যশোরের কেশবপুর উপজেলা ও এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে এক অদ্ভুত পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। সেখানে কৃষকদের অগোচরে অবাধে প্রাকৃতিক পানি শোধনকারী শামুক নিধন করা হচ্ছে। এই অবৈধ কার্যক্রমের ফলে স্থানীয় মৎস্য ও কৃষি বিভাগ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে, কারণ এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদিভাবে পরিবেশের ভারসাম্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
বাধ্য হয়ে উঠছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। কারণ, এই শামুকগুলো জীববৈচিত্র্য ও পানির স্বাভাবিক জলচক্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা পানি শোধন করে অকৃত্রিমভাবে পানিকে স্বচ্ছ ও বিশুদ্ধ করে তোলে। অথচ, সুযোগের অভাবে অনেক দরিদ্র পরিবার এই শামুক সংগ্রহ করে পাইকারি বাজারে বিক্রি করছে। অবশ্যই, এটা কেবল স্থানীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অংশ, কিন্তু এর সাথে জড়িয়ে রয়েছে পরিবেশে অনিশ্চয়তা ও ক্ষতি।
বিশেষ করে, কেশবপুরের বিভিন্ন ভুরি ভুরি জলাবদ্ধ বিল ও পুকুর থেকে নারীরা শামুক সংগ্রহ করে থাকেন। প্রতিদিন সকালে তারা শামুক সংগ্রহ করে পাইকারি বাজারে বিক্রি করেন, যেখানে প্রতি কেজি শামুকের মূল্য ৭ থেকে ৮ টাকা। আবার এ শামুক থেকে মাছের খাদ্য ও বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহার করার জন্য চুন তৈরির কারখানাগুলো পারস্পরিক মাসোহারা করে থাকে। কিছু কারখানা এই শামুকের মাংস পাইকারদের কাছ থেকে কিনে নেয় এবং পরে ঘেরের মালিকদের উপকারের জন্য বিক্রি করে।
ভারতীয় শহরগুলো থেকে আসা পাইকাররা এই শামুকের দর কষাকষি করে কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি করছে। একদিকে, এই শামুকের মাধ্যমে প্রচুর দরিদ্র পরিবার কিছুটা অর্থ উপার্জন করছে। আবার, চুন কারখানার মালিকরাও এই শামুকের মাংস ও ঝিনুকের খোসা ছাঁটাই করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে থাকেন।
এলাকার অনেকেই মনে করেন, এই অনিয়মিত শামুক নিধন পরিবেশের জন্য বড়ই ক্ষতিকর। প্রকৃতিতে এই শামুকের অবদান অনেক। তারা পানি বিশুদ্ধ করতে সহায়ক এবং পানির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। তবে, অবৈধভাবে কার্যক্রম চালানোর ফলে শামুকের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, যার ফলস্বরূপ পানি নষ্ট হচ্ছে, জলচক্র ব্যাহত হচ্ছে এবং পানির মান ধীর ধীরে খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
কেশবপুরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্তব্য করেন, শামুক মারা গেলে তার ফলে জমিতে উর্বরতা বাড়ে এবং ফসলের উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ বিশ্বাস জানান, শামুকের শরীরে রয়েছে প্রাকৃতিক জলশোধন ব্যবস্থা, যা পানি পরিষ্কার রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ২০১২ সালে শামুককে বন্যপ্রাণি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, এবং অবৈধ শামুক শিকার ও বিক্রয় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে প্রয়োজন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
মৎস্য বিভাগ জানায়, যদি শামুকের সংখ্যা কমে যায়, তাহলে জলাশয় গুলোতে জলনিষ্কাশন ও মাছের জীবনযাত্রা ব্যাহত হবে। ফলে জল ও খাদ্যচক্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা সরাসরি পরিবেশ ও অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তারা আরও বলছেন, শামুকের প্রাকৃতিক অবদান রক্ষা করতেই হবে, নইলে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে থাকবে।