বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন শেষ হলেও নাটক ও উত্তেজনা এখনও শেষ হয়নি। নির্বাচনের কয়েক দিন পর, তামিম ইকবালসহ বেশ কিছু ক্লাব সংগঠক এই নির্বাচনের পদ্ধতি ও ফলাফল নিয়ে আপত্তি জানিয়ে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছেন। তারা সৌজন্য ও নৈতিকতার কারণে এই নির্বাচনের কমিটিকে অবৈধ বলে ঘোষণা করে, তার অধীনে থাকা ৪৮টি ক্লাব দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
নির্বাচনের ফলাফলে আপত্তি তুলে, তামিম ইকবাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই নির্বাচনকে তিনি ‘সমঝোতা’ ও ‘হাস্যকর’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানান, এই নির্বাচন ছিল না, বরং একটি ‘অলিখিত সমঝোতা’র ফল। এই পরিস্থিতিতে প্রবেশ করতে না পেরে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন।
বিসিবির হালনাগাদ নির্বাচনের পর, ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তামিম ইকবাল বলেন, ‘আমি মনে করি না এটি কোনও প্রকৃত নির্বাচন ছিল। কিছু অলিখিত নিয়ম মানা হয়, যেগুলো আমি ভাঙতে চেয়েছিলাম। এইসব সমঝোতার যোগ্যতা আমি মানি না, সেজন্য আমি নির্বাচন থেকে বেরিয়ে এসেছি।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা প্রথম দিন থেকেই একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন চেয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, সেটি সম্ভব হয়নি।’
নির্বাচনের দিন ই-ভোটিং পদ্ধতি নিয়েও তামিম কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ভোটের বিভ্রান্তির দিক দিয়ে এটি হাস্যকর ছিল। তিনি উল্লেখ করেন, মোট ৪২টি ভোট পড়েছিল, এর মধ্যে ৩৪টি ছিল ই-ভোট। কিন্তু যারা ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন, তারাও ই-ভোটে স্বাক্ষর করেছিলেন। তাহলে, এতটুকু উপস্থিতির পর ই-ভোটের প্রয়োজন কেন ছিল?
তামিম আরও বলেন, ‘আমি যদি ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচনের জন্য দাঁড়াতাম, আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে আমি জিততাম। আমি জানি, আমার পক্ষে প্রচুর সমর্থক ও ক্লাব ছিল। আমি নিশ্চিত, আমি নির্বাচনে বিজয়ী হতাম।’
নির্বাচনের এক দিন আগে, সংগঠকদের পক্ষ থেকে তিনটি শর্তে নির্বাচন পেছানোর দাবি জানানো হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল – বর্তমান নির্বাহী পর্ষদের সময় বাড়ানো, বিকল্পভাবে অ্যাডহক কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া, এবং নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত। তবে, এই হুমকি ও দাবিগুলো উপেক্ষা করে ৬ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আমিনুল ইসলাম সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। এই ফলাফলের প্রতিবাদে, আজ ঘরোয়া ক্রিকেটের অঙ্গনে বয়কটের ডাক দেন সংগঠকরা।
মোহামেডান ক্লাবের কাউন্সিলর মাসুদুজ্জামান এই ঘোষণা করেন, ‘আমরা ক্লান্ত, এই বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের অস্তিত্বকে এর আগে অস্বীকার করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, আমরা সব ধরনের প্রতিযোগিতা থেকে অবসান ঘোষণা করছি। যদি এভাবেই চলতে থাকে, তবে ক্রিকেট খেলা বন্ধ করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্রিকেট এখন সৌন্দর্য হারাচ্ছে। জেলা ক্রিকেটেও আমরা এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করব। যদি কোনও ক্লাবের প্রতিনিধিকে হুমকি বা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়, তবে আমরা একত্র থাকব। আপাতত সব ধরণের ক্রিকেট বর্জন করছি।’
অন্যদিকে, নির্বাচনের আগে লিগ ও ক্লাব বর্জনের হুমকি দেওয়া কিছু ক্লাব এই সিদ্ধান্তকে আরও শক্তিশালী করে জেলা–বিভাগেও ক্রিকেট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে, দেশের ক্রিকেট এখন এক কঠিন সংকটের মুখোমুখি।