গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার নৌকা আটক করায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। ইউরোপের দেশ ইতালি, গ্রিস, স্পেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, আয়ারল্যান্ড ও তুরস্কের পাশাপাশি মালয়েশিয়া, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া ও অন্যান্য দেশে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বেশ কয়েকটি নেতৃস্থানীয় বিশ্বনেতা এই ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করেছেন।
ইতালি’s রোম, নেপলস, মিলান ও তুরিনসহ বিভিন্ন শহরে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তারা ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ ও ‘সবকিছু বন্ধ করো’ মতো স্লোগানে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। এই প্রতিবাদে অংশ নিয়ে রোম ও নেপলসে মেট্রো ও রেলস্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
গ্রিসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে আহ্বান জানানো হয়েছে যে, ইসরায়েল তাদের আটকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং কনস্যুলার সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সের বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে, চার্জ করেছেন, আটক আইনী প্রতিনিধিদের মুক্তির জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার।
অন্যদিকে, বেলজিয়ামের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ম্যাক্সিম প্রেভো ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান দেখানোর আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, নাগরিকদের নিরাপত্তা, অধিকার ও দ্রুত ফিরতি নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
আয়ারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট মাইকেল ডি হিগিনস বলেছেন, গাজায় মানবিক ত্রাণ পাঠানোয়ে বাধা দেওয়ার জন্য ইসরায়েল দায়ী। মানবিক সাহায্যের কার্যক্রম নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সতর্কতা ও সচেতনতা জরুরি।
ফ্রান্সের সরকার ইসরায়েলকে ফ্লোটিলার ফরাসি নাগরিকদের জন্য কনস্যুলার সেবা ও দ্রুত ফেরত আসার অনুমতি দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমও ফ্লোটিলায় আটক মালয়েশীয় নাগরিকদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। তিনি জানান, ইসরায়েলকে জবাবদিহির আওতায় আনার জন্য সব ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে। তার মতে, ইসরায়েল শুধু ফিলিস্তিনিদের অধিকার অস্বীকার করেনি; বৈশ্বিক মানবিক বিবেককেও লঙ্ঘন করেছে।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলাতে বর্তমানে একশোর বেশি স্বেচ্ছাসেবী, উদ্যোক্তা, আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত। ৩১ আগস্ট স্পেনের বন্দর থেকে শুরু হওয়া এই বহর, গাজার জন্য জরুরি খাদ্য ও ওষুধের প্রেরণার লক্ষ্যে রওনা দেয়। এতে থাকছেন সুইডেনের পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকার মহাত্মা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৪৪টিরও বেশি সংস্থা ও নাগরিক।
সোমবার গাজা উপকূলে পৌঁছানোর পর, ধরা হয় মূলত ১৩টি নৌযান, যার মধ্যে ৪টি—শিরিন, সামারটাইম জং, মিকেনো ও মেরিনেত্তি—নৌযান। এই চারটির মধ্যে দুটিতে ছিল আইনি দল ও ত্রাণসামগ্রী; অন্য দুটি গাজা উপকূলে আরও এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তবে, ইসরায়েলি নৌবাহিনী এই বহরকে জব্দ করে এবং তাদের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। এর ফলে, বাকিদের অবস্থান ও কার্যক্রম নিয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ট্র্যাকারে দেখা যায়, এই সময়ে বেশিরভাগ নৌযান গাজার কাছাকাছি থাকলেও, অনেকের খবর সিগন্যাল হারিয়ে গেছে।আন্তর্জাতিক এই উদ্যোগের সদস্যরা বলছেন, তারা দীর্ঘ দিন ধরে অবরোধের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছেন, যাতে গাজার জনগণ মানবিক সাহায্য থেকে বঞ্চিত না হয়। তবে, ইসরায়েলি বাহিনী তাদের জাহাজগুলো ঘিরে ফেলে এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়; ক্যামেরা উপরে রাখা হয়নি।
অধিকাংশ নৌযান আটক বা হারিয়ে যাওয়ার পরও, এই অভিযানকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো আক্রোশের মুখোমুখি হয়েছে। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার প্রতিনিধিরা বলছেন, তারা এখন জায়নিস্ট সেনাদের হামলার শিকার। তারা আরও জানিয়েছেন, বর্তমানে শিরিন, সামারটাইম জং, মিকেনো ও মেরিনেত্তি নামে চারটি নৌযানের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে জাহাজে উপস্থিত ছিলেন আইনি দল ও স্বেচ্ছাসেবীরা।
এই অভিযানের পিছনে মূল লক্ষ্য ছিল, গাজার উপর অবরোধ ও ন্যাক্কারজনক বিধিনিষেধের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জানানো। তবে ইসরায়েলি বাহিনী এই বহরকে জব্দ করার মাধ্যমে তাদের মানবিক প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এই ঘটনার পর থেকে আন্তর্জাতিক সামাজে এক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন দেশের সরকার ও সংস্থা এই ঘটনার প্রতিবাদ ও সমর্থন জানিয়েছেন।