নড়াইল জেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও জলাশয়গুলো থেকে অবাধে শামুক ও ঝিনুক তারন করা হচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এলাকাবাসী ও স্থানীয় সূত্র জানাচ্ছেন, নদী, বিল, জলাধার সহ বেশ কয়েকটি জলাশয় থেকে প্রতিদিনই এ অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে কিছু অসাধু দখলে থাকা মানুষ। এসব জলাশয় থেকে সংগৃহীত শামুক ও ঝিনুক সরবরাহ করা হয় স্থানীয় ও দক্ষিণাঞ্চলীয় বিভিন্ন জেলার চিংড়ি চাষের ঘেরগুলোর নিকটে। নড়াইলের প্রায় ৪০টির বেশি বিল ও জলাশয় থেকে প্রতিদিনই এই অবৈধ কার্যক্রম চলছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা যেমন- নগশী, আউড়িয়া, বাড়িরডাঙ্গা, সীতারামপুর, তুলারামপুর, মুলিয়া, বামনহাট, মাইজপাড়া, শাহাবাদ, বরাশুলা, নলামারা, কাড়ারবিল, ফেদি, রতডাঙ্গা, কমলাপুর, কালিরডোব, হাড়িভাঙ্গা, গোবরা, মির্জাপুর, আগদিয়া, বাসগ্রাম ইত্যাদি গাঁয়ে ও কালিয়া উপজেলা এলাকার চাচুড়ি, ইছামতি, বেন্দারচর, হামিদপুর, কুলশুর, চাদেরচর, কলাবাড়িয়া সহ বিভিন্ন জলাশয়ে এ অপকর্মের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
স্থানীয় দরিদ্র মানুষরা ডিঙনৌকা ও তাল ডোঙা ব্যবহার করে জলাশয় থেকে শামুক সংগ্রহ করেন। তারা প্রতি দিনে কিছু অর্থ উপার্জনের জন্য এভাবে জীবিকা নির্বাহ করেন। তারা বিভিন্ন গ্রামে শামুকের খোল থেকে গিলি, ঘিলু নির্জন করে তা বাজারে বিক্রি করেন, যেখানে ব্যবসায়ীরা তা ২৫ টাকা করে কেজি দরে কিনে নেন।
নলদী ইউনিয়নের ব্রাম্মণডাঙ্গার রোসময় বিশ্বাসের স্ত্রী রমলা বালা বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা প্রতিদিন অবাধে তাল ডোঙা নিয়ে জলাশয়ে শামুক সংগ্রহ করি। পরে আমরা খোল থেকে গিলি ও ঘিলু বের করে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। এতে আমাদের দৈনিক আয় হয় ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, যা দিয়ে আমাদের সংসার চলে।’
অন্যদিকে, চাচুড়ি গ্রামের খুশি রানী মালো জানান, ভোরের আলো ফুটতেই সে তালের ডোঙা নিয়ে দ্রুত জলাশয়ে যায়। সেখানে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ফিরে আসে। তারা এসব শামুকের ভিতরে থাকা ঘিলু ও মাংশ আলাদা করে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে। তিনি বলেন, ‘আমরা এই উপার্জন দিয়ে জীবন চালাই। শুনেছি, এই শামুক ও ঝিনুক দিয়ে চুনও তৈরি হয়।’
প্রখ্যাত জীববিজ্ঞানী ও নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক বরুন মজুমদার জানান, জলাশয়ে থাকা শামুক ও ঝিনুক মিষ্টি পানিতে ভষ্মিত জলজ উদ্ভিদ খেয়ে জীবনধারণ করে। তারা জলাশয়ের পানির গুণগত মান রক্ষা এবং বালুচর গঠন সহ জলজ পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে। শুকনো মৌসুমে এই শামুকের খোলস জমির আর্দ্রতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই, অবিলম্বে এ ধরনের অবৈধ নিধন কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুল আলম বলেন, জলাভূমির জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে পরিবেশ অধিদপ্তর জলাশয় থেকে শামুক-ঝিনুক নিধন নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু তারপরেও কিছু চাষী ও ব্যবসায়ী এ আইন অমান্য করে অবিরত এ অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরও জানান, চিংড়ি চাষের জন্য শামুকের আহরণে জেলেদের উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।