দক্ষিণ গাজার একটি কবরস্থানে সমাধিফলকের মধ্যে তিন শিশু বালি ও নুড়িপাথর নিয়ে খেলছে। একই সময়ে এক কিশোর খালি পায়ে কবরস্থানের মধ্য দিয়ে দুই বালতি পানি বহন করে তাঁর তাবুতে ফিরে যাচ্ছে। এই ভয়াবহ দৃশ্যগুলো প্রতিদিনের বাস্তবতা তাদের জন্য, যারা অন্য কোথাও আশ্রয় না পেয়ে এই কবরস্থানে তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। গাজার খান ইউনিস থেকে এএফপি এই খবর পরিবেশন করেছে।
রান্ডা মুসলেহ তার তাবুতে বসে নদির পানীয় চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমাদের আর কোনও উপায় ছিল না।’ তিনি জানান, বাড়িওয়ালারা মোটা অঙ্কের ভাড়া দাবি করেছে। মুসলেহের মতে, মাত্র ৫০ বর্গমিটার (৫৪০ স্কয়ারফুট) আকারের জমির জন্য মাসে ১,০০০ শেকেল (প্রায় ৩০০ ডলার) পর্যন্ত দিতে হচ্ছে, যা বেশিরভাগ গাজাবাসীর জন্য খুবই কঠিন অর্থের বোঝা।
উত্তর গাজায় বেইত হানুনে তাদের বাড়ির কাছে ইসরাইলি সামরিক অভিযানের তীব্রতা বাড়তেই তারা তার সন্তানদের নিয়ে খান ইউনিসে পালিয়ে যান। মুসলেহ বলেন, ‘আমি হাঁটা হাঁটি করে আমার সন্তানদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পেয়েছি।’ তিনি আরও জানান, ‘লোকেরা আমাদের বলেছিল, মরুভূমি ও কবরস্থানের মাঝে আমাদের এখানে বসবাস করতে হবে, টাকা দিতে হবে না। তাই আমরা তাঁবু স্থাপন করে এখানেই থাকার সিদ্ধান্ত নিই।’
গাজার শহরে ইসরাইলি সেনাদের আক্রমণ চলাকালে, ধীরে ধীরে দক্ষিণে পালিয়ে যাওয়া বাসিন্দাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন বহু মানুষ আশ্রয় চেয়ে বিভিন্ন জায়গায় তাঁবু বাজার করে রেখেছেন। বুধবার ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজা থেকে প্রায় ৭ লাখ মানুষ শহর ত্যাগ করেছে। তারা হামাসের অবশিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে অপারেশন চালাচ্ছে, যারা অক্টোবর ২০২৩ সালে হামলা চালানোর জন্য দায়ী।
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএয়ের তথ্যমতে, আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে ৩৮৮,৪০০ জন বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই গাজা সিটি থেকে। এই পরিস্থিতিতে পরিবহন ও আশ্রয়ের চাহিদা বাড়ছে, সঙ্গে সঙ্গে দামের ব্যাপক বৃদ্ধিও দেখা যাচ্ছে। এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, পরিবারগুলোকে সময় মতো পরিবহন, তাঁবু এবং জমির জন্য কমপক্ষে ৩ হাজার ডলার দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু অনেকই এই খরচ বহন করতে পারেন না, ফলে তাঁবু নিয়ে হাঁটা-হাঁটি করে উপযুক্ত আশ্রয় খুঁজে পান।
মুসলেহ বলেন, ‘এখানে পানি নেই এবং আমার বাচ্চারা প্রায় চার কিলোমিটার হেঁটে পানি নিয়ে আসে।’ তিনি আরও জানান, ‘আমরা মরুভূমিতে আছি যেখানে বিচ্ছু ও সাপ রয়েছে।’
কবরের কাছাকাছি থাকা পরিবারগুলোর দুর্দশা আরো গভীর হয়ে উঠছে। উত্তরের শহর বেইত লাহিয়া থেকে সরানো উম্মে মুহাম্মদ আবু শাহলা বলেন, ‘আমরা কবরস্তানের মাঝখানে আছি এবং জীবনের খোঁজ করছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা মৃতদের সঙ্গে থাকি এবং আমাদের জীবনও মৃতের মতই হয়ে গেছে।’ তিনি আরও জোর দিয়ে বললেন, ‘তারা যদি আমাদের উপর পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করে, তাহলেও আমাদের যেন বিশ্রাম আসে।’