ভারতের লাদাখে রাজ্য মর্যাদা এবং সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে চলমান আন্দোলন সহিংস রূপ ধারণ করেছে। গত বুধবার লেহ শহরে ব্যাপক বিক্ষোভের ফলে কমপক্ষে চারজন নিহত ও ৮০ জনের বেশি আহত হন। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠায় লেহ শহরে কারফিউ জারি করেছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী।
লাদাখের এই ছোট শহরে এখন হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যেও বিক্ষোভের আগুন জ্বলছে। তরুণরা আলাদা রাজ্যের মর্যাদা ও সংবিধানের বিশেষ সুবিধার দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। দখলদারিত্বের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে হাতে আগুন দেন তারা। এমনই এক দৃশ্যের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের স্থানীয় কার্যালয়ে ইট-পাটকেলও ছোঁড়া হয়।
১০ সেপ্টেম্বর থেকে পরিবেশকর্মী সোনম ওয়াংচুকসহ ১৫ জন অনশন করেন, তাঁদের দাবিতে লাদাখের রাজ্য মর্যাদা, স্থানীয় চাকরির কোটা এবং লেহ ও কার্গিল থেকে একটি পৃথক লোকসভা আসনের দাবিতে। পরিস্থিতির অবনতি হলে লাদাখ অ্যাপেক্স বোর্ডের যুব শাখা আন্দোলনকে আরও জোরদার করে। বুধবার তারা হাজারো বিক্ষোভকারী নিয়ে এনডিএস মেমোরিয়াল গ্রাউন্ডে জমায়েত হয়।
বিক্ষোভের সময় মিছিল করে লেহ শহর পার হয়ে বিক্ষোভকারীরা বিজেপি ও হিল কাউন্সিলের অফিসে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইলে জনতা সহিংস হয়ে ওঠে। সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত ও ৮০ জনের বেশি আহত হয়, যাদের মধ্যে প্রায় ৪০ জন পুলিশ সদস্যও আছেন। তার পরে বিক্ষোভকারীরা অনশন ভঙ্গ করে সুস্পষ্ট একটি বিবৃতি দেন সোনম ওয়াংচুক। তিনি বলেন, ‘আমি সব যুবকদের আহ্বান জানাচ্ছি, সহিংসতা বন্ধ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করুন। আমরা লাদাখ বা দেশের অস্থিতিশীলতা চাই না।’
এদিকে, শাসক দল বিজেপি এই বিক্ষোভের জন্য কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার চেষ্টা করছে। হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিজেপির দাবি, এই বিক্ষোভে কংগ্রেসের এক কাউন্সিলর উসকানি দিয়েছেন। এক্সে পোস্ট করে বিজেপির আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য ছবি শেয়ার করে জানান, লেহ শহরের কংগ্রেস কাউন্সিলর ফুনছগ স্তানজিন ছেপাগসহ অনেকেই বিক্ষোভকারীদের উসকানি দিয়েছেন।
অপরদিকে, বিজেপির এই অভিযোগ অস্বীকার করে পরিবেশকর্মী সোনম ওয়াংচুক বলেন, ‘লাদাখে কংগ্রেসের প্রভাব খুবই কম, তারা এতজন তরুণের রাস্তায় নামতে পারবে না। এই আন্দোলনের ব্যর্থতা ও হতাশাই সহিংসতার মূল কারণ।’ তিনি আরও জানান, সাধারণত ‘জেন-জি’ প্রজন্ম বিক্ষোভে অংশগ্রহণে অনিচ্ছুক থাকলেও এবার প্রায় ২ থেকে ৫ হাজার তরুণ একসাথে বিক্ষোভে নামে, এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
বিক্ষোভের সময় দুজন বৃদ্ধ নাগরিকের আহত হওয়ার ঘটনা ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি করে, যা দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত দাবি ও কেন্দ্রের আলোচনার তারিখ পিছিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা জ্বালানি হিসেবে কাজ করে।
লাদাখের এই দাবির পেছনে রয়েছে ২০১৯ সালে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলুপ্তির পর থেকে চালু হওয়া কঠোর চ্যালেঞ্জ। এই অঞ্চলকে রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি ও ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে জনমত গড়ে উঠছে। তবে বিজেপি এই দাবিকে কংগ্রেসের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখাচ্ছে, বলে স্থানীয় বিক্ষোভকারীরা আঙুল তুলেছেন।
লাদাখ ভারতের একটি কৌশলগত এলাকা, যা চীনের সঙ্গে দীর্ঘ ১৫০০ কিলোমিটার সীমান্ত ভাগ করে। ২০২০ সালে ভারত-চীন সেনা সংঘর্ষের কেন্দ্র ছিল এই এলাকা। এখন, সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলের অস্থিরতা ভারতের জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ২০১৯ সালে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের ফলাফল আজ ঘরে ঘরে ফুটে উঠছে। আগে ছিল কাশ্মীর, এখন লাদাখও সরকারের জন্য বড় মাথাব্যথা হয়ে উঠেছে।