অসাধারণ সাহস আর নিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই গল্পটি প্রতিটি ছাত্রের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস। স্বপ্ন পূরণের পথে কেবল পরিশ্রমই নয়, পরিস্থিতির প্রাপ্তি ও সাহসিকতা একসাথে কাজ করে। মনে রাখতে হবে, আমাদের লড়াই শুধুমাত্র জেতার জন্য নয়, বরং ভবিষ্যতকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ করার জন্য। সাফল্যের শিখরে পৌঁছানোর জন্য মেধা ও পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই, আর এই পথে গড়ে ওঠে নতুন ইতিহাস। এই ডাকসু নির্বাচন সেই ইতিহাসেরই একটি অংশ, যেখানে মনোযোগি এবং সততার মূল্য সর্বোচ্চ স্থান পেয়েছে।
অবিশ্বাস্য বিজয়, না কি স্মরণীয় জয়? ডাকসুতে শিবিরের এই বিপুল জয়ের ব্যাখ্যা কীভাবে করবেন? একদিকে শিবিরের প্রার্থী সাদিক কায়েম, এস এম ফরহাদ এবং মহিউদ্দিন খান প্রতিদ্বন্দ্বীদের দ্বিগুণের বেশি ভোট পেয়েছেন, যা মোটেও সাধারণ ঘটনা নয়। তাদের জয়ের ব্যবধানই এই নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চমক সৃষ্টি করেছে। ডাকসুর ইতিহাসে এমন ঘটনা খুব কমই দেখা গেছে। ভিপি পদে সাদিক কায়েম পেয়েছেন ১৪ হাজার ৪২ ভোট, যেখানে ছাত্রদলের আবিদ পেয়েছেন ৫৬৫৮ ভোট, অর্থাৎ অর্ধেকেরও কম। জিএস পদে এস এম ফরহাদ পেয়েছেন ১০,৭৯৪ ভোট এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী হামিম পেয়েছেন ৫২৮৩। এখানেও ব্যবধান দৃষ্টিনন্দন। এজিএস পদে মহিউদ্দিন খান পেয়েছেন ৯৫০১ ভোট, অপরহণে তার প্রতিদ্বন্দ্বী মায়েদ পেয়েছেন ৪২৫৪ ভোট, অর্থাৎ ব্যবধান ৫২৪৭।
শিবিরের এই তিন প্রার্থী সম্পর্কে একটু বিশদে জানানো যাক।
প্রথমেই আলোচনা করি মহিউদ্দিন খান মহিকে। তার চশমা, পাঞ্জাবি পরনে, ভদ্রতার ছাপ চেহারায় স্পষ্ট। শিক্ষার্থীদের মাঝেও, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও মধ্যে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি পড়াশোনায় উচ্চতর, ব্যাকরণে শীর্ষে থাকায় সবাই তার প্রশংসা করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ১৮-১৯ সেশনের ছাত্র। অনার্সে ৩.৯৩ সিজিপিএ নিয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেন, আর মাস্টার্সে ৪.০০ সিজিপিএ পেয়ে আবারও প্রথম। তিনি বিজয় ৭১ হলে একজন সফল ছাত্র নেতা। নানা কারণে তিনি ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয়, এবং বছরখানেকের মধ্যে হল ছেড়ে দেওয়া তার অসাধারণ সিদ্ধান্ত ছিল। এই সব গুণে, তার এজিএস হিসেবে নির্বাচিত হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।
আসুন এরপর বলি এস এম ফরহাদের। দেখতে ছোটখাটো হলেও তার দায়িত্ব অনেক বেশি। একজন বক্তা ও ডিবেটর হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে। তিনি কখনো দলের ভেতরে বা বাইরে গুরুত্বপূর্ণ সমালোচনা করেছেন, আবার কখনো দলীয় ভুল ঢাকিয়ে দিয়েছেন। তার রাজনৈতিক কেরিয়ারে নানা উঠানামা থাকলেও তাঁর দক্ষতা ও দায়িত্ববোধ সব সময়ই উচ্চমানের। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ১৭-১৮ সেশনের ছাত্র, আরো কবি জসীমউদ্দীন হলের আবাসিক। নির্বাচনে তার প্রচার তেমন 눈ে পড়েনি, তারপরেও তার বিজয় সবাইকে চমকে দিয়েছে।
সবশেষে, আসি সাদিক কায়েমের কথায়। এই যুব নেতা ডাকসুর ভবিষ্যত নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। তিনি শিবিরের অন্যতম প্রধান মুখ, দীর্ঘদিন ধরে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তার প্রচারণা ছিল সহজ সাদামাটা, কিন্তু বিজয় ছিল দারুণ। তিনি এখন ডাকসুর প্রথম শিবিরের ভাইপিপি, এবং তার কথায় দেখা যায়, তিনি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করবেন। তার উদ্যোগে আবাসন, খাদ্য, চিকিৎসা, লাইব্রেরি, পার্টটাইম চাকরির সুবিধা বৃদ্ধি প্ল্যান রয়েছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, সফল ছাত্র নেতা। এখন তার ভবিষ্যতই বলে দেবে, তিনি কতটা সফল হন।
সবশেষে বলতে হয়, জীবনে বড় কিছু অর্জনের জন্য মেধার সঙ্গে দরকার দৃঢ় সংকল্প ও সততা। এই নির্বাচন প্রমাণ করেছে, যখন মেধা আর সততার মিল ঘটে, তখন যেকোনো বাধা অতিক্রম করা সম্ভব। ছাত্র রাজনীতিকে কলঙ্কমুক্ত করে নতুন দিক নির্দেশনা দেওয়ার এই সুযোগ এসেছে। এটি তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা, যেখানে বিজয় মানে কেবল এক পদ নয়, লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর প্রত্যাশা। এই পথচলা নতুন আলোর সূচনা করবে।
শ্রীমঙ্গল২৪ ডেস্ক 















