্ষণাবেক্ষণে উপযোগী।
পেজ আরও জানান, পারমাণবিক শক্তি এখন আর বিশ্বব্যাংকের মতো বড় উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কাছে অসাধারণ বিষয় নয়। ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশ ইতিমধ্যে এই প্রযুক্তি গ্রহণ করে তাদের জ্বালানি চাহিদা পূরণ করছে। তিনি ভাষ্য দেন যে, বাংলাদেশের শক্তিশালী উদ্ভাবনী রেকর্ড থাকায় এই দেশটি পরিচ্ছন্ন জ্বালানির রূপান্তরে নেতৃত্ব দিতে পারে। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখা এবং শিল্পের প্রতিযোগিতা বাড়ানোর সুফল পরিকল্পনা করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ একটি কৌশলগত কেন্দ্র হিসেবে উদীয়মান প্রযুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে এবং শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক উদ্ভাবনের নেতৃত্ব নিতে পারে।
অধ্যাপক ইউনূস উল্লেখ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি একটি নতুন জাতীয় বিদ্যুৎনীতি গ্রহণ করেছে যেখানে সৌর জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, পারমাণবিক বিকল্পে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কঠোর গবেষণা ও সম্ভাব্যতা যাচাই অপরিহার্য।
তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই এসব সম্ভাবনাগুলো অনুসন্ধান করব। তবে এই প্রযুক্তিগুলো নিয়ে গভীর গবেষণার প্রয়োজন; এর কোনও বিকল্প নেই—বাংলাদেশকে দ্রুত জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে।’
বৈঠকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং সরকারের সিনিয়র সচিব ও এসডিজি বিষয়ক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদও উপস্থিত ছিলেন।