মেহেরপুরে সার সংকটের কারণে কৃষকরা গভীর উদ্বেগে আছেন। সরকারি মুল্যে প্রয়োজনীয় সার সংগ্রহ করতে ওইসব কৃষকদের নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এদিকে, স্থানীয় ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশে কালোবাজারে সার পাচার চলছে বিভিন্ন স্থানে। বৃহস্পতিবার (০৯ অক্টোবর) সকাল বেলা গাংনী উপজেলার বিএডিসি ডিলারের কাছ থেকে পাঠানো কিছু সার খুচরা ব্যবসায়ীর মাধ্যমে মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদহে পাচারের সময় স্থানীয় জনতা তাদের আটক করে। এ খবর পেয়ে গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসকে জানানো হয়। ঘটনা জানতে পেরে উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন ও গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঘটনাস্থলে যান। পরে সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় খুচরা সার ব্যবসায়ী মের্সাস আলীম ট্রেডার্সের মালিক মাহাবুব হাসানকে ১৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। এসময় উদ্ধার হওয়া ১২ বস্তা টিএসপি সার স্থানীয় কৃষকদের মাঝে সরকারি মূল্যে বিক্রি করা হয়।
খুচরা সার ব্যবসায়ী মাহাবুব হোসেন জানান, নিজে মূলত কীটনাশক ব্যবসায়ী। তিনি জানান, এনআর ট্রেডার্সের মালিক এনামুল হক কাছ থেকে গোপনে ১২ বস্তা সার কিনে স্থানীয় খুচরা বিক্রেতা লাল মোহাম্মদের কাছে বিক্রি করেছেন। তিনি আরও বলেন, ডিলাররাও গোপনে এই সার বিক্রি করেন, যেখানে কৃষকদের প্রয়োজন অনুযায়ী সার কেনার জন্য তাদের এনআইডি কার্ড জমা নিতে হয়।
অন্যদিকে, এলাকার কৃষক ও সাধারণ মানুষের মাঝে এই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা বলেন, সরকারি বরাদ্দকৃত সার অন্যত্র কালোবাজারের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে, ফলে কৃষকরা প্রয়োজনীয় সার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। গত কিছু দিন ধরে দেখা গেছে, সরকারি মূল্যে ১৪০০ টাকার বস্তার সার বাজারে সাড়ে ২২ থেকে ২৩শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গাংনী ও মেহেরপুরের বিভিন্ন চোরাচালানের মাধ্যমে এই সার কালোবাজারে চলে যাচ্ছে, যা কৃষকদের জন্য কোনও মানে রাখে না।
জানা গেছে, সার ডিলার এনামুল হকের বাড়ি গাংনী উপজেলায় থাকলেও তিনি ধানখোলা ইউনিয়নের একজন বিএডিসি ডিলার। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, তিনি কৃষকদের জন্য নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রি না করে অতিরিক্ত মুনাফার জন্য সেটি কালোবাজারে বিক্রি করে থাকেন। ইতিমধ্যেই ক্ষুব্ধ কৃষকরা তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক, গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কৃষি বিভাগে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে, অজানা কারণের জন্য এখনও তার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন বলেন, আমরা সার কালোবাজারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। তিনি জানান, আমরা গোপন অনুসন্ধান চালিয়ে জানতে পেরেছি যে কতজন ডিলার এই প্রতারণায় লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “আমরা সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখছি, যেন এই কালোবাজারি দ্রুত বন্ধ করা যায় এবং কৃষকরা নির্ধারিত মূল্যে সার কিনতে পারেন।”